১ফেব্রুয়ারি,২০১০
কয়টা লাফ দেব? নাকি একবারে উড়াল দেব?? উফফ পুরা পাগল হয়ে যাব। না চাইতেই এত খুশি!! আগে যাই ২রাকাত নফল নামাজ পরে আসি,আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় আসি। লাফা লাফি পরে করা যাবে।
৮ ফেব্রুয়ারি,২০১০
আজ আমার বিয়ে ! আজ সত্যিই আমার বিয়ে!! তাও কিনা সেই মানুষটার সাথে যার প্রেমে সেই বাল্য কাল থেকে হাবুডুবু খাচ্ছি। আল্লাহ, রক্ষা কর, খুশিতে অজ্ঞান না হয়ে যাই। ইসস নায়িকারা,নকল কান্না করার জন্য চোখে যা লাগায়,ওইটা পাইলে ভাল হত। ভালবাসার মানুষের কাছে যাওয়ার খুশিতে যে অবস্থা আমার , মনে হয় না আম্মু আব্বুকে বিদায় দেওয়ার সময় কান্নাকাটি করতে পারব। মানুষ না জানি কি বাহায়া ভাব্বে আমায়। ভাবলে ভাবুক। আমার কিছু যায় আসেনা। আমি যে যাচ্ছি আমার ভালবাসার কাছে!
এতক্ষণ ধরে ভালবাসার মানুষ, ভালবাসার মানুষ করলাম, অথচ তার পরিচয়ই দেওয়া হল না। সরি সরি বুঝেনই তো আমি আপাতত আমিতে নেই।
যাই হোক আমার ভালবাসার মানুষটার নাম রুদ্র। সুন্দর না নাম টা? শুধু নামই না, ওর সব কিছু সুন্দর, ওর কথা বলা, ওর চোখ ,ওর হাসি, ওর ...থাক আর না, আরও বলতে গেলে অনেক টাইম লাগবে। আর বলা তো যায় না, ওর বর্ণনা শুনে আবার দেখা গেল, পাঠকদের মধ্যের কোন মেয়ে ওর প্রেমে পরে গেল। থাক বাবা দরকার নাই। এমনি কাজিনদের জন্য ওকে নিয়ে অনেক টেনশনে দিন কাটছে আমার। আর রিস্ক না।
রুদ্র আমার বাবার খুব ভাল বন্ধুর ছেলে। তাই অনেক আগে থেকে চিনি। আমার থেকে ৩ বছরের বড়। আমাকে ছোটো বেলায় পিচ্চি বলে ডাকতো । তখন তো শুনতে ভালই লাগত। পরে রাগ হত। খুব বলতে ইচ্ছা করত। “আমি পিচ্চি না। আমি অনেক বড়। অনেক বড় না হলে কি ভাবে এত ভালবাসলাম তোমায়!!” কিন্তু বলা লাগেনি। আমার কিছু বলার আগেই আমাদের বাবারা আমাদের বিয়ে কথা ঠিক করে ফেলল। ভালবাসার কথা অব্যাক্তই থেকে গেল। তাতে কি। এখনও তো সারা জীবন আছে বলার জন্য। আচ্ছা রুদ্র কেন বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে আমাকে একবারও ফোন দিল না কেন? হয়ত সেও ভাবতেছে সারা জীবন এখনও পরে আছে !!
৮ফেব্রুয়ারি,২০১১
আজ আমদের বিয়ের ১বছর পূর্ণও হল। বিয়ে পর সব বদলে গেল। আমার মা,বাবা, কাজিনরা, ফ্রেন্ডরা আমার এই বদলানো দেখে কত যে টিপন্নি কাটল তার হিসেব নাই।বলে রুদ্রকে পেয়ে সবাই কে ভুলে গেছি। কি ভাবে বলি, সবাইকে ভুলিনি। নিজেকে ভুলেছি।
কি ভাবে বলি বিয়ের রাতে রুদ্র আমার হাতে তার ডায়েরিটা দিয়ে পড়তে বলল। আমার যে তখন কি খুশি লাগতেছিল। ভেবে ছিলাম আমার ডায়েরীর সব পেজ ভরা যেমন শুধু রুদ্র,ঠিক তেমনি ওর ডায়েরীর সব পেজে শুধু আমি। আরও খুশি লাগলো এটা ভেবে যে, আমিও আমার ডায়েরীটা সাথে নিয়ে আসেছি রুদ্র কে দেখানোর জন্য। ইস কত মনের মিল আমাদের। আন্দন্দে চোখে পানি চলে আসল। আর কয়েক মুহূর্তে আন্দন্দের অশ্রু দুঃখ অশ্রুতে পরিনত হল। আমার ডায়েরীর মত রুদ্রর ডায়েরী ও সব পেজে ভালবাসার কথা। পার্থক্য শুধু আমার ডায়েরীতে রুদ্র, আর রুদ্রের ডায়েরীতে অন্য একজন। পুরো ডায়েরী পরার মত মনোবল ছিল না। যা বুঝলাম তার মানে এই দাড়ায়, আমি যেমন তাকে নিয়ে নিয়ে হাজার স্বপ্ন সাজিয়ে ছিলাম সে ও সাজিয়েছে,শুধু সেই স্বপ্নের মানুষটা আমি না। অন্য কেউ।
এই এক বছরে সত্যিই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। হাসি নামের কসমেটিক পরে থাকতে থাকতে আমি বিরক্ত। লুকিয়ে লুকিয়ে কানতে কানতে ক্লান্ত হয়েছি। একটু ভালবাসার খোজে বার বার হারিয়েছি অজানা জগতে। একই ঘরে থেকে দুজনের মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব দেখেছি।যত বার ভেবেছি আমার ভালবাসার জোরে ওর না পাওয়া ভালবাসা ভুলিয়ে দেব। ততো বারই ও আমাকে প্রমান করে দিয়েছি আমার ভালবাসার থেকে তাদের ভালবাসার গভীরত্ব হাজার গুন বেশি।
আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর জন্য অনুষ্ঠান করা হবে। রুদ্র অনেক আগ্রহ নিয়ে সব কাজ করছে।হয়ত পরিবারের কথা ভেবে। এই পরিবারের কথা ভেবেই একটা বছর সুখি দম্পত্তি হওয়ার নাটক। আজ তাই। কিন্তু আজ একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে। আমার কাজিন গুলো আমাকে জোর করে বউ সাজাচ্ছে। কত হাসা হাসি, কত ঠাট্টা ! এত কোলাহলের মাঝে আমার কষ্ট গুলোর আর্তনাদ কেউ শুনে পাচ্ছে না। আমি যে আর এই অপরাধবোধ সহ্য করতে পারছি না। রুদ্র যে আমাকে গত ১বছরে খুব ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, আমাদের এই কষ্টে জন্য আমি একাই দায়ী। তার বাবার অসুস্থতার কারনে তার বিয়েতে রাজি হওয়ায় সে আজ উদার। অন্যদিকে আর দশটা সাধারন মেয়ের মত ভালবাসার স্বপ্নে ঘর বাধায় আমি আজ অপরাধী। আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে, যাও রুদ্র, তোমার ভালবাসার কাছে ফিরে যাও, তোমার উদারতা যে আমার কাছে আজ বিষের মত লাগে। যেই তোমাকে শুধু ভালবাসার রঙে ভেবেছি, সেই তোমার চোখের অবহেলা যে আর সহ্য করতে পারছি না আমি।
চোখের পানি টাও আমায় আজ চায় না, তাইতো বার বার চেয়েও আটকে রাখতে পারছি না। কাজলের দোষ দিয়ে মুখে আবার একটা হাসি টানলাম। শুধু আজকের জন্যই এই অভিনয়।
বাসা ফাকা হতে হতে রাত ১২.৩০টা বেজে গেলো, রুদ্র গেছে ওর কিছু কাজিনকে বাসায় পৌঁছে দিতে। আমি এখন একা, ঝটপট রুদ্রকে একটা চিঠি লিখে চলে যাব আমি। ড্রাইভার কে দিয়ে সিলেটের একটা টিকিট করে রেখেছি আগেই। আজ রাতটা আমার বান্ধবী মিতুর বাসায় কাটিয়ে কাল সকালে সিলেট চলে যাব,মিতুর বর বলেছে একটা চাকরি ঠিক করে দিতে পারবে। মিতুই একটা মানুষ যে সব জানে।তাই তো বিনা স্বার্থে এত সাহায্য করছে আমার।
কিছু কাপড় নিতে রুমে যেয়ে দেখি,পুর রুম ঠিক আমাদের বাসর রাতের মত করে সাজানো। কিছুটা অবাক হলেও বুঝে ফেললাম সব আমার কাজিনদের কাজ। নিজের অজান্তে নিজের উপর আজ তিরস্কারের হাসি চলে আসল।
কাপড় গুছাতে যেয়ে খেয়াল করলাম বিছানায় একটা কাগজ রাখা। এটাও নিশ্চয়ই ওদের কাজ। অবজ্ঞা ভরে কাগজটা খুলে দেখলাম, রুদ্রের হাতের লেখা।
“একটা নতুন সূচনা করতে চাই,তোমায় নিয়ে।একটা নতুন ভালবাসাময় স্বপ্নকে বাস্তবের নাম দিতে চাই,তোমাকে ঘিরে।আজ আমি হাত বারিয়ে আছি তোমার পানে।যদি সুযোগ দেও হাত ধরার, তো কথা দিলাম কোন দিন আর ছাড়বো না তোমার হাত। আর যদি হাত ফিরিয়ে নেও, তো অপেক্ষায় থাকব যেমন,তুমি ছিলে।
-রুদ্র”
চিঠি শেষ করতে না করতেই পিছনে ফিরে দেখি রুদ্র। ধুর কাজলটা আসলেই খারাপ।এইটা কোন কান্নার সময় নাকি, এ যে শুধু ভালবাসার আর স্বপ্ন দেখার সময়। তবে একদিক থেকে ভালই হল। অশ্রু গুলো সব একবারে বয়ে যাক। এদের যে আর কোন জায়গা নেই আমার চোখে, এখন শুধু রুদ্র ,আমার রুদ্র।
লিখেছেন-Nijhum Rahman
No comments:
Post a Comment