Responsive Ads Here

29 January 2012

।। মৃত্যুর হাতছানি ।। (পর্ব ৭)

(১২)

পরদিন সন্ধ্যা ।

শুয়ে আছে সানি । পিঠের ব্যাথাটা এখন অনেক কম । সোজা হয়ে বসতে পারছে , হাটতেও পারছে ।

সারাটা দিন শুয়েই ছিলো । সায়মার কড়া নিদের্শ । আর এভাবে থাকতে ভালো লাগছে না ।

তাবুতে ঢুকলো শাহরিয়ার । মুখে শুকনো হাসি ফুটিয়ে বলল "কিরে দোস্ত এখন কেমন আছিস ?"

সানিও একটু হেসে বলল "দানবের সাথে যুদ্ধ করে যেমন থাকা যায় তেমনই আছি ।"

"sorry দোস্ত । তোর এই অবস্থায় জন্য আমিই দায়ি ।" বলল শাহরিয়ার ।

"আরে ধূর বেকুব । কেনো যে নিজেকে দোষ দিচ্ছিস ! আমাদের লাইফটাই এমন । জীবনটা হাতে নিয়ে ঘুরতে হয় ।

জানিস দোস্ত । মাঝে মাঝে মনে হয় সায়মাকে বিয়ে করে ওর জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছি আমি । মেয়েটা মাঝে মাঝে অনেক কষ্ট পায় । আমাকে বলে না ।" বলল সানি ।

"ভাবি তোকে অনেক ভালবাসে রে ।" হেসে বলল শাহরিয়ার ।

মুচকি হেসে সানি বলল "হমম জানি । সে জন্যই ভয় হয় । আমার জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই । কখন যে মরে যাব ঠুস্ করে !

ও তখন কি করবে আল্লাহই জানে ।"

সায়মাকে আসতে দেখে চুপ হয়ে গেলো সানি ।

কাছাকাছি এসে সায়মা জিজ্ঞেস করলো "কি ব্যাপার , কি কথা হচ্ছে দুই বন্ধুতে ?"

"না কিছু না । এমনিতেই কথা হচ্ছিলো ।" বলল সানি ।

"আরে নাহ্ । সানি আমাকে আপনাদের love story নিয়ে একটা ধারনা দিচ্ছিলো ।" হাসতে হাসতে বলল শাহরিয়ার ।

চোখ পাকিয়ে শাহরিয়ারের দিকে তাকালো সানি । সায়মা লাজুকভাবে হাসছে ।

ঠিক তখনই তাবুর বাইরে থেকে জোড়ে একটা চিত্‍কার ভেসে আসলো "মেজর সাব , মেজর সাব ।"

শাহরিয়ার তাবুর কানাটা উচুঁ করে ধরলো । সান্টু দাড়িয়ে আছে । ছেলেটাকে ভীত মনে হচ্ছে । কাদঁছে সে ।

"কি হয়েছে সান্টু ?" জিজ্ঞেস করলো শাহরিয়ার ।

"স্যার , স্যার বাজান আমার মায়েরে লইয়া যাইতেআছে । চলেন স্যার , দয়া কইরা বাঁচান আমার মায়েরে ।" কান্না জড়ানো গলায় বলল সান্টু ।

শাহরিয়ার অবাক হলো । সান্টুর তো বাবা নেই ! ! তাহলে সে কাকে বাজান বলছে !

সানির দিকে ফিরলো সে । সানিও বিমূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে । চোখের ইশারায় কথা হয়ে গেলো ।

বেড থেকে নামলো সানি । টেবিল থেকে ছোঁ দিয়ে উঠিয়ে নিলো দুটো রাইফেল । একটা ঢিল দিলো শাহরিয়ারের দিকে । আরেকটা নিজে নিয়ে , সায়মা কিছু বলার আগেই তাবু থেকে বের হয়ে গেলো সে ।

সান্টু দৌড়াচ্ছে । তার পিছন পিছন ছুটছে শাহরিয়ার আর সানি ।

বাক ঘুড়লেই লেকটা পাওয়া যাবে । ঠিক ঐসময়ই জন্তুটাকে দেখতে পেলো তারা ।

চাঁদের আলোয় চকচক করছে জন্তুটার গায়ের আশঁগুলো । একটা থাবা দিয়ে ধরে রেখেছে একটা মহিলার গলা । মহিলা হাসফাস করছে বাতাসের জন্য ।

সান্টুকে বাধা দেওয়ার আগেই দৌড় দিয়ে পৌছে গেলো জন্তুটার কাছে । জন্তুটার পিঠে হাত দিয়ে ঘুষি মারছে সে ।
আর চিত্‍কার করছে সে "মায়েরে ছাড় । ছাড় আমার মারে ।"

শাহরিয়ার আর সানি গুলি করতে পারছে না সান্টু আর তার মায়ের গায়ে লেগে যাবার ভয়ে ।

জন্তুটা ঘুড়ে সান্টুকে একটা থাবা দিয়ে বারি দিলো । সান্টু উড়ে গিয়ে একটা গাছের ডালে বারি খেলো ।

আবার হাটা ধরলো জন্তুটা । আর অপেক্ষা করলো না শাহরিয়ার আর সানি । গুলি করতে শুরু করলো ।

তারা অবাক হয়ে দেখলো প্রত্যেকটা গুলি জন্তুটার দেহ এফোঁড় ওফোঁড় করে বের হয়ে যাচ্ছে । তবুও জন্তুটার কিছু হচ্ছে না । ক্ষতস্থানগুলো আবার আগের মতো হয়ে যাচ্ছে ।

জন্তুটা ততক্ষনে লেকের পানিতে নেমে গেছে । দৌড়ে সেদিকে এগোলো শাহরিয়ার আর সানি ।

কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে । পানিতে অনেক দূর চলে গেছে সেটা । মহিলাটা শেষ মূহুর্তে আর্তনাদ করে উঠলো ।

তারপর সবকিছু একদম নিরব । হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো শাহরিয়ার আর সানি ।

সান্টুর মাথা ফেটে গেছে । ওকে নিয়ে ক্যাম্পে ফিরে যেতে লাগলো শাহরিয়ার আর সানি ।

সানির মনে একটা সম্ভাবনা খোচাঁ দিচ্ছে বারবার ।

(১৩)

সান্টুর মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে সায়মা । ছেলেটা এখনো অজ্ঞান ।

"কিরে ? কি ভাবছিস এতো ? সানিকে জিজ্ঞেস করলো শাহরিয়ার ।

"হমম । আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি ।" বলল সানি ।

"কি ব্যাপার ?" জিজ্ঞেস করলো শাহরিয়ার ।

"জন্তুটার চোখ দেখছিস ?" বলল সানি ।

"না খেয়াল করি নাই ।" জবাব দিলো শাহরিয়ার ।

"দোস্ত । আমাকে পাগল ভাবিস না । তবে আমার মনে হয় ওটা অশরীর কিছু । জন্তুটার চোখ দেখেছি আমি । এই পর্যন্ত তিনবার দেখছি । প্রথমবার চোখের কোন মনি ছিলো না , দ্বিতিয়বার চোখের মনি ছিলো এবং তা শ্বাপদের মতো । আর আজকে . . " এতটুকু বলে থেমে গেলো সানি ।

"হমম বল ।" শাহরিয়ার বলল ।

"আর আজকে একদম মানুষের চোখের মনির মতো । আমার ধারনা ঐ চোখের মনিটাই তার দুর্বলতম অংশ " বলল সানি ।

"খেয়াল করি নি । তবে আমারও মনে হয় যে ওটা স্বাভাবিক কোন জিনিস না । দেখেছিস ? বুলেট ঢোকার পর আবার কিভাবে বুজে গেলো ফুঁটোগুলো ?" বলল শাহরিয়ার ।

"হমম । যেভাবেই হোক জিনিসটাকে থামাতে হবে । না হয় আরো অনেক মানুষের বলি দিতে হবে ।" বলল সানি ।

"উফ্ ! ! আর ভাল লাগে না । চল্ চা খেয়ে আসি ।" বলল শাহরিয়ার ।

"হমম চল্ ।" বলল সানি ।

শাহরিয়ার তাবুর কানা উঠিয়ে বাইরে গেলো । সায়মাকে বলে সানিও বাইরে বেড়িয়ে এলো । একটু দূরেই আর্মি ক্যান্টিন । সেখানেই হাটছে তারা ।

হটাত্‍ পিছনে চিত্‍কার শুনলো । ঝট্ করে পিছনে ফিরলো । দেখলো তাবু থেকে বেরিয়েই লেকের দিকে দৌড় দিলো সান্টু ।

সান্টুর পিছনে দৌড়াচ্ছে সায়মা । বুকটা ধক্ করে উঠলো সানির । তাদেরকে ধরার জন্য সেও দৌড় দিলো ।

সায়মা একনাগাড়ে ডেকে যাচ্ছে সান্টুকে । বার বার থামতে বলছে । কিন্তু ছেলেটা দৌড়েই যাচ্ছে । চোখ দিয়ে পানি পরছে তার ।

দৌড়াতে দৌড়াতে লেকের কাছাকাছি পৌছে গেলো সে । চিত্‍কার করে ডাকতে লাগলো তার মা কে ।

দৌড়ে সায়মার কাছাকাছি পৌছাতে চাইছে সানি । সায়মাকে ডাকছে একনাগাড়ে । কিন্তু সায়মা যেনো শুনছেই না ।

সান্টুর প্রায় কাছাকাছি পৌছে গেছে সায়মা । ঠিক এইসময় পানি থেকে যমদূতের মতো উঠে এলো জন্তুটা । জিনিসটা সান্টুকে এক থাবায় ফেলে দিলো মাটিতে । আর সায়মার গলা আরেক থাবা দিয়ে চেপে ধরলো জন্তুটা ।

দৌড়ে এসে জন্তুটার মুখে ঘুষি চালালো সানি । হাতের সাথে লেগে আছে পচাঁ মাংস । অবাক হয়ে সানি দেখলো জন্তুটার মুখের মাংস আবার আগের মতো হয়ে গেলো ।

সায়মাকে লেকের দিকে ছুড়ে দিলো সেটা ।

লিখেছেনঃ আহনাফ সানভি
মৌমাছি

No comments:

Post a Comment