Responsive Ads Here

20 January 2012

একটি নষ্ট রম্য

ঢাকাভংগের পর দেবার বাংলায় আগমন এবং ডেবদ্যাশের অজানা উপাখ্যান !! (একটি নষ্ট রম্য) [নিজ দায়িত্বে পড়বেন :p ]

ছোটদেবা:-
শরৎবাবু দেবারে মারিয়া ফেলিয়াও শান্তি পাইলেন কই, দেববাবু তাহার বংশ রাখিলেন চন্দ্রমুখীতে, বর্তমানে তাহার প্রোপৌত্র বিলেত হইতে বাংলাদেশ বিমানের পালকিতে চড়িয়া বাংলায় ফিরিল ব্যারিস্টারি কমপ্লিট না করিয়াই! হিথ্রো হইতে ঢাকা আসিবার পথে বারংবার ঝাকুনিতে ওষ্ঠাগত প্রাণ লইয়া ছোটদেবার জীবনে পালকিতে ওঠার সাধ পূরণ হইল বলিয়া ঈশ্বরের নাম জপিয়া ঢোক গিলিল, পালকি নামটি সার্থকই হইয়াছে বটে !! পালকি হইতে ঢাকা শহরে নামিয়াই অবাক নয়নে পর্যবেক্ষণ করিল যে এইখানে সব দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া আছে। দক্ষিণ এবং উত্তরে বিভক্ত বিমামবন্দরের দক্ষিন ভাগ দিয়া বাহির হওয়াকেই দেব প্রোপৌত্র সমিচীন বলিয়া মনে করিল। শত হইলেও দক্ষিণ বাহুর একটা মর্যাদা রইয়াছে প্রেমের ক্ষেত্রে। প্রেমের মরা দেবদাসের বংশধরের দক্ষিন ছাড়িয়া পুব-পশ্চিমে যাওয়া মানায় না!!

ছোটদেবা দক্ষিণ ঢাকা বিমান বন্দর হই্তে বাহির হইয়া একটি ট্যাক্সি লইয়া বুড়িগঙ্গা অভিমুখে যাত্রা করিল। বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী মিটফোর্ড বলিয়া স্থানে তাহার ছোটদাদীর বাড়িতে বেড়াতেই তাহার বাংলাদেশে আসা। ঝা চকচকে উত্তর ঢাকা দেখিয়া ছোটদেবা মনে মনে খুশিই হইল বলা যায়, কিন্তু উত্তর ঢাকা হইতে দক্ষিণ ঢাকায় প্রবেশ করিতেই তাহার খুশি কোন দূর-দিগন্তে মিলাইয়া গেল, তাহা সে ঠাহরই করিবার পারিল না। দূর্গম পথে ঝাকুনিতে তাহার আবার সেই পালকির কথা মনে হইতে লাগিল । হঠাৎ ঠান্ডা সুশীতল হাওয়ার পরশ পাইয়া চক্ষু মেলিয়াই রাস্তার পাশে এক উদ্যান দেখিতে পাইল। সেইখানে সারি সারি প্রেমিক যুগল প্রেমলীলা সাঙ্গ করিতে ব্যাতিব্যাস্ত রইয়াছে। ফেসবুকে এক বাংলা গ্রুপ দেখিয়াছিল বলিয়া সে মনে করিতে পরিল -

আমরা বিপ্লবী ডিজুশ, আমরা চে'র দল একতাই মোদের বল !!

এইখানেও অনেকরেই জামায় চে'র ছবি ধারণ করিতে দেখিয়া ছোটদেবা মনে মনে বলিল একতাই ওদের বল! প্রেমলীলা সাঙ্গে অন্তত ওদের একতা মানুষরে কহিয়া বেড়াবার মতই। দেহপ্রেমে এরাই বিপ্লব ঘটাইবে, ধন্য ওরে ডিজুশ চে'র দল !!
এরই মধ্যে ছোটদেবা উত্তর পুরান ঢাকায় প্রবেশ করিবা মাত্রই জ্যাম কাহাকে বলে এবং তাহা কত প্রকার, হাড়ে হাড়ে টের পাইল। সেই সাথে পাশের এক রিক্সাওয়ালার মোবাইল হইতে ভাসিয়া আসা গানে তাহার বিরক্তি চরমে গিয়া পৌছাইল। এইখানে বুঝিতে হইবে, শহর-বাংলার রিক্সাওয়ালাদের প্রানের প্রিয়া নিভা রহমান উত্তর ঢাকার বাসিন্দা হইলেও দক্ষিণ ঢাকার রিক্সাওয়ালাগুলাও হিংসা ভুলিয়া তাহার সুমুধুর সংগীতরে আপন করিয়া লইয়াছে। ঢাকা প্রবেশে হেন আপ্যায়ন পাইয়া ছোটদেবা নিজেরে বড়ই ভাগ্যবান মনে করিল। শত হইলেও এরাই দেবদাসের প্রেমের মান দিয়াছে, এদের মানে আজ সেও মুগ্ধ!

ফিরে দেখা:-
গর্ভবতী চন্দ্রমুখী যখন চুনিলাল মারফত দেবদাসরে পত্র পাঠাইয়াছিলেন, দেবা তখন মাদিরা পানে মগ্ন হইয়া ধুতি সামলাইতেছিলেন। পত্রপাঠে নিজেরে আর সংযত রাখিতে না পারিয়া শেষ মুহূর্তে ধুতিটি ছাড়িয়াই দিলেন। ভাগ্যিস চুনিবাবু বুদ্ধি করিয়া দেববাবুরে পূর্বেই একখানা ইলাস্টিকযুক্ত বিলাতি নিম্নবস্ত্র পরিধান করাইয়াছিলেন বলিয়া ভরা মহফিলে দেববাবুর চূড়ান্ত অপমান হওয়া হইতে রক্ষা পাইল। শত হইলেও জমিদার নারায়ণ মুখ্যার্জীর পুত্র বলিয়া কথা!! যাহা হোক এইবার মোদ্দা কথায় আসি। পত্রপাঠ করিয়া দেববাবু আরেক ঢোক মাদিরা গিলিয়া চুনিলালরে ডাকিয়া কহিল যে তিনি চন্দ্রমুখীর সহিত শেষবারের মত দেখা করিতে ইচ্ছুক। জীবনে যদি কোন ভাল কর্ম সম্পাদন হইয়া থাকে তাহলে সেইটাতে চন্দ্রার অবদানই বেশি। চুনিলাল যথা আজ্ঞা বলিয়া ট্রেনযোগে চন্দ্রার হুরমহলে দেববাবুরে পৌছাইয়া দিল।

চুনিলাল:-
এইদিকে খবরখানা কোনভাবে পারুর কান পর্যন্ত পৌছাইল।শত হলেও পারু দেবার প্রেমিক সেই জন্ম হইতেই। যে কর্ম পারু সাধন করিতে পারিল না, সেইটা চন্দ্রার দ্বারা সম্পাদন কিভাবে হইল এইটা ভাবিয়াই তাহার দিবানিশি মস্তিষ্ক অগ্নিদহিত হইতে লাগিল !! শেষে কড়া ভাষায় একখান পত্র লিখিয়া তাহার প্রিয় কবুতরের ঠ্যাংএ বাধিয়া চন্দ্রার পানে উড়াইয়া দিল। ইহাতে পারুর ক্রোধ কিছুটা কমিলেও পুরোটা সংযত হইল না। অবশ্য চন্দ্রা পত্র পড়িয়াই তাহা কুটি কুটি করিয়া পানিতে ভাসাইয়া পারুর কবুতরটি ধরিয়া উনুনে চড়াইয়া দিল। কবুতরের মাংস দেবার খুব পছন্দ। তবে ব্যাপারখানা হইল শুধু, এইটা যে পারুর প্রিয় কবুতরের মাংস তাহাই গোপন করিতে হইবে আর কি! দেববাবু অবশ্য সে কবুতর খাইয়া তৃপ্তির ঢেকুর তুলিতে তুলিতে কহিল যে সে নিজে ব্যারিস্টারি পাশ করিতে না পারিলেও তাহার পুত্রকে যেন চন্দ্রা যেকোনভাবেই হোক ব্যারিস্টারি পাশ করায়। পার্বতীরে না পাইলে বাচিতে পারিবে না বলিয়া দেবা চন্দ্রার হুরমহল হইতে বিদায় নিল।

দেববাবুর প্রোপৌত্র তাহার দাদী মারফত জানিতে পারিয়াছিল যে ইহার কিছুকাল পরই পারুর বাড়ির সন্মুখে দেবার মৃত্যু সংবাদ তাহার কানে আসিয়াছিল। দেশে থাকিয়া দেবার স্মৃতি নিয়া বাচিবার হইতে সে দেবারে দেওয়া কথামত বিলাত গমনেই শান্তি বোধ করিল। অবশ্য দেববাবুর এক বন্ধুর বাড়িতেই তাহার বাসের জায়গা জুটিয়াছিল। দেববাবু নাকি তাহার সেই বন্ধুরে মরিবার পূর্বেই পত্র মারফত বলিয়া গিয়াছিলেন, চন্দ্রা আর তাহার সন্তানরে রক্ষন করিতে। কথায় আছে, "এক নারীর মন, সাত রাজার ধন"! চন্দ্রাতে দেবার সেই বন্ধুর মন ভরিয়াছিল বলিয়াই বিলাতে ভালই চলিয়া যাচ্ছিল তাহাদের। তবে দেববাবুর পুত্র কিংবা তাহার পুত্র কেউই ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভে সক্ষম হইল না বলিয়া ব্যাবসা করিয়াই চলিতে হইল। অবশেষে ছোটদেবা তাহার প্রপিতামোহ দেবদাসের প্রতি বাংলার মানুষের ভালবাসার কথা জানিতে পারিয়া বাংলাদেশে আসিবার মন করিল।

বাংলাদেশে আসিয়া ঘুরিয়া ফিরিয়া ছোটদেবার দিনানিপাত হইতেছিল ভাল-মন্দ মিলায়েই। অবশেষে সে বুঝিতে পারিল, এইখানে দেবদাসরে কেহই মন দিয়া ভালবাসে না। বরং ডিজুস ডেবদ্যাশ নামক নব্য জেনারেশনের ছেলেগুলা একের পর এক প্রেম করিয়া ছ্যাকা না খাইয়াই নিজেদের ডেবদ্যাশ বলিয়া চুল-গোফ-দাড়ি না ছাটিয়া সং সাজিয়া ঢং দেখাইয়া ঘুরিয়া বেড়ায়। এদিকে দেবদাসের প্রপৌত্র বলিয়া ছোটদেবার বেশ বান্ধবী জুটিয়া গেল অল্প কয়েকদিনেই। বাংগালী মেয়ে বলিয়া কথা। এদের মধ্য হইতে কাউরে জীবন সংগিনী করিবে বলিয়া ঠিক করিয়া ছোটদেবা তাহার দাদীরে জানাইয়া দিল। ধুমধামে ছোটদেবার বিবাহ হইবার কিছুকাল পরই ছোটদেবা বুঝিতে পারিল, এই নারী রূপ-গহনা-পয়সা ছাড়া কিছুই বুঝিতে পারে না। ফান্দে পড়া বগার মতনই ছোটদেবা কান্দিতে লাগিল আর ভাবিল এই নারীরে যদি কিছুকাল পয়সা আর গহনা সমেত অন্ধকার কক্ষে আয়না বিহীন বন্দিনী করিয়া রাখিতে পারিত তাহাতে অন্তত মনে শান্তি জুটিত। কারণ, নারীর জীবনে আয়না ছাড়া একগাদা গহনা দিয়া বন্দি করিয়া রাখিলে তাহার মরণ নিশ্চিৎ.....................তন্মধ্যেই দূর হইতে ছোটদেবা বৌয়ের চিল্লানী শুনতে পাইয়া সকল ভাবনা ডাস্টবিনে ফালাইয়া পত্নীপানে দৌড় লাগাইল। কথায় আছে, রান্নার স্বাদ নারীতে আর পুরুষের জীবন পত্নীতে!!

অ:ট: পোষ্ট টি আমার একজন প্রিয় ব্লগার জুন আপু কে উৎসর্গ করলাম !!

বি:দ্র: সকল চরিত্রই কাল্পনিক এবং কারও সহিত মিলিয়া গলেলে কাকতাল বলিয়া গণ্য হইবে !!

লিখেছেন-ইশতিয়াক আহমেদ

No comments:

Post a Comment