(৩)
শাহারিয়ার কাছাকাছি এসে বলল "সানি । দোস্ত । বান্দরবানে তোকে স্বাগতম । ভাবি আসসালামুআলাইকুম ।"
"ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাইয়া ।" মিষ্টি হেসে উত্তর দিলো সায়মা ।
"তুই তো ব্যাটা বিয়েতে আসলি না । কত করে বললাম তোকে ।"বলল সানি ।
"আরে দোস্ত বুঝসই তো আর্মির চাকরি । ছুটিছাটা কম । তারপরও চেষ্টা করেছিলাম । দেয়নি ।" বলল শাহারিয়ার ।
"হমম । তা অবশ্য ঠিক ।" বলে মাথা ঝাকালো সানি ।
"যাই হোক । আসতে কোন কষ্ট হয় নাই তো ? চল তোদেরকে হোটেলে দিয়ে আসি ।" বলল শাহারিয়ার ।
শাহারিয়ারের সাথে হাটতে লাগলো সানি আর সায়মা ।
হোটেলটা রুমা বাজার থেকে সামন্য একটু দূরে । বাজার থেকে বের হওয়ার সময় শাহারিয়ার একটা দোকানের শার্টারে ঠেস দিয়ে থাকা এক কিশোরকে ডাক দিলো ।
"এই সান্টু । এখানে আসো ।"
ছেলেটা হাসিমুখে এগিয়ে এলো । বয়স বড়জোড় ১২-১৩ হবে । এসেই সবাইকে সালাম দিলো সে ।
সালামের উত্তর দিয়ে শাহারিয়ার তাকে বলল "দেখো সান্টু , এরা আমার বন্ধু । তুমি ওদেরকে হোটেলে নিয়ে যাও । পারবা না ?"
জবাবে মাথাটা একদিকে কাত করলো সান্টু ।
সানির দিকে ফিরে শাহারিয়ার বলল "ছেলেটা বাঙ্গালি । এখানে ছোটবেলা থেকে আছে । এখানের পাহাড় পর্বত সবই তার চেনা । অনেক ভাল গাইড । ও তোদেরকে হোটেলে নিয়ে যাবে ।"
"তুই কোথায় যাচ্ছিস ?" প্রশ্ন করলো সানি ।
"আমার কিছু কাজ আছে । যেতে হবে । বিকালে তোদেরকে নিয়ে বের হব ।" বলেই সান্টুকে ইশারা করলো শাহারিয়ার ।
ছেলেটা হাসিমুখে বলল "আসেন স্যার । আমার সাথে আসেন ।"
বলেই হাটতে থাকলো সে । সানি আর সায়মা তাকে অনুসরন করলো ।
"সান্টু তোমার পরিবারে কে কে আছে ?" প্রশ্ন করলো সায়মা ।
"আমি আর আমার মা । বাপ নাই । মইরা গেছে । আমি যহন খুব ছুডু তহন নাকি আদিবাসীগো লগে ঝগড়া অইছিলো । রাইতের বেলা কোপ দিয়া মাইরা ফালাইছে ।" বলল সান্টু ।
শিওড়ে উঠলো সায়মা ।
সানি তাকে জিজ্ঞেস করলো "লেখাপড়া করো ? সংসার কিভাবে চলে ?"
"আগে করতাম । অহন করি না । মায়ে বাজারে একটা দোকান চালায় । আর আমি গাইড । টুরিস্টগো গাইড হিসেবে চাকরি করি ।" বলল সান্টু ।
ছেলেটার সাবলীল কথার ভঙ্গিমা আর সরল অভিব্যাক্তি ভালো লাগলো সায়মা আর সানির ।
হোটেলে পৌছে গেলো তারা । সানি পকেট থেকে একটা ৫০ টাকার নোট বের করে সান্টুর দিকে বাড়িয়ে ধরলো ।
"না স্যার । লাগদো না । টেকা নিলে মেজর সাব (শাহারিয়ার) রাগ করবো ।" বলল সান্টু ।
সানি মুচকি হেসে বলল "করবে না । নাও এটা । কিছু কিনে খেয়ো ।"
টাকাটা নিলো সান্টু । তারপর একটা সালাম দিয়ে দৌড় দিলো ।
মুচকি হেসে সায়মাকে নিয়ে হোটেলে ঢুকলো সানি ।
(৪)
হোটেলে ঢুকে গোসল করে , খাওয়া দাওয়া সেরে নিলো সানি আর সায়মা ।
বিকাল ৪.৩০ এর দিকে শাহারিয়ার আসলো । সায়মা আর
সানিকে নিয়ে বের হলো ঘুরতে ।
"কোথায় যাচ্ছি আমরা ?" প্রশ্ন করলো সায়মা ।
"আমরা যাচ্ছি এ এলাকার প্রধান আকর্ষন বগা লেক দেখতে ।" হাসিমুখে বলল শাহরিয়ার ।
হোটেল থেকে বের হতেই কোথা থেকে যেনো দৌড়ে আসলো সান্টু । সবাইকে সালাম দিলো । তারপর তাদের সাথে হাটা ধরলো ।
একটু পর তারা পৌছালো লেকটার পারে । অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য । পানি একদম নীল । আকাশের ম্লান সূর্যের আলোয় আরো অপরূপ লাগছে লেকটাকে ।
বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সানি আর সায়মা ।
শাহরিয়ার আর সান্টু খুব মজা পাচ্ছে তাদের এই অবাক হওয়া দেখে ।
শাহরিয়ার বললো "লেকটা মাটি থেকে প্রায় ২৫০০ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত । পাহাড়িদের মধ্যে প্রচলিত একটা লোককথায় ড্রাগন তথা আগুনের মিথের কাহিনি শুনে অনেকেই একে মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বলে সন্দেহ করেন ।
সরকারিভাবে স্থাপিত সাইনবোর্ডও সে ধারণাকেই উস্কে দেয় ।"
"লেকটার গভীরতা কত হবে ?"জিজ্ঞেস করলো সানি ।
"বগা লেকের সঠিক গভীরতা বের করা যায়নি । স্থানীয়ভাবে দুইশ' থেকে আড়াইশ' ফুট বলা হলেও সোনার মেশিনে ১৫১ ফুট পর্যন্ত গভীরতা পাওয়া গেছে ।" বলল শাহারিয়ার ।
"তার মানে এটার সঠিক গভীরতা কারো জানা নেই ?" প্রশ্ন করলো সানি ।
" না । আরো মজার কথা হলো বগা লেকের পানির রঙ অণুজীব কিংবা প্ল্যাঙ্কটনের কারণে পরিবর্তন হয় বছরে কয়েক মাস ।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, একই সময় পরিবর্তিত হয় আশপাশ অন্যান্য জলাশয়ের পানির রঙও ।
স্থানীয়দের ধারণা , বগা লেক থেকে বগা লেক থেকে এক বা একাধিক আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার তৈরি হয়ে থাকতে পারে ।" বলল শাহারিয়ার ।
"দোস্ত । আমার ভিষন লোভ হচ্ছে । সাতার কাটতে ইচ্ছে করছে ।" বলল সানি ।
"না । সেটা সম্ভব না ।" একটু রুক্ষ স্বরে বললো শাহারিয়ার ।
"কেনো ? কোন সমস্যা ?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো সানি ।
যেনো একটা ধাক্কা খেলো শাহারিয়ার । তারপর অনেকটা কৈফিয়তের সুরে বলল "না মানে । লেকে জলজ আগাছা অনেক । তাছাড়া আলগা পাথর আছে । আর এটার পাড় একথম খাড়া ।"
"তাতে কি হয়েছে ? তুই তো এমনভাবে বলছিস যেনো আমি ডুবে যাব । আরে ভাই আমি একজন আর্মি অফিসার । আর এধরনের জায়গায় সাতার কেটে অভ্যাস আছে ।" বলল সানি ।
"দেখ সানি । উল্টা পাল্টা কথা বলিস না । আমি এখানের ইনচার্জ । এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব । আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না । সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে । চল হোটেলে ফিরতে হবে ।" রাগত স্বরে কথাগুলো বলেই হাটা শুরু করলো শাহরিয়ার ।
সান্টু ভয় পেয়েছে । মুখ কালো করে দাড়িয়ে আছে সে । শাহরিয়ার একটু দূরে গিয়ে ডাক দিলো তাকে । দৌড়ে শাহরিয়ারের কাছে গেলো সে । শাহরিয়ার তাকে কি যেনো বলছে । ছেলেটা মাথা ঝাকাচ্ছে তার প্রতিটা কথার সাথে সাথে ।
অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে সানি । বন্ধুর এধরনের আচড়ন সে মোটেই আশা করেনি ।
আলতো করে সানির একটা হাত ধরলো সায়মা । মৃদু কন্ঠে বলল "শাহরিয়ার ভাইয়া যেহেতু মানা করেছেন । তাহলে মনে হয় লেকটাতে সাতার কাটা নিষিদ্ধ ।"
"না । যতটুকু জানি । এখানে সাতার কাটা যায় । পানির তাপমাত্রাও বেশ আরামদায়ক ।"বলল সানি ।
"তাহলে শাহরিয়ার ভাই কেনো বললেন এখানে সাতার কাটা যাবে না ?"প্রশ্ন করলো সায়মা ।
"জানি না । শাহরিয়ার হটাত্ এরকম কেনো করলো বুঝলাম না । আমার মনে হয় সে আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছে ।
এখন চলো হোটেলে ফিরে যাই । পরে দেখা যাবে ।" বলল সানি ।
দুজনে একসাথে হোটেলের দিকে হাটতে লাগলো ।
(চলবে)
লিখেছেনঃ আহনাফ সানভি
সংগ্রহে - লিমন
No comments:
Post a Comment