Responsive Ads Here

29 January 2012

।। মৃত্যুর হাতছানি ।। (পর্ব ৫)

(৯)

লেকের পাড়ের কাছাকাছি তিনটি আর্মির ট্রাক দাড়িয়ে আছে । পুরো এলাকাটা ঘিড়ে রেখেছে সসস্ত্র আর্মি ।

লেকের পাড়ে দাড়িয়ে আছে শাহরিয়ার , কর্নেল আফসার , কমান্ডার জাওয়াদ আর ৬ জন ডুবুরি ।
নিজের পরিচয় দিয়ে সায়মা কে নিয়ে তাদের দিকে এগোলো সানি ।

ডুবুরিরা স্কুবা ইকুইপমেন্ট পরে নিচ্ছে ।
"রাসেল । খুব সর্তক থাকবে । মনে রেখো এখানে ১১ জন নিখোঁজ হয়েছে । ৬ জনের লাস পাওয়া গেছে । তারমানে এখানে কিছু একটা আছে ।" ডুবুরিদের ক্যাপ্টেনকে উদ্দেশ্য করে বললেন কমান্ডার ।

"yes sir . ." বলে বাকি ডুবুরিদেরকে কিছু নির্দেশ দিয়ে পানিতে ডাইভ দিলো ক্যাপ্টেন ।

সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে । ডুবুরিরা ডুব দিয়েছে । তাদেরকে আর দেখা যাচ্ছে না ।

আধ ঘন্টা পর ক্যাপ্টেন মাথা তুলল পানি থেকে । চিত্‍কার করে বলল "স্যার পানিতে প্রচুর আগাছা । সাতার কাটতে কষ্ট হচ্ছে , পায়ের ফ্লিপার আটকে যায় । ৭০ ফিট পর্যন্ত দেখতে পেরেছি । কিছুই পাই নি ।"

সবাই বুঝলো ঐ ৭০ ফিটের নিচে নামা অসম্ভব । কর্নেলের সাথে কি যেনো কথা বললেন কমান্ডার । তারপর ডুবুরিদের অর্ডার দিলেন উঠে আসতে ।

ক্যাপ্টেন আশে পাশে ফিরে দেখলেন বাকি ৫ জন ডুবুরিও পানির সারফেসে উঠে এসেছে । সবাইকে তীরে পৌছানোর অর্ডার দিলো সে ।

হটাত্‍ লেকের একদম মাঝখানে একটা ঘন বুদবুদ উঠতে লাগলো । অনেকটা জলহস্তী যেভাবে বুদবুদ সৃষ্টি করে সেভাবে ।
শেষ ডুবুরির কাছাকাছি উঠেছে বুদবুদটা । অস্থির কন্ঠে তাকে সর্তক করলো কমান্ডার ।

লোকটা দ্রুত সাতার কাঁটতে শুরু করলো । কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কি যেনো তাকে পানির নিচ থেকে টান দিলো । লোকটার গগন বিদারী আর্তনাদ ভেসে আসলো । ঐ দিকের পানি মূহুর্তেই হয়ে উঠলো রক্তলাল ।

বাকি ডুবুরিরা ভয়ে আরো জোড়ে সাতার কাটঁতে থাকলো । ততক্ষনে শাহরিয়ার আর্মিদেরকে লেকের পাড়ে জড়ো করেছে ।

সবাই রাইফেল তাক করে আছে লেকের দিকে ।

ডুবুরিরা পাড় থেকে এখনো কয়েক মিটার দূরে । ঠিক তখনই আরেকবার হামলা চালালো জিনিসটা ।

ডলফিনের মতো পানি থেকে লাফ দিয়ে কয়েক সেকেন্ড শূন্যে ভাসলো তারপর ঝাপিয়ে পড়লো এক ডুবুরির উপর ।

জিনিসটার মুখ একদম মানুষের মতো , তবে মানুষের স্বাভাবিক মুখের তিনগুন বড় । দাতঁগুলো কুকুরের দাতের মতো , জিহবা গিরগিটির মতো লম্বা । সারা গায়ে পিচ্ছিল আঁশ । হাত এর কনুই পর্যন্ত মানুষের মতো বাকিটুকু থাবা । সীল মাছের থাবার মতো । পা মানুষের মতো কিন্তু কোমড় থেকে কুমিরের মতো খাঁজকাটা একটা লেজ আছে ।

দৃশ্যটা দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো সবাই । ঘোড় ভাঙ্গতেই শাহরিয়ার চিত্‍কার করে গুলি করার নিদের্শ দিলো ।

একসাথে গর্জে উঠলো অনেকগুলো G3 আর AK47 . . . প্রচন্ড শব্দে অসহ্য লাগছে সায়মার । কানে হাতচাপা দিয়ে মাটিতে বসে গেলো ।

সানি এগিয়ে গিয়ে শাহরিয়ারের কোমরের হোলস্টার থেকে একটা ফাইভ স্টার নিলো । তাক করলো লেকের দিকে ।

জন্তুটার গায়ে বোধহয় গুলি লেগেছে । চিত্‍কার করে উঠলো সেটা । চিত্‍কারটাও ভয়ঙ্কর । যেনো কেউ তীক্ষ বাঁশির শিস্ দিলো । রাইফেলের গুলির আওয়াজকে ছাপিয়ে গেলো সেই শিস্ । সবাই গুলি করা থামিয়ে কানে হাতচাপা দিলো ।

জন্তুটা পানি থেকে মাথা তুললো । সরাসরি জন্তুটার মুখ দেখতে পেলো সানি । মানুষের মতোই মুখটা । চুলের জায়গায় রয়েছে আঁশ । কপালটা ঠেলে বেড়িয়ে এসেছে বাইরে । নাকটা কুকুরের নাকের মতো । চোখগুলো ভয়াভয় । একদম সাদা , মনিহীন ।

হটাত্‍ বিদ্যুত্‍ বেগে জীহবাটা বের করলো জন্তুটা । কি যেনো ছুড়ে দিলো । তারপর ঝপ্ করে ডুব দিলো ।

ছুড়ে দেয়া জিনিসটা উঠে এসে ডাঙ্গায় পড়লো । গড়াতে গড়াতে গিয়ে থামলো একটা পাথরের গোড়ায় ।

এগিয়ে গিয়ে একজন সৈনিক জিনিসাকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচা দিয়ে সোজা করলো ।

একটা মুন্ডু । গলাটা অসমানভাবে কাটাঁ । বুঝাই যায় কিছু একটা কামড় দিয়ে শরীর থেকে ছিড়ে নিয়েছে । এক ডুবুরির মুন্ডু । চোখগুলো খোলা , মনিতে মৃত্যুর আগে ভয়াভয় স্মৃতির আতংক এখনো যেনো বোঝা যায় । বিস্ফোরিত হয়ে আছে মনি ।

সায়মা সহ্য করতে পারলো না । অজ্ঞান হয়ে গেলো । দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরলো সানি ।

(১০)

সায়মা চোখ মেললো । পিট্ পিট্ করে তাকালো চারিদিকে । হোটেলে নিজেদের রুমে আছে সে । দেখলো উদ্বিগ্ন মুখে তার দিকে চেয়ে আছে সানি ।

লজ্জ্বা পেলো সায়মা । বার বার ছেলেটাকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে ভেবে ।

"তুমি ঠিক আছো ?" জিজ্ঞেস করলো সানি ।

"হমম । তবে মাথাটা ব্যাথা করছে ।" বলল সায়মা ।

"তাহলে একটা প্যারাসিটামল আর একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুম দাও ।" বলল সানি ।

-"তুমি কোথায় যাবা ?"

-- পাশের আদিবাসী গ্রামটাতে । কিছু কাজ আছে ।

- আচ্ছা ঠিক আছে । সাবধানে থেকো ।

ঝুকে সায়মার কপালে একটা চুমো খেলো সানি । হাসিমুখে বলল "ঠিক আছে ।"

দরজা খুলে বের হয়ে গেলো সানি ।

---

বগা লেকের কাছেই আছে সাইকতপাড়া নামক একটা গ্রাম । এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে উচুঁ গ্রাম ।

সেদিকেই হাটছে সানি । সান্টুকে দেখতে পেলো । পাহাড়ি ছেলেদের সাথে খেলছে । ডাক দিলো না আর ।

সাইকতপাড়া গ্রামটা খুব বেশি বড় না । গ্রামে পাহাড়িরা একপাশে , বাঙ্গালিরা একপাশে থাকে । প্রধানত জুম চাষ এবং পর্যটকদের গাইড হিসেবে চাকরি করেই পেট চলে তাদের ।

প্রথমে পাহাড়িদের এলাকায় ঢুকলো সানি । কিন্তু কেউই তার সাথে কথা বলতে রাজি নয় । বগা লেকের নাম শুনলেই ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছে তারা ।

সানি বুঝলো , এখান থেকে কোন কিছু জানা যাবে না । বাংঙ্গালি পাড়ার দিকে এগোলো সে । কিন্তু ঐ একই অবস্থা ।

হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছিলো সানি । হটাত্‍ একজন ডাক দিলো পিছন থেকে । পিছনে ঘুরে সানি দেখলো বৃদ্ধ একজন লোক দাড়িয়ে আছে একটা লাঠিতে ভর করে । লোকটার বয়স আনুমানিক ৭০-৮০ হবে ।

"চাচা কি আমাকে কিছু বলছেন ?" জিজ্ঞেস করলো সানি ।

" হ বাইজি । আফনারেই কইতেআছি । আফনে বগার কাহিনী জানতে চাইছিলেন না ? " বলল বৃদ্ধ ।

"জ্বি । কিছু জানেন আপনি ?" প্রশ্ন করলো সানি ।

- হ বাইজি । মেলা কথাই তো জানি ।

-- কি জানেন ?

- কেডা এই খুনডি করতেআছে উগ্গা জানি । বাইজি আফনারে একটা কথা কই । আফনে আফামনিরে লইয়া এখান থুন চলি যান।

(চলবে)

লিখেছেনঃ আহনাফ সানভি
মৌ মাছি

No comments:

Post a Comment