Responsive Ads Here

29 January 2012

।। মৃত্যুর হাতছানি ।। (শেষ পর্ব ৮)

সায়মাকে ছুড়ে দেওয়ার পর সানির দিকে ফিরলো দানবটা । ওটার চোখ দুটোতে কোন মনি দেখতে পেলো না সানি ।

হটাত্‍ দুথাবায় ধরে একটানে সানিকে শূন্যে তুলে ফেললো জন্তুটা । তারপর বিশাল হাঁ করলো । সানি বৃথা আস্ফোলন করতে লাগলো ছাড়া পাবার ।

চোখের সামনে ক্ষুরধার দাতগুলোকে তার মুখ বরাবর আসতে দেখলো সে ।

ঠিক এই সময় দানবটা চিত্‍কার করে উঠলো । তীখ্ন শিষ্ বেড়িয়ে এলো ওটার গলা দিয়ে । সানিকে ছুড়ে ফেলে দিলো জন্তুটা । সানি উড়ে গিয়ে ধাক্কা খেলো একটা গাছের ডালের সাথে । প্রচন্ড জোড়ে মাথা ঠুকে গেলো গাছের সাথে লেগে । কিছুক্ষনের জন্য চোখে অন্ধকার দেখলো সে ।

চোখের কোন দিয়ে দেখতে পেলো সান্টু দানবটার পায়ে কি যেনো গেঁথে দিয়েছে । ব্যাথায় চিত্‍কার করছে দানবটা । সান্টু একটা পাথর দিয়ে অনাবড়ত বারি মারছে জন্তুটার গায়ে ।

সায়মার চিত্‍কার শুনতে পেলো সানি । মেয়েটা লেকের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে ।

বহু কষ্টে নিজের শরীরটাকে টেনে নিয়ে পানিতে ফেললো সানি । সাতরে যেতে লাগলো সায়মার দিকে ।

মেয়েটা এখনো হাবুডুবু খাচ্ছে । সায়মাকে জড়িয়ে ধরলো সানি । অভয় দিলো তাকে । তারপর সায়মার পেটে হাতের চাপ বারিয়ে টেনে আনতে লাগলো ডাঙ্গার দিকে ।

ডাঙ্গায় তখন আরেক দৃশ্য । দানবটা সান্টুকে দু থাবায় ধরে রেখেছে । সান্টু চিত্‍কার করছে । লাথি মারছে জন্তুটাকে লক্ষ্য করে । কিছুই হচ্ছে না ওটার ।

হটাত্‍ সান্টুকে ঘুরিয়ে সান্টুর মাথা এক থাবায় আর পা আরেক থাবায় ধরে টান দিলো দানবটা । সাথে সাথে দু টুকরো হয়ে গেলো সান্টুর দেহ ।

ততক্ষনে পাড়ে পৌছে গেছে সানি আর সায়মা । সায়মা অনেক দুর্বল হয়ে গেছে । সানিও আর তেমন সুস্থ বোধ করছে না ।

দানবটা এগিয়ে আসছে তাদের দিকে । সানি অসহায়ভাবে চেয়ে আছে । তাদের সামনে নিশ্চিত মৃত্যু ।

দানবটা মাত্র আর কয়েকফুট দূরে , ঠিক এসময় একসাথে অনেকগুলো রাইফেল গর্জে উঠলো ।

ঝাজরা হয়ে গেলো দানবটার শরীর । তবুও ওটা এগোচ্ছেই । হটাত্‍ তীখ্ন একটা শীষ্ দিয়ে উঠলো দানবটা ।

সানি দেখতে পেলো দানবটার চোখের কাছাকাছি একটা বুলেট লেগেছে । বুঝতে পারলো চোখ আর পায়ের পাতাই দানবটার দুর্বল অংশ ।

চিত্‍কার করে সানি বলল "চোখ লক্ষ্য করে গুলি করো . . .. . . "

গুলির দিক বদলে গেলো । দানবটার চোখ সই করে গুলি করা হচ্ছে । গগন বিদারী আর্তনাদ করে উঠলো সেটা । আরো একটু আগালো ।

হটাত্‍ বিদ্যুত্‍ বেগে দানবটার জিহবাটা বের হলো , জড়িয়ে ধরলো সায়মার পা ।

সানি প্রানপনে আঘাত করতে চাইলো সেটাকে । থাবার এক ধাক্কায় লেকের পাড়ের কাছাকাছি উড়ে গিয়ে একটা পাথরের উপর পরলো সে । ডান পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেলো তার ।

জন্তুটা এখন পা টেনে টেনে হাটছে । সায়মাকে এখন থাবার মধ্যে ধরে রেখেছে । সায়মার দেহ নিথর । অসহায় ভাবে উপুর হয়ে ঝুলছে তার দেহটা ।

সানি মরিয়া হয়ে উঠেছে । হটাত্‍ পাশেই কি যেনো চকচক করে উঠলো , হাতে নিয়ে দেখলো ওটা একটা সার্জিক্যাল নাইফ ।

সে বুঝলো এটা দিয়েই দানবটাকে আঘাত করেছিলো সান্টু । ছুড়িটাকে ডানহাতের তর্জনি আর মধ্যমার মধ্যে চেপে ধরলো সে । কমান্ডো ট্রেনিং এর সময় নাইফ থ্রোয়িং শিখেছিলো সে ।

নিশানা ঠিক করে ছুড়ে দিলো ছুড়িটাকে । নিখুঁত নিশানা , দানবটার বাম চোখে গেঁথে গেলো ছুড়িটা । আর্তনাদ করে উঠলো সেটা । সায়মাকে ছেড়ে দিলো ।

ততক্ষনে আর্মিরা কাছাকাছি এসে গেছে । দানবটাকে লক্ষ্য করে প্রচন্ড গুলি করছে । দানবটা তীখ্ন একটা শিষ্ দিয়ে ঝাপিয়ে পরলো পানিতে ।

(১৪)

লেকের পাড়ে দাড়িয়ে আছে মেজর শাহরিয়ার , সানি আর সায়মা ।

ঐ রাতের পর সানি আর সায়মাকে চট্ট্রোগ্রাম পাঠানো হয় দ্রুত । প্রায় দুমাস লেগেছে সানির পা ঠিক হতে । সানির পা ঠিক হবার পর আবার ফিরে আসে তারা বান্দরবানে ।

"জানিস সানি ? ঐ দিনের পর থেকে আর কোন মানুষ মারা যায়নি ।" বলল শাহরিয়ার ।

"হমম । সান্টুর লাসটা কবর দিয়েছিলি ?" বলল সানি ।

"হ্যা । কিন্তু . . " বলে থেমে গেলো শাহরিয়ার ।

"কিন্তু তার লাসটা কয়েকদিন পর মাটি খুড়েঁ কেউ নিয়ে গেছে তাই তো ?" প্রশ্ন করলো সানি ।

"হ্যা । কিন্তু তুই কিভাবে জানলি ?" অবাক হয়ে বলল শাহরিয়ার ।

"দানবটা আর কেউ নয় , সান্টুর বাবা সম্ভু ছিলো । লোকটা প্রেতসাধনা করতো । হয়তো ঐ প্রেতসাধনার কারনেই এই অস্বাভাবিক জন্তুতে পরিনত হতে পেরেছে সে । সে এতো বছর পর আবার ফিরে এসেছিলো তার উপর অত্যাচারকারীদের শাস্তি দিতে আর তার পরিবারকে নিয়ে যেতে ।" বলল সানি ।

অবাক হয়ে সানির দিকে চেয়ে রইলো সায়মা আর শাহরিয়ার ।

পিছন থেকে এক সৈনিক বলে উঠলো "স্যার চলেন । গাড়ি তৈরি ।"

শাহরিয়ার বলল "চল্ । তোদের ঢাকা যাওয়ার গাড়ি ready ।"

সবাই হাটতে লাগলো গাড়ি লক্ষ্য করে । হটাত্‍ কি যেনো মনে হওয়ায় লেকের দিকে ফিরলো সানি । পানিতে একটা মৃদু আলোড়ন । যেনো এইমাত্র কেউ ডুব দিয়েছে ।

সানির মনে হলো , লেকটা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । মৃত্যুর হাতছানি ।

(সমাপ্ত)

(কিছু না বলা তথ্য) : বগা লেকের বাস্তবে এমন কোন কাহিনি নেই । এটা সম্পূর্ন কাল্পনিক ।

তবে এটা নিয়ে দেওয়া তথ্যগুলো সত্য । আরেকটা মজার তথ্য হলো
বগা লেকের পানির রঙ পরিবর্তন হয় বছরে কয়েক মাস । ধারনা করা হয় এমনটা হয় অণুজীব কিংবা প্ল্যাঙ্কটনের কারণে ।

তবে আর্শ্চযের ব্যাপার হলো, একই সময় পরিবর্তিত হয় আশপাশ অন্যান্য জলাশয়ের পানির রঙও । স্থানীয়রা ধারণা করেন, বগা লেক থেকে এক বা একাধিক আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার তৈরি হতে পারে ।

( উত্‍সর্গ )

শ্রদ্ধেয় রিয়া আপুকে । আমি মাঝে মাঝে খুব হতাশ হয়ে যাই । তখন বড় বোনের মতোই মমতা দিয়ে বুঝিয়ে আমাকে আবার ঠিক করে দিতে পারেন তিনি ।

আমি একদিন খুব হতাশ ছিলাম । তখন আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা তার একটি কবিতা . . . .

--"অনেক মানুষ অনেক কথা বলবে তোমার পিছে,
সেসব ভেবে অকারনে কেন কষ্ট পাবে মিছে।

কিছু অতীত তোমায় হাসায়
কিছু হয়তো কাঁদায় ।

অতীত ভেবে
অন্যের কথা শুনে
রাগ করা কি
বলো শোভা পায়?

এগিয়ে চলো ভাইটি
আমার
রাগ ক্ষোভ সব দূরে ঠেলে,

মনে রেখ সব ঝিনুকের মাঝেই কি আর মুক্তার দেখে মেলে ?"--

তাকে এতো সুন্দর একটা কবিতার পরিবর্তে দেওয়ার কিছুই নেই আমার । তাই আমার এই সামান্য লেখাটা তাকে উত্‍সর্গ করলাম )

লিখেছেনঃ আহনাফ সানভি
মৌমাছি

No comments:

Post a Comment