ছোটবেলা থেকেই আমরা সাধারনতঃ ভুত-প্রেত, ডাইনী, রাক্ষস-ক্ষোক্কস এর গল্প শুনে বড় হই। বড় হতে হতে কেউ কেউ এইসব ভুত-প্রেত এর অস্তিত্বই আর স্বীকার করেনা, আবার কেউ কেউ মৃত্যুর আগে পর্যন্তও মন থেকে এদের অস্তিত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারেনা। আমি আছি দ্বিতীয় দলে। সারাক্ষন আমার চারিপাশে মনে হয় ভুতের ফিসফিসানি শুনতে পাই। অনেক ছোটবেলাতে আমরা যে কোয়ার্টারে থাকতাম, সেখানে বিদ্যুত ছিলনা, কোয়ার্টারের চারিপাশে বড় বড় গাছ ছিল, রাত হলেই ঘরে ঘরে হ্যারিকেন আর কুপি জ্বলত। আমার বড় দুই ভাই আর আমার পিসীরা যখন তক্তপোশের উপর গোল হয়ে পড়তে বসতো, হ্যারিকেনের আলোয় তাদের লম্বা লম্বা ছায়া পড়ত টিনের দেয়ালের চারিপাশে। তারা দুলে দুলে পড়তো, আর আমি দেখতাম টিনের দেয়ালে ছায়ার খেলা। ছোট্ট মানুষ আমি, মনের ভেতর দানা বাঁধতে থাকে ভুতের ছবি, বাড়ির যে কাজ করার মাসিমা ছিল, তার কোলে বসে অনেক ভুতের গল্প শুনতাম, সেই গল্পের ভুতের সাথে এই ছায়াগুলোর অনেক মিল পেতাম। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলতাম। পরে আমরা কোয়ার্টার ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে চলে এসেছি, বিদ্যুতবাতি ছিল সব ঘরে, কিনতু ভুতগুলো কোয়ার্টার থেকে চলে এসেছে আমার সাথে। আমি এই জীবনে আর এদের গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারলামনা। তবে ভুত তাড়ানোর মন্ত্র শিখেছিলাম আমাদের ঐ কাজের মাসীমার কাছ থেকে। সে আমাকে ভুতের গল্প শুনাত, আমি ভয় পেতাম বলে ভুত তাড়ানোর মন্ত্রটাও শিখিয়ে দিয়েছিলঃ
“ভুত আমার পুত, পেত্নী আমার ঝি
রাম-লক্ষ্মন বুকে আছে, ভয়টা আমার কি”তারপর বড় হয়েছি, বিয়ে হয়েছে, তিনটি মেয়ের মা হয়েছি, কিনতু ভুতের ভয় আর যায়না। মেয়েদেরকে শিখিয়েছি, ভুত বলে কিছু নেই, মেয়েরা শিখেছে ভুত বলে কিছু নেই, কিনতু আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনা যে ভুত বলে কিছু নেই। বিশ্বাস করবো কি করে, শুধু তো গল্প শুনাই নয়, নিজেরও দুই একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। একটা ছোট্ট ঘটনাতো ঘটেছে খোদ আমেরিকাতে। আমেরিকাতে আসার পরে আমরা ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে যে বাড়ীটা ভাড়া নিয়েছি, অনেক পুরানো বাড়ী, ১৯১১ সালে তৈরী, পাহাড়ের উপর বানানো বাড়ী, অনেক মজবুত, কাঠের বাড়ী। প্রথম যেদিন ঢুকেছি ওই বাড়ীতে, রাতের বেলা আমি ছোট্ট একটা কাঁচের গ্লাসে দুধ ঢেলে কিচেনের টেবিলের উপর রেখেছিলাম, আমার দুই বছরের মেয়ের জন্য। কিনতু মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে বলে আমি গ্লাসটা ফ্রীজে ঢুকাতে ভুলে গেছিলাম, সবাই দোতলায় ঊঠে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে সবার আগে আমি ঘুম থেকে উঠে নীচে এসে কিচেনে ঢুকে দেখি দুধের গ্লাস খালি। আমার স্বামী, আমার মেয়েরা জানে আমি ভুতে ভয় পাই, তারা সব সময় চেষ্টা করে আমাকে ভয় না দেখাতে, অথচ তারা কেউ খায়নি দুধ, আবার কোন ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি। শুধু বলেছে যে হয়ত ছোট্ট মেয়ে মিথীলা নিজে নিজে এসে খেয়ে গেছে। প্রথম কথা মিথীলার হাতের নাগালে ছিলনা গ্লাসটি, আর মিথীলা জানেওনা এই ঘটনার কথা, সে ঘুমে ছিল। আমরা এই নিয়ে আর কখনও কোন কথা বলিনি। যে তিন বছর ছিলাম ঐ বাড়ীতে, আমি কেন যেন টের পেতাম আমরা ছাড়াও অদৃশ্য আর কেউ থাকে ঐ বাড়িতে।
মিসিসিপি চলে এসেছি এর পর। আমি পারতপক্ষে ভুত নিয়ে কথা বলিনা। কিনতু এই বছর হ্যালুইন নিয়ে একটা ফিচার লিখতে গিয়ে আমার সহকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানতে চেয়েছিলাম যে তারা ভুতে বিশ্বাস করে কিনা! জানতে চাওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে। আমি ছিলাম নিশ্চিন্ত যে মিসিসিপিতে ভুত নেই, বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানলাম, আমাদের চারিপাশে অনেক ভুতের বাড়ী, রেললাইন, ভুতের নামে রাস্তা সবই আছে। আমি জানতামইনা যে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু রয় শেফার্ড একজন ঘোষ্ট হান্টার, সে খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে, খুবই বুদ্ধিমান, ব্যান্ড শিল্পী, নাট্যকার এবং ভুতে বিশ্বাসী। সে ভুত দেখতে যায় বিভিন্ন ভুতুড়ে জায়গায়, আমাকে তার অভিজ্ঞতা থেকে শুধু তিনটি ঘটনা বলেছে, আমি তার বয়ানে শুধু ঘটনাগুলো লিখে যাচ্ছিঃ“আমাদের এই কলম্বাস শহরে রাতের বেলা যদি ‘বিশপ’স বটম এ যাও, যে রেললাইনটা চোখে পড়বে, তার উপড় গিয়ে দাঁড়ালেই দেখতে পাবে ‘হ্যারিকেন’ হাতে কেউ হেঁটে যাচ্ছে। আমি তার পিছু নিয়েছি, অনেকবার, কিনতু সে থামেনা, আমি এগোই, সেও এগোয়। এর বেশী কিছুনা।“ এই কথার সত্যতা স্বীকার করেছে দেখলাম আশেপাশের সবাই। তারাও নাকি দেখেছে এই ঘটনা। লী নামের বিরাট বিশাল ভদ্রলোকতো জানালো সে একবার গিয়েছিল, এমন এক ঘটনা সে প্রত্যক্ষ করেছে যে এরপর থেকে সে প্রতিজ্ঞা করেছে আর কখনও এই ধরনের দুঃসাহসিক কাজে সে যাবেনা।“থ্রী লেগেড লেডি রোড ধরে দিনের বেলা কবরস্থান কে পাশে রেখে যাও, কিছু হবেনা, কিনতু রাতেরবেলা ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যদি তোমার গাড়ী থামিয়ে তিনবার তোমার গাড়ীর হেডলাইট জ্বালাও-নেভাও, তাহলে তুমি বিপদে পড়বে। কি বিপদ তা জানিনা, কেউ এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, নাহলে তোমার গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে।“ জানতে চাইলাম সে কখনও চেষ্টা করে দেখেছে কিনা, সে বললো, “ আমি চেষ্টা করেছিলাম একবার, কিছু হয়নি, কিনতু আরেকদিন আমি ওখানের চার্চের থেকে বের হয়ে গাড়ীতে ঢুকতেই দেখি আমার হাতের পুরোটা কেউ খামচে দিয়ে রক্ত বের করে ফেলেছে। অথচ আমার সাথে কিছুর আঁচড় লাগেনি বা আমি কোন ব্যথাও পাইনি” ওর কাছেই শুনলাম, কোন এককালে এক বাচ্চা মেয়ে জন্মেছিল তিন পা নিয়ে। একটু বড় হতেই আশেপাশের মানুষজন তাকে ডাইনী আখ্যা দিয়ে বেঁধে গাড়ীর পেছনে করে সারা রাস্তা চষে বেড়িয়েছে এবং এভাবেই তার মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই সে ভুত হয়ে যায় এবং ঐ রাস্তার নামও তার নামেই রাখা হয়।
“প্রিন্সেস থিয়েটার এ রাতেরবেলা আমি প্রায় যাই। একদিন আমি রাতের অন্ধকারে ঢুকেছি, লাইটের সুইচ খুঁজে পাচ্ছিলামনা, হাতড়ে বেড়াচ্ছিলাম, হঠাৎ আমি টের পেলাম আমার হাতটা কেউ ধরে আরো একটু উঁচু করে লাইটের সুইচ পর্যন্ত পৌঁছে দিল। লাইট জ্বালিয়ে আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম, কাউকে দেখিনি, তবে আমার সাথে সাথে কেউ পা ফেলে হাঁটছে, সেই শব্দ পেয়েছি। আরেকদিন আমি সিঁড়ি ভেঙ্গে অলসভঙ্গীতে উপরে উঠছিলাম, কেউ একজন আমাকে পেছন থেকে আলতো করে ঠেলা দিয়ে উপরে তুলে দিয়েছে। তাছাড়া আমার বন্ধু ক্যাথিকে নিয়ে দিনেরবেলা একদিন গেছিলাম, দেখি উপরের স্ক্রীনের আড়ালে কেউ একজন চুপ করে বসে আছে, এমন দৃশ্য আরও অনেকে দেখেছে। যারা ভুত নিয়ে সিনেমা করে, তারাও এসেছিল, তারা এই থিয়েটারকে মার্ক করে গেছে হান্টেড হাউজ বলে”
“আমার নিজের ঘরে ভুত থাকে। আমি ভুত ভয় পাইনা বলে বাসা পাল্টাইনা। আমার করিডোর ধরে সবসময় কেউ হাঁটাহাঁটি করে। আমি একদিন ক্যাসেট রেকর্ডার অন করে প্রশ্ন করেছিলাম, তুমি কে? একটা ফিসফিসানি উত্তর রেকর্ড হয়েছে, ‘আই এম স্টাক(আমি আটকে আছি)’ বলে।" আমি জানতে চাইলাম, এটাতো তোমার ভয়েসও ওয়েভারলী হাউজ এর কথা সবাই জানে। এই বাড়িকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে ভুত দেখার জন্য। অনেকেই যায় ঘটা করে ভুত দেখতে, কেউ দেখতে পায়, কেউ পায়না। তবে আমার সৌভাগ্য হয়েছে একটা জিনিস দেখার। ওই হাউজের বেডরুমগুলোর একটিতে দেখেছি, একটি বেডে বাচ্চা একটি মেয়ে শুয়ে আছে, কিছুক্ষন পরেই চোখের সামনেই সব মিলিয়ে গেল সিনেমার দৃশ্যের মত।“ আমি আবার একটু সন্দেহের চোখে তাকাতেই সে মনঃক্ষুন্ন হলো।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে সে যে কোন বাড়ীর ভেতর গিয়েই বলতে পারে কিনা, সেই বাড়ীতে ভুত আছে কি নেই। তার যে বান্ধবী ছিল ক্যাথী নামে, তার বাড়ীতেও নাকি ভুত ছিল। তারা প্রতিদিন কাজের থেকে বাড়ী ফিরে দেখতে পেত ঘরের জিনিসপত্র সব উলটা পালটা হয়ে আছে, টিভির জায়গাতে টিভি নেই, দেয়ালের ছবি উলটা করে রাখা আছে। সে আমার বাড়ীতে এসে বলে দিতে পারবে ভুত আছে কি নেই, এই কথা শুনেই আমি দুই হাত জড়ো করে মাফ চেয়েছি। কোন প্রয়োজন নেই শুনে সে হেসে খুন। শুধু বললো ভুতকে অবিশ্বাস করারও কিছু নেই, আবার ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। তারা থাকে তাদের মত করে, আমাদের আশে পাশে থাকতে ভালোবাসে। কারো কোন ক্ষতিতো করেনা।
আপনাদের জন্য স্পেশাল ভুতের গল্প।হতে পারে, সে বললো "আমিতো আসলে কাউকে বিশ্বাস করাবার জন্য এগুলো করিনা, নিজে বিশ্বাস করি বলেই করি।"
“ভুত আমার পুত, পেত্নী আমার ঝি
রাম-লক্ষ্মন বুকে আছে, ভয়টা আমার কি”তারপর বড় হয়েছি, বিয়ে হয়েছে, তিনটি মেয়ের মা হয়েছি, কিনতু ভুতের ভয় আর যায়না। মেয়েদেরকে শিখিয়েছি, ভুত বলে কিছু নেই, মেয়েরা শিখেছে ভুত বলে কিছু নেই, কিনতু আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনা যে ভুত বলে কিছু নেই। বিশ্বাস করবো কি করে, শুধু তো গল্প শুনাই নয়, নিজেরও দুই একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। একটা ছোট্ট ঘটনাতো ঘটেছে খোদ আমেরিকাতে। আমেরিকাতে আসার পরে আমরা ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে যে বাড়ীটা ভাড়া নিয়েছি, অনেক পুরানো বাড়ী, ১৯১১ সালে তৈরী, পাহাড়ের উপর বানানো বাড়ী, অনেক মজবুত, কাঠের বাড়ী। প্রথম যেদিন ঢুকেছি ওই বাড়ীতে, রাতের বেলা আমি ছোট্ট একটা কাঁচের গ্লাসে দুধ ঢেলে কিচেনের টেবিলের উপর রেখেছিলাম, আমার দুই বছরের মেয়ের জন্য। কিনতু মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে বলে আমি গ্লাসটা ফ্রীজে ঢুকাতে ভুলে গেছিলাম, সবাই দোতলায় ঊঠে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে সবার আগে আমি ঘুম থেকে উঠে নীচে এসে কিচেনে ঢুকে দেখি দুধের গ্লাস খালি। আমার স্বামী, আমার মেয়েরা জানে আমি ভুতে ভয় পাই, তারা সব সময় চেষ্টা করে আমাকে ভয় না দেখাতে, অথচ তারা কেউ খায়নি দুধ, আবার কোন ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি। শুধু বলেছে যে হয়ত ছোট্ট মেয়ে মিথীলা নিজে নিজে এসে খেয়ে গেছে। প্রথম কথা মিথীলার হাতের নাগালে ছিলনা গ্লাসটি, আর মিথীলা জানেওনা এই ঘটনার কথা, সে ঘুমে ছিল। আমরা এই নিয়ে আর কখনও কোন কথা বলিনি। যে তিন বছর ছিলাম ঐ বাড়ীতে, আমি কেন যেন টের পেতাম আমরা ছাড়াও অদৃশ্য আর কেউ থাকে ঐ বাড়িতে।
মিসিসিপি চলে এসেছি এর পর। আমি পারতপক্ষে ভুত নিয়ে কথা বলিনা। কিনতু এই বছর হ্যালুইন নিয়ে একটা ফিচার লিখতে গিয়ে আমার সহকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানতে চেয়েছিলাম যে তারা ভুতে বিশ্বাস করে কিনা! জানতে চাওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে। আমি ছিলাম নিশ্চিন্ত যে মিসিসিপিতে ভুত নেই, বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানলাম, আমাদের চারিপাশে অনেক ভুতের বাড়ী, রেললাইন, ভুতের নামে রাস্তা সবই আছে। আমি জানতামইনা যে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু রয় শেফার্ড একজন ঘোষ্ট হান্টার, সে খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে, খুবই বুদ্ধিমান, ব্যান্ড শিল্পী, নাট্যকার এবং ভুতে বিশ্বাসী। সে ভুত দেখতে যায় বিভিন্ন ভুতুড়ে জায়গায়, আমাকে তার অভিজ্ঞতা থেকে শুধু তিনটি ঘটনা বলেছে, আমি তার বয়ানে শুধু ঘটনাগুলো লিখে যাচ্ছিঃ“আমাদের এই কলম্বাস শহরে রাতের বেলা যদি ‘বিশপ’স বটম এ যাও, যে রেললাইনটা চোখে পড়বে, তার উপড় গিয়ে দাঁড়ালেই দেখতে পাবে ‘হ্যারিকেন’ হাতে কেউ হেঁটে যাচ্ছে। আমি তার পিছু নিয়েছি, অনেকবার, কিনতু সে থামেনা, আমি এগোই, সেও এগোয়। এর বেশী কিছুনা।“ এই কথার সত্যতা স্বীকার করেছে দেখলাম আশেপাশের সবাই। তারাও নাকি দেখেছে এই ঘটনা। লী নামের বিরাট বিশাল ভদ্রলোকতো জানালো সে একবার গিয়েছিল, এমন এক ঘটনা সে প্রত্যক্ষ করেছে যে এরপর থেকে সে প্রতিজ্ঞা করেছে আর কখনও এই ধরনের দুঃসাহসিক কাজে সে যাবেনা।“থ্রী লেগেড লেডি রোড ধরে দিনের বেলা কবরস্থান কে পাশে রেখে যাও, কিছু হবেনা, কিনতু রাতেরবেলা ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যদি তোমার গাড়ী থামিয়ে তিনবার তোমার গাড়ীর হেডলাইট জ্বালাও-নেভাও, তাহলে তুমি বিপদে পড়বে। কি বিপদ তা জানিনা, কেউ এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, নাহলে তোমার গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে।“ জানতে চাইলাম সে কখনও চেষ্টা করে দেখেছে কিনা, সে বললো, “ আমি চেষ্টা করেছিলাম একবার, কিছু হয়নি, কিনতু আরেকদিন আমি ওখানের চার্চের থেকে বের হয়ে গাড়ীতে ঢুকতেই দেখি আমার হাতের পুরোটা কেউ খামচে দিয়ে রক্ত বের করে ফেলেছে। অথচ আমার সাথে কিছুর আঁচড় লাগেনি বা আমি কোন ব্যথাও পাইনি” ওর কাছেই শুনলাম, কোন এককালে এক বাচ্চা মেয়ে জন্মেছিল তিন পা নিয়ে। একটু বড় হতেই আশেপাশের মানুষজন তাকে ডাইনী আখ্যা দিয়ে বেঁধে গাড়ীর পেছনে করে সারা রাস্তা চষে বেড়িয়েছে এবং এভাবেই তার মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই সে ভুত হয়ে যায় এবং ঐ রাস্তার নামও তার নামেই রাখা হয়।
“প্রিন্সেস থিয়েটার এ রাতেরবেলা আমি প্রায় যাই। একদিন আমি রাতের অন্ধকারে ঢুকেছি, লাইটের সুইচ খুঁজে পাচ্ছিলামনা, হাতড়ে বেড়াচ্ছিলাম, হঠাৎ আমি টের পেলাম আমার হাতটা কেউ ধরে আরো একটু উঁচু করে লাইটের সুইচ পর্যন্ত পৌঁছে দিল। লাইট জ্বালিয়ে আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম, কাউকে দেখিনি, তবে আমার সাথে সাথে কেউ পা ফেলে হাঁটছে, সেই শব্দ পেয়েছি। আরেকদিন আমি সিঁড়ি ভেঙ্গে অলসভঙ্গীতে উপরে উঠছিলাম, কেউ একজন আমাকে পেছন থেকে আলতো করে ঠেলা দিয়ে উপরে তুলে দিয়েছে। তাছাড়া আমার বন্ধু ক্যাথিকে নিয়ে দিনেরবেলা একদিন গেছিলাম, দেখি উপরের স্ক্রীনের আড়ালে কেউ একজন চুপ করে বসে আছে, এমন দৃশ্য আরও অনেকে দেখেছে। যারা ভুত নিয়ে সিনেমা করে, তারাও এসেছিল, তারা এই থিয়েটারকে মার্ক করে গেছে হান্টেড হাউজ বলে”
“আমার নিজের ঘরে ভুত থাকে। আমি ভুত ভয় পাইনা বলে বাসা পাল্টাইনা। আমার করিডোর ধরে সবসময় কেউ হাঁটাহাঁটি করে। আমি একদিন ক্যাসেট রেকর্ডার অন করে প্রশ্ন করেছিলাম, তুমি কে? একটা ফিসফিসানি উত্তর রেকর্ড হয়েছে, ‘আই এম স্টাক(আমি আটকে আছি)’ বলে।" আমি জানতে চাইলাম, এটাতো তোমার ভয়েসও ওয়েভারলী হাউজ এর কথা সবাই জানে। এই বাড়িকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে ভুত দেখার জন্য। অনেকেই যায় ঘটা করে ভুত দেখতে, কেউ দেখতে পায়, কেউ পায়না। তবে আমার সৌভাগ্য হয়েছে একটা জিনিস দেখার। ওই হাউজের বেডরুমগুলোর একটিতে দেখেছি, একটি বেডে বাচ্চা একটি মেয়ে শুয়ে আছে, কিছুক্ষন পরেই চোখের সামনেই সব মিলিয়ে গেল সিনেমার দৃশ্যের মত।“ আমি আবার একটু সন্দেহের চোখে তাকাতেই সে মনঃক্ষুন্ন হলো।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে সে যে কোন বাড়ীর ভেতর গিয়েই বলতে পারে কিনা, সেই বাড়ীতে ভুত আছে কি নেই। তার যে বান্ধবী ছিল ক্যাথী নামে, তার বাড়ীতেও নাকি ভুত ছিল। তারা প্রতিদিন কাজের থেকে বাড়ী ফিরে দেখতে পেত ঘরের জিনিসপত্র সব উলটা পালটা হয়ে আছে, টিভির জায়গাতে টিভি নেই, দেয়ালের ছবি উলটা করে রাখা আছে। সে আমার বাড়ীতে এসে বলে দিতে পারবে ভুত আছে কি নেই, এই কথা শুনেই আমি দুই হাত জড়ো করে মাফ চেয়েছি। কোন প্রয়োজন নেই শুনে সে হেসে খুন। শুধু বললো ভুতকে অবিশ্বাস করারও কিছু নেই, আবার ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। তারা থাকে তাদের মত করে, আমাদের আশে পাশে থাকতে ভালোবাসে। কারো কোন ক্ষতিতো করেনা।
আপনাদের জন্য স্পেশাল ভুতের গল্প।হতে পারে, সে বললো "আমিতো আসলে কাউকে বিশ্বাস করাবার জন্য এগুলো করিনা, নিজে বিশ্বাস করি বলেই করি।"
No comments:
Post a Comment