(৫)
নিঝুম রাত । জোত্সার আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিতো ।
ঝিঁঝিঁ পোকা একটানা ঢেকে যাচ্ছে । সানি আর সায়মা ঘুমিয়ে আছে ।
হটাত্ একটানা ব্রাশ ফায়ারের শব্দে ধড়মড়িয়ে উঠলো সানি । পাগলের মতো নিজের walther ppk .9 ক্যালিবার সেমি অটোমেটিক পিস্তলটা খুজতে লাগলো বালিসের কাছে ।
আস্তে আস্তে মনে পরলো যে সে এখন কোন মিশনে নেই । সে এখন রান্দরবানে আছে । আর পিস্তলটা ক্যান্টেনম্যান্টে জমা দিয়ে ছুটি কাটাতে এসেছে ।
পাশ ফিরে দেখলো সায়মাও জেগে গেছে । ভীত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে ।
"কি হচ্ছে সানি ?" ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো সায়মা ।
"বুঝতে পারছি না । আমার মনে হয়েছে আমি গুলি. . . . . " সানি এতটুক বলার পর পরই ফরফর করে একটানা কাপড় ছেড়ার মতো গুলির আওয়াজ ভেসে এলো ।
সানি আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলো অস্ত্রটা একটা Heckler & koch G3 । একটা সেমি অটোমেটিক assult rifle . এটা 7.62 ক্যালিবার । অস্ত্রটা বাংলাদেশ আর্মির ইনফ্রেন্ট্রি রেজিমেন্ট ব্যাবহার করে । একটানা ব্রাশ ফায়ার করা হচ্ছে ।
সায়মা ভয়ে কুকড়ে গেছে । বড় বড় মায়াময় চোখগুলোতে নিখাদ আতংক তার ।
"তুমি এখানে থাকো । আমি দেখে আসি কি হচ্ছে ।" সায়মাকে বলল সানি ।
"না । না । আমিও যাব তোমার সাথে ।" বলল সায়মা ।
"আহহা তুমি শুধু শুধুই জেদ করছো । ওখানে গোলাগুলি হচ্ছে । যেকোন কিছু হতে পারে ।" একটু রাগত কন্ঠে বলল সানি ।
"তুমি গেলে আমিও যাব । ব্যাস ।" বলল সায়মা ।
হাল ছেড়ে দিলো সানি । সায়মাকে তার অনেকখানিই চিনা হয়ে গেছে এতোদিনে । মেয়েটা একরোখা ।
একটা শার্ট গায়ে দিয়ে সায়মাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো সে হোটেল থেকে ।
মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে । অবাক হলো তারা ।
হটাত্ তারা দেখলো কয়েকজন আর্মি মেডিক একটা ফিল্ড স্ট্রেচার নিয়ে দৌড়ে গেলো সামনে ।
বগা লেকের দিকে প্রচন্ড ভীড় ।
প্রচুর মানুষ । অনেকের হাতেই মশাল ।
সেদিকে এগিয়ে গেলো সানি আর সায়মা ।
লোকগুলো সব আদিবাসী । ভয়ার্ত কন্ঠে কি যেনো বলাবলি করছে নিজেদের মধ্যে ।
লেকের পাড়ের কাছাকাছি এলাকাটা সশস্ত্র আর্মিরা ঘিরে রেখেছে ।
সবার রাইফেল লেকের দিকে তাক করা ।
শাহরিয়ারকে দেখতে পেলো সানি । আর্মি ট্রুপসটাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে সে ।
তাকে ডাক দিলো সানি । ঘাড় ঘুড়িয়ে সানির দিকে দেখলো শাহরিয়ার ।
ঠিক এসময় লেকের পানিতে আলোড়ন উঠলো । অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে কি যেনো ভেসে আসছে পাড়ের দিকে ।
শাহারিয়ার সাথে সাথে নিদের্শ দিলো "ফায়ার" ।
একসাথে গর্জে উঠলো অনেকগুলো অটোমেটিক রাইফেল । প্রচন্ড আয়োয়াজে কানে তালা লেগে গেলো সায়মার ।
কয়েক মিনিট পর গোলাগুলি থেমে গেলো । লেকের পাড়ের কাছাকাছি কি যেনো ভেসে উঠেছে ।
শাহরিয়ার দুজন সৈনিককে ইশারা করলো । রাইফেল তাক করে জিনিসটার দিকে এগিয়ে গেলো তারা ।
জিনিসটার কাছাকাছি গিয়ে কিছুক্ষন পরিক্ষা করলো কি যেনো । তারপর শাহরিয়ারকে ডাক দিলো তারা ।
শাহরিয়ার এগিয়ে গেলো । তার সাথে এগিয়ে গেলো সানি আর সায়মা । আদিবাসীদেরকে আটকিয়ে রেখেছে আর্মিরা ।
জিনিসটাকে ডাঙ্গায় তোলা হলো । জিনিসটা থেকে মাংস পচাঁ দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে ।
দেখে মনে হচ্ছে জিনিসটা কোন প্রানীদেহ । বিকৃত হয়ে আছে । আকৃতি বিহীন ।
এক সৈনিক বুট দিয়ে লাথি দিয়ে জিনিসটাকে ঘুরিয়ে দিলো ।
আতংকে চিত্কার করে উঠলো সায়মা । সানি আর শাহরিয়ারও শিউড়ে উঠলো ।
একটা পচাঁ গলা লাস , বিকৃত । মুখের মাংস গলে গলে পরছে । চোখের কোটর একটা খালি , আরেকটাতে বিভত্স অবস্থায় একটা মনির অংশবিশেষ ।
মুখটা হা করে আছে । সেটার মধ্যে দলা পাকিয়ে আছে কাদা আর পচা শামুক ।
লাসটার বুক ক্ষতবিক্ষত । মনে হচ্ছে প্রচন্ড ধারালো কোন জিনিস দিয়ে অনাবরত , খোচানো
হয়েছে জায়গাটা ।
পেট একদম ফুটো হয়ে আছে । সেখানে প্রায় ফুটবল সাইজের একটা গর্ত ।
সেখান দিয়ে পচাঁ গলা নাড়ি ভুড়িগুলো চুইয়ে চুইয়ে পরছে । প্রচন্ড দুর্গন্ধ ।
হড়হড় করে বমি করে দিলো সায়মা । তারাতারি গিয়ে তাকে ধরলো সানি ।
(৬)
"কি ব্যাপার শাহারিয়ার ? তুই কিছু বলছিস না কেনো ? কি হচ্ছে এখানে ?" রাগত গলায় জিজ্ঞেস করলো সানি ।
শাহরিয়ার , সায়মা আর সানি এখন আছে শাহারিয়ারের ফিল্ড ক্যাম্পের তাবুতে ।
"ভাইয়া আমি একজন ডাক্তার । অনেক লাস দেখেছি । তবে এতো বিভত্স লাস এই প্রথম দেখেছি । উফ্ মারাত্মক ভয়ঙ্কর ।" শাহারিয়ারকে উদ্দেশ্য করে বলল সায়মা ।
"কি ব্যাপার । তুই জবাব দিচ্ছিস না কেনো ?" রাগত গলায় জিজ্ঞেস করলো সানি ।
চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে শাহারিয়ার । আস্তে আস্তে বলতে শুরু করলো "কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না । আজকের লাসটাই প্রথম না । এর আগেও আরো ৬ টা লাস পাওয়া গেছে । সব গুলোই পচাঁ গলা ।
এর মধ্যে ২ জন আর্মিও আছে । গত একমাস থেকেই এঅবস্থা । অস্বাভাবিকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় মানুষ । তারপর পাওয়া যায় তার লাস ।
বগা লেকের কাছাকাছি যারাই রাতের বেলা যাচ্ছে তাদের মধ্য থেকেই কয়েকজনে এরকম হচ্ছে । কিছুদিন আগে এক আদিবাসী লেকে সাতার কাটতে নেমেছিলো । তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি ।
আমার ধারনা লাসটা ঐ লোকটার । এ জন্যই তোকে সাতার কাটতে মানা করেছিলাম"
"তুই এটা নিয়ে রিপোর্ট করিস নাই ?" জিজ্ঞেস করলো সানি ।
"করেছি । কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে সঠিক কারনটা তদন্ত করে বের করে তাদেরকে বলতে । জায়গাটা একটা টুরিস্ট স্পট । এখানে এধরনে কান্ড হচ্ছে জানলে টুরিস্ট আর আসবে না ।
তাই ব্যাপারটা চেপে রাখা হচ্ছে । আদিবাসীদেরকেও বলে রাখা হয়েছে যাতে ঘটনাটা না ছড়ায় ।
তারা ছড়াবে না । কারন টুরিস্টদের কাছ থেকেই তাদের আয় হয় ।"বলল শাহারিয়ার ।
"তোর কি মনে হয় ? কে করছে খুন গুলো ?" প্রশ্ন করলো সানি ।
"জানি না । কিছুই বুঝতেছি না । মাঝে মাঝে মনে হয় কোন মাছ অথবা জন্তু । কিন্তু আবার মনে হয় । যদি মাছই হয় তাহলে লাসগুলোকে খায় না কেনো ? লাসগুলো পচে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে । তারপর আবার নিজ থেকেই দিয়ে যায় ।" বলল শাহারিয়ার ।
"এখন পর্যন্ত নিখোজ হয়েছে কজন ?" জিজ্ঞেস করলো সানি ।
-"১৩ জন । লাস পেয়েছি মোট ৬ জনের । বাকি পাচঁটা লাসের অবস্থাও আজকেরটার মতো ।"
--"এখন তাহলে কি করবি ?"
-"দেখি । কালকে নৌবাহিনী থেকে একটা ডুবুরি দল আসছে । তাদেরকে দিয়ে লেকটা ভাল করে খোজাঁবো ।"
(চলবে)
লিখেছেনঃ আহনাফ সানভি
সংগ্রহে - লিমন
No comments:
Post a Comment