Responsive Ads Here

19 January 2012

শেষ কিছু দিন...

ডাক্তার এর চেম্বারে রিপোর্ট হাতে বসে আসে এক তরুণ বয়স কত হবে আর ২৩-২৪ হলদে ফর্সা গায়ের রং মুখটা দাড়িতে জঞ্জালময় হয়ে আচ্ছে .দেখে বুঝা যায় বহদিন সেভ করে না । মনের দু:খে মানুষ নাকি বনবাসে যায় , চিন্তা করছে সে বনবাসে যাবে । তরুণ টির নাম সুনীল, ভালো লাগে আকাশের গাড় নীল ,তাই নিজের নাম দিয়ে দিল সুনীল । আকাশ দেখলেই তার মনের কবি উদয় হয় রচনা করে কিছু অসাধারন কিছু কবিতা যেগুলো কোথায় ছাপা হয় না ,মনের গভীর কোনে ছোট একটা জায়গা আছে সেইখানে প্রকাশিত হতে থাকে । বাহিরের আকাশটা আজকে অনেক মেঘলা ,আকাশ দেখা যাচ্ছে না তাই মনটা খারাপ ছিল, আকাশ খারাপ থাকলেই তার মনে হয় কিছু ঘটতে যাচ্ছে । খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে সামনে । মনটা খারাপ হয়ে যায় সুনীলের কতসময় ধরে বসে আছে ডাক্তার এর চেম্বারে কিন্তু তার ডাক পরছে না । মনে মনে একটা কবিতা লিখে ফেলে

ডাক্তার বাবু ডাক্তার বাবু

রোগী তুমি দেখ ,

মনের সুখে টাকা দিয়ে

সুখের স্বপ্নের নাকি দেখ ।

না আজকাল ঢাকা শহরে ডাক্তারের অফিসে ঘুমানোর জন্য একটা যাগয়া রাখার দরকার তাহলে অবসর সময়ে ঘুমানোর কিছুটা সময় পাওয়া যাবে ,সময় কি এমন করে কাটতে পারে ? তার সিরিয়াল নাম্বার ৫০ এখন মাত্র ১০ নম্বর গেল , মনে মনে হাসে । একজন রোগী দেখতে ডাক্তার সময় নিচ্ছে ৫-১০ মিনিট করে এখন চলে ১০ আরোও ৪০ জন বাকি । এমনি করে চলতে থাকলে ৪০জন গুন ০৫ সমান ২০০ মিনিট ভাগ ৬০ মানে ৩ ঘন্টার ও কিছু সময় বেশি । কি করা যায় এমন সময় চিন্তা করতে থাকে সুনীল । মাথায় কিছু পায় না, আশে পাশে তাকায় সব রোগী, সবার সাথে নিজেকে দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাগছে সেতো রোগী নয় তাহলে এইখানে কেন ? নিজেকেই প্রশ্ন করে । গত সপ্তাহে শরীর খারাপ ছিল তাই ডাক্তারের কাছে এসেছিল; ডাক্তার কিছু টেষ্ট দিয়েছে সব গুলো করে নিয়ে এসেছে রিপোট দেখানোর জন্য বসে আছে । কিন্তু আশে পাশে সব রোগী দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাগছে সব রোগী একসাথে মিলে কেমন যেন ভয়াভয় নীরব অবস্থা বিরাজ করছে ।

কারোর মুখে কোন কথা নেই সবাই যেন কিসের জন্য চুপ করে আছে মাঝে মাঝে নীরবতা থমকে যাচ্ছে মোবাইলের সাইরেনের অথবা ডাক্তারের অফিসে যেই লোক সিরিয়াল ডাকে তার আওয়াজে । মোবাইলের কত রকম রিং টোন থাকতে পারে এটা না শুনলে বিশ্বাস করা কষ্ট । বিরক্ত লাগে মোবাইলের শব্দে । যিনি সিরিয়াল মেন্টেন করছেন তাকে দেখলে মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে ব্যাস্ত মানুষ ,র নাম করিম । আস্তে আস্তে গেলাম ভির ঠেলে করিম ভাই একটু কথা শুনবেন করিম ভাই যেন মহা ব্যাস্ত চোখদুটু আমার দিকে বড় করে তাকিয়ে বললেন কি ব্যাপার ভাই আপনার সিরিয়াল তো ৫০ এখন মাএ ২০ চলে সমস্যা কি আপনার ? হঠাৎ মুখের কথা বন্ধ হয়ে গেল । ভাই আমাকে কি একটু আগে দেওয়া যায় না সামান্য কয়টা রিপোর্ট বেশি সময় নেব না ভাই ,একটু দেখেন ভাই ।

করিম ভাই এইবার মনে হয় কিছুটা দু:খ বুঝলেন আমাকে বলেন ভাই আচ্ছা দেখি চেষ্টা করে ।মনে কিছুটা শান্তি পেলাম ,আবার গিয়ে চেয়ারটায় বসলাম পাশে ফুটফুটে একটা মেয়ে বসে আছে মুখটা শুকিয়ে গেছে জ্বরে নাম সূচনা । আমি মনে মনে চিন্তা করি দুনিয়াতে এত নাম থাকতে সূচনা কেন রেখেছে ? কিন্তু প্রশ্নটা করার সাহস করলাম না , মনে মনে সূচনার আরোও কিছু প্রতিশব্দ কল্পনা করতে থাকলাম সূচনা -ভূমিকা ,শুরু … না এইগুলো নাম হয় নাকি ? কেমন বাবা মা এই নাম রাখে নাম হবার কথা ছিল আদ্রিতা ,মোমিতা এই টাইপের নাম । আবার তাকালাম মেয়েটার দিকে জানতে চাইলাম কি হয়েছে মেয়ের ? কতদিন ধরে জ্বর ? মেয়েটার বাবা কেমন করে তাকালেন আমার দিকে মনে হয় যেন মহা অপরাধ করে ফেলেছি । দেশে ছেলেধরা বেড়েছে তাই আমাকেও ছেলে ধরা মনে করেছে কি না কে জানে, সমস্যাটা মেয়ের বাবার না সমস্যাটা ছেলেধরার । কি আর করা আচ্ছা ছেলেধরা নিয়ে একটা কবিতা লিখলে কেমন হয় …

ছেলেধরা ছেলেধরা ছেলে তুমি ধর

শুধু শুধু কেন তুমি এই কাজটি কর ?

ভাল অনেক কাজ আছে সেটাকি তুমি জান

মিছে এইসব কাছ ছেড়ে ভাল কাজ কর ।


ধুর কি কবিতা লিখলাম কবিতার জাতও হয় নাই । না আমাকে দিয়ে কবিতা হবে না অন্য কিছু লিখতে হবে কিন্তু কি লিখব আমি তো আর কিছুই পারি না । কবিতা লিখতে গেলেই অন্য কিছু মাথায় আসে


আমি লিখব কবিতা ,

মাথায় ঘুরে ববিতা ।

হা হা হা পাগলের কবিতা । সূচনা মেয়েটির সিরিয়াল দেখলাম ৬০ কিন্তু মেয়েটির গায়ে অনেক জ্বর আমি মেয়েটির বাবাকে বললাম আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনি আমার সিরিয়ালে যেতে পারেন, এই কথা বলার পর ভদ্রলোক কি যেন ভাবলেন তারপর সাই দিলেন ঠিক আছে ; কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেন না মনে হয় ছেলেধরার ভয়টা গেল না এখনো । অনেক অপেক্ষার পর ৬০ নম্বর সিরিয়ালে ডাক্তারের কাছে যাবার সুযোগ হয়েছে ,সুযোগ না বলে মহা সৌভাগ্য বলা চলে ।

সূচনা মেয়েটি আমার সিরিয়ালে গিয়েছিল যাবার সময় মেয়েটির বাবা বলে গেলেন আল্লাহ তোমার ভাল করুক ,আমার একটু কাজ ছিল তোমার জন্য কিছুটা সময় আগে যেতে পারলাম তোমাকে ধন্যবাদ । আমি মুখে কিছু বলিনি কারন আমার সময় ভাল কাটছিল রোগীদের সাথে । যা হোক ডাক্তারের কাছে গেলাম আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলেন ,মনে হয় যেন কোন সমস্যাই নেই ঐ হাসিতে সব রোগ ভাল হয়ে যাবে । ডাক্তারের বয়স ৪০ হবে নাকের ডগায় একটা চশমা । ডাক্তার মনে হয় চশমা ছাড়া চলতে পারে না । রিপোর্ট হাতে নিলেন ডাক্তার বললেন কেমন যাচ্ছে সুদর্শন যুবক । আমি বললাম প্রকৃতি যেমন নিচ্ছে আমার কথা শুনে একটু আড় চোখে তাকালেন মনে হয় বুঝতে পারেন নাই ঠিক করে; আমি ই সহজ করে দিলাম "আজকের আকাশের মন ভাল নেই বৃষ্টি হচ্ছে" তাই "আমার ও মন ভাল নেই ,আকাশের মন খারাপ তাই আমারো খারাপ । মুচকি হাসেন ডাক্তার লেখালেখি করেন বুঝি ? উত্তর দেই না তেমন না নিজের লিখা নিজেই পড়ি আবার নিজেই হাসি । রিপোর্ট গুলো দেখে ডাক্তারের মুখটা চুপশে গেল ।

আমার দিকে তাকালেন বললেন

গতকাল ঘুমিয়েছেন ?

-বললাম না ।

উনি প্রশ্ন করার আগেই বললাম পারিনি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি ।


আবার আমার দিকে দেখলেন বললেন আপানর অভিবাবক কেউ আছেন উনার সাথে আমার কথা বলতে হবে । আমি বললাম কেন ? উনি বললেন একটু দরকার আছে আমি বললাম রিপোটে কি খারাপ কিছু এসেছে উনি এড়িয়ে গেলেন কথাটা আমি বললাম ঢাকায় আমি একা থাকি অভিবাবক ঢাকার বাহিরে থাকেন । ডাক্তার বললেন কেউ সাথে থাকলে ভাল হত , শেষে বললেন আপনার কঠিন অসুখ হয়েছে আপনি বড়জোর ৬ মাস বাচতে পারবেন আপনার কিডনির অবস্থা খারাপ কথাটা ডাক্তারের মুখ থেকে শুনার পর আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম, কিন্তু বুঝতে দিলাম না হাসি মুখে বললাম এখন কি করতে হবে ? ডাক্তার বললেন কিছু ঔষধ দিচ্ছি এইগুলো চালিয়ে যান, তারপরও আপনি আবার ১ মাস পরে আসেন । আমাকে বললেন খারাপ লাগছে না আপনি আর কিছু দিন বাচতে পারবেন ? আমি বললাম না । ডাক্তার জানতে চাইলেন কেন ?


আমি বললাম আমি দুনিয়াতে সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যাক্তি আমি না থাকলেও কারো কিছুর হবে না , কোন সমস্যা নেই । ডাক্তার যেন হতাশ হয়ে গেলেন বলললেন বাড়িতে চলে যান পরিবারের সাথে থাকুন শেষ সময়টা ভাল কাটবে । আমি কোন কিছু বললাম না ,বের হয়ে গেলাম ডাক্তার এর কাছ থেকে ।

বাহিরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে ,মনে হয় আমার শোকে বৃষ্টি ও কাদছে । চোখে দেখলাম দু ফোটা জল আমি নিজেকেই প্রশ্ন করি আমি কাদছি কেন ? আমার জন্য তো পৃথিবীর কোন কিছু আটকে থাকবে না , আমার তো কেউ নেই তাহলে আমি কাদছি কেন ? নিজেই জানি না । কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না ,হয়ত তেমন কিছু হবে,উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলাম না । বাহিরে বের হয়ে দেখলাম - তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে মনে মনে ভাবলাম প্রকৃতিও বুঝি আমার দুখে দুখি তাইত আমার চোখের জল আর বৃষ্টির জল এক হয়ে গেছে ,আজ ছাতা ছাড়াই চলতে থাকলাম কি আর হবে এক দিন বৃষ্টিতে ভিজলে ? না হয় জ্বর কাশি হবে কি আর হবে বাচব আর কয়দিন ।

লেখক : আ‌ব্দুল্লাহ আল মামুন(একজন সাধক কবি)

No comments:

Post a Comment