আজ থেকে কয়েক বছর আগের কথা। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তখনো ডরমিটরিতে থাকি। ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। পরীক্ষা দিয়ে এসে ভেবে পাচ্ছিলাম না যে কি করবো। এতদিন খালি মনে হয়েছে, কবে পরীক্ষা শেষ হবে; একটু আরাম করে ঘুমাবো। কিন্তু আজকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কিছু করার খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ আমরা আবিষ্কার করলাম যে আমাদের কিছুই করার নেই। প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার ডেট দেয়নি, বাড়ি যাবারও উপায় নাই, মনে মনে পড়াশুনাকে খুব মিস করছিলাম।
আমাদের হলে আমাদের সাবজেক্টের মোট ৪ জন মেয়ে। সন্ধ্যার পর তাদের সাথে আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আড্ডা মারতে বসলাম। কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ চলে গেল। তখন যা হবার তাই হলো, সবাই মিলে ভুতের গল্প শুরু করলাম। ভয়ংকর ভয়ংকর সব ভুতের গল্প। তার পর ডাইনিংয়ে খেয়ে দেয়ে ঠিক করলাম আজকে আমরা সারা রাত সিনেমা দেখবো। তখন ছিল ডিসেম্বর মাস, রাজশাহীর হার কাঁপানো ঠাণ্ডা। ১০ টার পর থেকে টিভি রুম ফাঁকা হতে শুরু করলো, ১২ টার পর টিভি রুমে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। আমরা সবাই খুঁজে খুঁজে একটা ভুতের সিনেমা বের করলাম। খুব-ই ভয়ংকর ভুতের সিনেমা, দেখলে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবে! সিনেমা শেষ হলো রাত ২ টার দিকে। বাইরে বের হয়ে দেখি পুরা হল নিস্তব্ধ, সাথে যুক্ত হয়েছে মেঘের মতো কুয়াশা। ডরমিটরি থেকে একতলার টয়লেট অনেক দূরে, দোতালারটা কাছে। তাই সবাই মিলে দোতালারটাতে গেলাম। গিয়ে শুনতে পেলাম কে যেন গোসল করছে। আমাদের সবার মনে তখন অনেক প্রশ্ন! ভয়ে সবাই স্থির হয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছি। বাথরুমের ভেতর কে একজন পানি ঢালছে তো ঢালছেই। আমি একটু সাহস করে এগিয়ে গিয়ে দরজায় টোকা দিয়ে বললাম, “ভেতরে কে?” আর সাথে সাথেই পানি ঢালা বন্ধ। একদম সব চুপচাপ। আর কথা না বলে সবাই দিলাম এক দৌড়। পড়িমরি করে সবাই রুমে গিয়ে ঢুকলাম। আমার বেড দরজার কাছেই ছিল। রুমে ঢুকে যেই দরজা লাগাতে যাব অমনি দেখি দরজা আর লাগেনা। আমার সাথে আরো একজন এসে দরজা ধরে টানতে লাগলো, তাও দরজা লাগে না। কোনো একটা শক্তি যেন দরজা টাকে পেছন থেকে টেনে ধরে আছে। কিছুক্ষণ টানাটানির পর আমাদের হুশ হলো, দেখি যে দরজার কাঠ কিভাবে যেন লেগে গেছে। কোনোভাবে দরজা লাগিয়ে আমরা সব লেপের নিচে ঢুকে পরলাম। ঘুম কি আর হয়? এই হলো আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর রাত।
তার পর কি হলো জানেন? পরেরদিন খোঁজ নিয়ে জানলাম, ঐ ব্লকে এক আপু আছে, তিনি কিছুদিন আগে প্রেমে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি মাঝেমাঝে এমন অল্প-বিস্তর সার্কাস দেখান। একবার ঘুমের ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছেন। এবং এই অতৃপ্ত আত্মাই মাঝেমাঝেই ব্লকের সবার ঘুম হারাম করে দেন এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করে। পরে যখন-ই এ কথা মনে হয়েছে অনেক হেসেছি।
সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment