তিব্বতে প্রেতাত্মার সন্ধানে কিছু সত্য ঘটনা তুলেধরা হলো।
=========================
শোনা যায় এখনো তিব্বতে প্রেতাত্মার সন্ধানে বহু লামা ঘুরে বেড়ায়। প্রেতাত্মা নিয়ে লামাদের চিন্তার শেষ নেই। প্রেতাত্মাদের লামারা ভীষণ ভয়ও পায়। সেজন্য প্রেতাত্মা থেকে রক্ষা পেতে তারা নানা ক্রিয়াকলাপ করে। প্রেতাত্মাদের সন্তুষ্টির জন্য তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। অধিকাংশ তিব্বতীর ধারণা_ মানুষের মৃত্যুর পর দেহের ভেতর থেকে প্রেতাত্মারা মুক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ওই প্রেতাত্মার সদ্গতি হওয়ার আগ পর্যন্ত সে মানুষের ক্ষতি করার জন্য ঘুরে বেড়ায়। কখনো মানুষের ওপর ভর করে, কখনো পশু-পাখি কিংবা কোনো গাছ অথবা পাথরের ওপরও ভর করতে পারে। আর সে জন্য প্রেতাত্মাদের খুশি রাখতে তিব্বতীরা পূজা করে। এ পূজারও রয়েছে বিশেষ লগ্ন। ওই লগ্নে বিশেষ মুখোশ পরে ভূত-পিশাচ সেজে পূজা করে তারা।
এসব অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের বাইরেও তিব্বতের সামাজিক একটা অবস্থা রয়েছে। আর তিব্বতের সামাজিক অবস্থার কথা বলতে গেলে বলতে হবে এমন এক সমাজের কথা, যা কিনা গড়ে উঠেছিল আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে। তখন পীত নদীর উপত্যকায় চীনারা জোয়ার ফলাতে শুরু করে। অন্যদিকে আরেকটি দল রয়ে যায় যাযাবর। তাদের মধ্য থেকেই তিব্বতী ও বর্মী সমাজের সূচনা হয়। চীনের হান ও অন্যান্য প্রদেশের সমাজ থেকে এদের সমাজ বিকাশের ধারা ছিল আলাদা। ইয়ারলুং নদী উপত্যকায় প্রথমবারের মতো এ সভ্যতার গোড়াপত্তন শুরু হয়। এখানকার শাসক সোং সান গাম্পো যখন সাম্রাজ্য গড়তে শুরু করলেন, তার সৈন্যরা কালিম্পং, লে, উলান বাটোর, সিয়ান, কুমবুম এবং তাশখন্দ পর্যন্ত ক্ষমতাকে বিস্তৃত করল। আজ সেই সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব নেই, কিন্তু সামাজিক তিব্বতের অস্তিত্ব সেসব জায়গায় আজো টিকে রয়েছে।
সরকারি ভাষা হিসেবে চীনা ভাষার প্রচলন থাকলেও তিব্বতীদের ভাষার রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। তাই চীনের বেশ কিছু প্রদেশ এবং ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানে তিব্বতী ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ভাষার আলাদা আলাদা ধরন রয়েছে। জনজাতি হিসেবে জোংখা (ভুটানি), সিকিমি, শেরপা এবং লাদাখিরা যে ভাষায় কথা বলে, তার সঙ্গে তিব্বতী ভাষার যথেষ্ট মিল রয়েছে। তিব্বতী ভাষার নিজস্ব লিপি এবং লিখন পদ্ধতি রয়েছে। সর্বত্র হয়তো সে লিপির ব্যবহার নেই; তবে মূল ভিত্তি কিন্তু এ ভাষাই। এখানকার প্রাচীন ধর্ম হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্ম। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্ম এখানে এসে আরও প্রাচীন প্রকৃতি-পূজা (যা 'বন' ধর্মের মধ্যে রয়েছে) ইত্যাদির সঙ্গে সংশ্লেষের ফলে অদ্ভুত এক ভিন্ন তিব্বতী চরিত্র ধারণ করেছে। আজকের তিব্বত আন্দোলনের সমাবেশে সর্বত্রই হয়তো এই তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের কিছু আচরণ যেমন- মশাল বা প্রদীপ জ্বালানো, প্রার্থনা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কেবল ধর্মের বন্ধন দিয়ে এই সমাজ বা তার রাজনীতিকে বোঝা মুশকিল হয়।
ঠিক তেমনি বোঝা মুশকিল তিব্বতীদের অদ্ভুত রীতি। তিব্বতীরা দেবতার চেয়ে অপদেবতার ভয়েই তটস্থ থাকে বেশি। অপদেবতাকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য বিচিত্র সব কাণ্ড-কীর্তি করে এরা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কোনো কোনো তিব্বতীর বাড়িতে বিপুলাকার কুকুরের চামড়ায় ভুসি ভরে দেয়ালে টাঙানো। কোথাও এ রকম ভালুক কিংবা ইয়াকের চামড়া লাগানো থাকে। তিব্বতীদের বিশ্বাস_ এসবের প্রভাবে বাড়িতে অপদেবতাদের উপদ্রব বন্ধ থাকবে।
মজার ব্যাপার হলো, তিব্বতীরা নাকি উকুন খায়। একাধিক পর্যটকের বিবরণ থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বছর পঞ্চাশেক আগে এক পর্যটক সেই নিষিদ্ধ দেশে গিয়ে এ দৃশ্য দেখে লিখেছিলেন, "তিব্বতীরা সহজে গোসল করতে চায় না। শুকনো থাকার মধ্যে তাদের একরকম স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে। তবে সেজন্য তাদের ভোগান্তিরও শেষ নেই। এ ক্ষেত্রে অনেকের দেহেই উকুন বাসা বাঁধে। মেয়েদের পরনে থাকে গরম কাপড়ের ছুপা, উপরে চাপানো থাকে রেশম, এন্ডি অথবা মুগার রঙিন জ্যাকেট। সেই সঙ্গে থাকে সুতির ঘাঘরা। পোশাকের যে অংশ গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকে, উকুন সেখানেই বাসা বাঁধে। সেদিন এক যুবতী আমাদের সামনে তার জ্যাকেট খুলে কালো কালো মুসুরি দানার মতো উকুনগুলো ধরে খেতে লাগল।" পরে আরও একজনকে উকুন খাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে, সেও স্বীকার করেছিল। বলেছিল, 'এদেশের সর্বত্রই উকুন খাওয়ার রেওয়াজ আছে। আর উকুন খেতে একটু টক লাগে'।
No comments:
Post a Comment