Responsive Ads Here

29 January 2012

।। মৃত্যুর হাতছানি ।। (পর্ব ৬)

- চাচা কি বলছেন এসব ?

-- হ বাইজি । এইখানে আত্মা আছে । সবাইরে মাইরা ফালাইবো সেইটা । লোকটার চোখে স্পষ্ট আতংক দেখতে পেলো সানি ।

- কিসের আত্মা ?

-- সম্ভু । সম্ভুর আত্মা ।

- সম্ভু কে ?

-- সম্ভু একটা বাঙ্গালি পোলা আছিলো । ৯-১০ বছর আগে এইহানে আইছিলো । পোলাডার লগে তার বউ আর ৫ বছরের একটা ছাওয়াল আছিলো । সবই ঠিক আছিলো । কিন্তুক সমস্যা একখানই , সম্ভু শয়তানের পূজা করতো ।
পোলাডার লগে সবসময় একটা গিরগিট থাইকো আর পিছে পিছে ঘুরতো একটা কুত্তা ।

- হমম । তারপর ?

-- আগে কুনু সমইস্যা আছিলো না । হটাত্‍ কইরা দেখা গেলো মানুষ নিখোঁজ হইতাছে । সবার লাসডি পাওয়া যাইতো লেকে । পচাঁ গলা । যেইডি পচঁতো না , হেইডিরে কেডা জানি খাইয়া রাখতো ।

মানুষ পরথমে ভাবছিলো কোন জন্তুর কাজ । কিন্তুক একরাইতে যহন একটা ৮ বছরের মাইয়া হারান গেলো ঐ দিনকা লেকের পাড়ে গিয়া সবাই দেখলো সম্ভু মাইয়াটারে মাইরা মাইয়াটার মাংস খাইতাছে ।

- তারপর ?

-- লোকজন তারে বাইন্দা লেকের ভিতরে চুবাইয়া মারছিলো । মরনে আগে সম্ভু সবাইরে কইছিলো যে তে আবার ফিরা আইবো । আবার মারবো হগ্গলরে ।

- সম্ভুর বউ আর ছেলেটা কোথায় ?

-- তারা এহানেই. . . . .

হটাত্‍ করেই বৃদ্ধ চুপ হয়ে গেলো । তার চোখগুলোতে নগ্ন আতংক দেখলো সানি । বৃদ্ধ কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে ।

ঝট্ করে মাথা ঘুরালো সে । একটা দরজার আড়াল থেকে একটা ছায়া সরে যেতে দেখলো । দৌড় দিলো সেখানে । কিন্তু কাওকে দেখতে পেলো না ।

আবার ফিরে এলো বৃদ্ধের কাছে । কিন্তু বৃদ্ধ আর কিছু বলতে রাজি হলো না ।

(১১)

বৃদ্ধের কথাগুলো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে । কিন্তু লাসগুলোর অবস্থা দেখে আবার বৃদ্ধের কথা বিশ্বাস করতে মন চাচ্ছে ।

অনেকগুলো প্রশ্ন তার মনে । কোনটারই সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না । তাছাড়া সম্ভুর বউ আর ছেলেটা কে ? সেটাও জানা দরকার । মনে হচ্ছে তাদের কাছ থেকেই জানা যাবে ।

হাটতে হাটতে লেকের কাছাকাছি এসে গেলো সানি ।
হটাত্‍ নারীকন্ঠের একটা চিত্‍কার শুনতে পেলো সে ।

দৌড়ে গেলো শব্দের উত্‍স লক্ষ্য করে । গিয়ে এক বিভত্‍স দৃশ্য দেখতে পেলো ।

সে দেখলো লেক থেকে প্রায় ১০ হাত দূরে একটা অগ্নিকুন্ড । মিসেস আহমেদ আর ছোট মেয়েটা দাড়িয়ে আছে সেখানে । মিসেস আহমেদ চিত্‍কার করছেন ।

লেকের কাছাকাছি একটা জন্তু । হেটে যাচ্ছে সেটা । হাতের এক থাবায় মিস্টার আহমেদ এর নিথর দেহটা ধরা আর এক থাবায় মিস্টার আহমেদ এর ছেলে নিয়াজকে উল্টো করে ধরা । ছেলেটা বৃথা আস্ফোলন করছে ছাড়া পাওয়ার । একদম মানুষের মত হাটছে । লেজটা দেখা গেলো না ।

পানির কাছাকাছি পৌছে গেছে জন্তুটা , মিস্টার আহমেদকে ছুড়ে দিলো লেকের প্রায় মাঝখানে , আর নিয়াজকে এবার দু থাবায় ধরলো সেটা । সানি বুঝতে পারছে তারপর নিয়াজকে খাবে জন্তুটা ।

মাথায় রক্ত উঠে গেলো সানির । মাটিতে পরে থাকা একটা মোটা গাছে ডাল হাতে নিয়ে হুঙ্কার দিয়ে দৌড় দিলো জন্তুটাকে লক্ষ্য করে ।

জন্তুটা নিয়াজকে খাওয়া বাদ দিয়ে পিছনে ফিরলো ।

সানি এবার স্পষ্ট দেখতে পারলো জন্তুটার মুখ । পুরোপুরি একটা মানুষের মুখই , কোটরে জ্বলজ্বল করছে চোখের মনি । ঐ দিন যখন দেখেছিলো তখন কোন মনিই ছিলো না , এখন চোখে শ্বাপদের চোখের মতো মনি দেখতে পেলো সানি । জন্তুটার মুখের মাংস পচাঁ । গলে গলে পরছে । জন্তুটার উচ্চতা প্রায় ৭ ফুট হবে ।

কাছাকাছি পৌছে গেলো সানি । জন্তুটা নিয়াজেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো । নিয়াজ কাগজের মতো উড়ে গিয়ে ধপ্ করে শক্ত মাটিতে আছাড় খেলো ।

মিসেস আহমেদ দৌড়ে গেলেন ছেলের কাছে ।

সানি ডালটা মাথার উপরে তুলল সজোরে নামিয়ে আনতে চাইলো জন্তুটার বুক বরাবর , কিন্তু তার আগেই একটা থাবা বাড়িয়ে ডালটা ধরে ফেলল জন্তুটা । আরেক থাবা দিয়ে গলা চিপ দিয়ে ধরলো সানির ।

প্রচন্ড শক্তিতে সানিকে মাটি থেকে কয়েকফুট উপরে উঠিয়ে ফেলল জন্তুটা । সানি বাতাসের জন্য ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো খাবি খেতে লাগলো ।

ঠিক এই সময় লেক থেকে পানিতে দাপাদাপির শব্দ ভেসে আসলো । জন্তুটা ঝট্ করে সেদিকে দেখলো , সানিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো । তারপর পানিতে নেমে গেলো ।

সানি উড়ে গিয়ে বারি খেলো একটা পাথরের সাথে । সানির দাড়াতে কষ্ট হচ্ছে । অসহায়ভাবে দেখলো জন্তুটা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মিস্টার আহমেদের দিকে ।

দৌড় দিয়ে পানিতে নামতে চাইলো সানি , কিন্তু শক্তি পাচ্ছে না সে ।

পৌছে গেলো জন্তুটা । গগন বিদারী মরন আর্তনাদ ভেসে এলো লেক থেকে । মিসেস আহমেদও চিত্‍কার করে উঠলেন ।

হতাশায় , রাগে মুষরে পরলো সানি । চিত্‍কার করে উঠতে ইচ্ছা করলো । গলা দিয়ে কোন স্বরই বের হলো না ।

তার চোখের সামনের পৃথিবিটা যেনো হটাত্‍ মুছে গেলো । ধূসর একটা পর্দা ডেকে দিলো তার দৃষ্টিশক্তি ।

সানি বুঝতে পারলো যে সে জ্ঞান হারাচ্ছে । জ্ঞান হারানোর আগমূহুর্তে যেনো শুনতে পেলো অনেকগুলো বুটের শব্দ ।

---

সপ্ন দেখছে সানি । দেখলো তার মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । মায়ের কথা মনে পরছে তার । মনে হচ্ছে মাকে অনেকদিন দেখা হয়নি তার । সায়মাকে দেখলো । মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজছে । আর তাকে ডাকছে ।

"সানি , এই সানি ।" . . . চোখ পিট্ পিট্ করে দেখলো সানি । সামনে সায়মাকে দেখতে পেলো সে । উদ্বিগ্ন চোখে দেখছে সানিকে ।

ধড়মড় করে উঠে বসতে গেলো সানি , পিঠে প্রচন্ড ব্যাথা !

"আহ্ এভাবে উঠতে যেও না , তোমার মেরুদন্ডের উপর অনেক বড় একটা প্রেসার গিয়েছে , ভাগ্য ভালো যে হাড্ডি ভাঙ্গেনি । তবে এভাবে মুভ করলে সমস্যা হতে পারে ।" বলল সায়মা ।

সানির মুখ ব্যাথায় বিকৃত হয়ে গেছে । আধশোয়া হলো সে । সে একটা সাদা বেডে শোয়া , অনেক বড় একটা তাবুর ভিতরে আছে সে ।

বুঝতে পারলো সে এখন আর্মির অস্থায়ী হাসপাতালে আছে ।
হটাত্‍ তার মিসেস আহমেদের কথা আর বাচ্চা দুটোর কথা মনে হলো ।

সায়মাকে জিজ্ঞেস করলো তাদের কথা ।

সায়মা বিমর্ষ কন্ঠে বলল "মিসেস আহমেদ সেন্সলেস । নিয়াজকে বাচাতে পারি নি । তার ফুসফুস আর পাকস্থলি ফুঁটো হয়ে গেছে । নাফা চুপচাপ বসে আছে । একদম পাথর হয়ে গেছে । আর. . "

এতটুকু বলে থেমে গেলো সায়মা ।

"আর কি ?" প্রশ্ন করলো সানি ।

"আর মিস্টার রহমানে লাস পাওয়া গেছে । কোমর থেকে নিচের অংশ টেনে ছিড়ে ফেলা হয়েছে তার ।" ভয়ার্ত গলায় বলল সায়মা ।

(চলবে)

লিখেছেনঃ আহনাফ সানভি
মৌমাছি

No comments:

Post a Comment