আমি তখন নবম শ্রেণীতে।আমার মটরসাইকেল চালানোর সখটা তখন খুব বেশি ছিল ৬মাস আগে অমাদের একটা মটরসাইকেল কিনছে।আমি তো মহা খুশি।যখনই সময় পাই তখনই আমি আর আমার চাচাত বড় ভাই ঘুরতে বের হয়ে যাই। আমার চাচাত বড় ভাইটা আমার বন্ধুর মত আবার নিজের ভাই এর থেকেও অনেক বেশি যেহেতু আমার কোন ভাই বোন ছিল না।আমাদের দুই জনকে দেখে মনে হয় আমি ওর বড় ভাই।বাসার সবার কাছে আমার বড় ভাই খুব ভাল ছেলে বলে পরিচিত কিন্তু আসলেই ও খুব ভাল ছেলে।ওর একটা সমস্যা ছিল যে ও খুব চুপচাপ থাকত কারও সাথে কথা বলতো না কথা বললেও খুব কম আমাদের দুই জনের মধ্যে ঝগড়া মারামারি লাগতো কিন্তু কেউ কারো সাথে দুই দিন এর বেশি কথা না বলে থাকতে পারি না।কিন্তু s.s.c পরীক্ষার পরে তাকে দিনাজপুর এর বাইরে কলেজে ভর্তি হতে হয় এবং তাকে হোস্টেল এ থাকতে হয় । হোস্টেল এ যাওয়ার পর থেকে সেই ভাই পাল্টে গেছে সে আর চুপচাপ থাকে না সবার সাথে free mind এ কথা বলে।কলেজ ছুটি দেওয়ার কারনে বেশ কয়েকদিন দিনাজপুর এ থাকলো দেখতে দেখতে ছুটিও শেষ হয়ে গেল এবং ১৯ জুলাই চলে গেলো।তাই মনটা খুব্ খারাপ ছিল।২০ জুলাই ছিলো দাদুর মৃ্ত্যু বার্ষিকী বাসার সবাই ফকির মিসকিন খাওয়াচ্ছে।সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত ।ঠিক ঐ সময় আমার মটরসাইকেল চালানোর সখটা চাড়া দিয়ে উঠলো এর সঙ্গে একটা প্লানও ছিলো।আর মনে করলাম ভাইয়া থাকলে এক সাথে ঘুরতাম। ভাইয়া যখন নাই ২টা বন্ধুকে নিলাম নিয়ে।মটরসাইকেলে করে তিন জন বন্ধু মিলে ঘুরতে চলে গেলাম। মটরসাইকেল এ তেল কম ছিলো বলে একটু জরে চালাচ্ছিলাম তেল নেওয়ার জন্য্।হঠাৎ কেমন করে জানি কি হলো একটা অটো বাইক এর সাথে একসিডেন্ট কিন্তু কিছু বুঝলাম না কারো শরীরে একটা চিহ্ন নেই কিন্তু আমার শরীরটা থেকে সব শক্তি কমে যাচ্ছে। আমি মটরসাইকেলটা ছাড়ে দিয়ে রাস্তার পাশে দাড়াতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না ।মনে হচ্ছিল আমি স্বপনো দেখতেছি ঐ সময়টাতে আমার সবচেয়ে যেই জিনিসটা বেশি মনে পরতেছিল জিনিসটা হল ২২ জুলাই আমার ২য় সাময়িক পরীক্ষা ছিল।আর এই দিকে আমার ডান পা প্র্রচণ্ড ভাবে আহত হওয়ার কারনে খুব রক্ত ঝরছে আর আস্তে আস্তে পা টা অবশ হয়ে যাচ্ছে ।কথাথেকে দুইটা লোক এসে আমাকে বলল প্লিস তুমি মেডিকেল এ চলো। আর আমার বন্ধু দুইটাকে বলল আমার বাসার লোকজনকে খবর দিতে।ওরা আমার আব্বুকে খবর দিল তারপর আমি অার কিছু বলতে পারিনা যখন চোখ দুইটা খুললাম দেখি দিনাজপুর মেডিকেল হাসপাতাল এর গেটে ওই দুইটা লোক আমার পিছনেই ছিল তারপর দেখি আব্বু আর দুইজন দাড়ায় আছে আব্বুর মুখটা দেখে মনে হচ্ছিলো অনেক রাগে আছে।কিন্তু আমি যেই অটোতে করে আসছি ওই অটো টার অবস্থা খুব খারাপ পুরো অটোটার নিচটা রক্ত দিয়ে ভর্তি ছিলো ।তখন আব্বু চোখ দুইটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ দুইটা পানি দিয়ে টলমল করতেছে । আমাকে অটো থেকে নামতে বললে আমি শুধু আব্বুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি আব্বু এতেই বুঝতে পারল যে আমি অটো থেকে নামতে পারব না । আব্বু আমাকে তার কোলে করে নামাল এবং হাসপাতাল এর ভিতরে একটা ট্রলিতে শুয়িয়ে দিল তখন আমি শূধু আব্বুকে একটা কথা বললাম অাম্মু আসেনি আব্বু কিছু না বলে কোথায় যেন চলে গেল। আমি সবাইকে বলতে লাগলাম আব্বু কোথায় তখন আমি আব্বুকে খুজতেছিলাম কারন আব্বু আমার সাথে কোন কথা বলেনি আমার যেই আব্বু আমার সাথে একমিনিট কথা না বলে থাকতে পারে না আমার সেই আব্বু আমার সাথে কথা না বলে কোথায় যেন চলে গেল। আমি শুধু আব্বুর হাতটা ধরে একটা কথা বলতেচেয়েছিলাম তুমি অামার উপর রাগ করে থাকিয়ো না।তখন পাশ থেকে আমার একটা বন্ধু বললো হাসপাতাল এর ফরমালিটি পূরণ করতে গেছে।আব্বু হয়তো আমার কষ্ট না দেখতে পেরে নিজে হাসপাতাল এর ফরমালিটি পূরণ করতে গেছে।তারপর আমাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হল।ঐ মহূর্তে হাসপাতাল এ আবার ডাক্তার নেই।ইনর্টান আমার আহত পায়ে ২ টা আর হাত ১টা ইনজেকশন দিল।তারপর রির্পোট দিল আব্বুকে আর বলল আপনার ছেলের ডান পায়ের শেষ ২ টা আঙুল কাজ করবে না।এই কথাটা আব্বু আমাকে এখন বলেনি। অপারেশন থিয়েটারে থেকে বের হয়ে প্রথমে আম্মুকে দেখি অপারেশন থিয়েটারে এর গেটে দাড়িয়ে আছে ।আমাকে দেখা মাএই আম্মু কাদতে শুরু করে দিলো অামি আম্মুর চোখে পানি দেখে অামি আর আম্মুর দিকে তাকাতে পারলাম চোখ ২ টা বন্ধ করে নিলাম আমিও আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারলাম আমারও ২ চোখ পানি বের হতে লাগল।তারপর আমাকে ৬ বেড বিশিষ্ট একটা রুম এ নিয়ে জানালার পাশে একটা বেড এ শুয়ে দিল।এরপর আমার পরিবারের একে একে সবাই আসলো আর আম্মু আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত নাড়াচ্ছে ঐ দিন রাতে অামি নিজেতো ঘুমাইনি আম্মুকে ও আব্বুকেও ঘুমাতে দেইনি ওরা সারা রাত আমার পাশে বসে শুধু সান্তনা দিয়েছে। আমার ২য় সাময়িক পরীক্ষাটাও দেওয়া হলো না কয়কেদিন হাসপাতাল এই কাটে গেল। হাসপাতাল এর দিন গুলো প্র্রথম অব্থায় খুব খারাপ কাটতেছিলো সময় কাটতো না ২ দিন পরে একটা বয়স্ক লোক আসলো আমার সামনের বেডে।আজব বেপার ঘটলো সব ডাক্তার ঐ বয়স্ক লোকটাকে দেখতে আসে কিন্তু লোকটার শুধু ১ টা হাত ভাঙ্গছে এই গুলা দেখেতো মাথাটা গরম হয়ে গেল পরে যখন শুনলাম লোকটা মুক্তিযুদ্ধা তখন আর রাগ থাকল না। লোকটার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধা ভাব ছিল না ।ঐ দিন থেকে আমি লোকটাকে ডাকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতাম আসলে মুক্তিযুদ্ধটা অনেক কষ্টের ছিল অনেক কষ্টের ফলে এই দেশ আর ভাষা আমাদের হইছে ।তারপর ডাক্তার বলল ৬ আগস্ট তোমার পায়ে skin qrefting হবে। এই দিকে আমার ৬ আগস্ট আমার জন্ম দিনও ছিল। ৬ আগস্ট রাতটাও আমার জন্য খুবই কষ্টের গেছে অপারেশন এর কারনে আমাকে এনেসথেশিয়া দেওয়া হয়। এনেসথেশিয়ার(অবশ করার ইনজেকশন)কারনে নড়াচরা করতে পারতেছিলাম না।ঐ দিন রাতেই ডাক্তার আমাকে ভুল ঔষধ লিখে দেয় আব্বু না দেখলে হয়ত আজ এই পৃথিবীতে থাকতাম না।এখন আমি তাদের এই অক্লান্ত সেবার ঋণী আমি তাদের এই ঋণ আমার জীবন দিয়েও শোত করতে পারবো না ।
আমার কারণে আমার আম্মু ও আব্বুকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হইছে। আম্মু ও আব্বু I am soory।
আম্মু ও আব্বু আমি তোমাদরেকে অনেক ভালোবাসি।এই কথাটা আমি তোমাদরেকে প্রমান করে দেখাব।
No comments:
Post a Comment