আকাবাকা পাহাড়ী রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে একটা বাস ।
অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য চারপাশে । বিধাতা যেনো নিজ হাতে বানিয়েছেন জায়গাটা ।
মুগ্ধ হয়ে জানালা দিয়ে অপূর্ব সুন্দর দৃশ্যগুলো দেখছে সানি ।
চোখ ফিরিয়ে জানালার পাশের সিটে বসে থাকা সায়মার দিকে ।
এখনো ঘুমিয়ে আছে সায়মা । অবশ্য ঘুমানোটাই স্বাভাবিক । মাত্রই ভোর হয়েছে । চারিদিকে সবেমাত্র আলো ফুটতে শুরু করেছে ।
জানালার কাচের মধ্যে দিয়ে একফালি সূর্যের আলো এসে পরছে সায়মার মুখের একপাশে ।
অপূর্ব সুন্দর লাগছে সায়মাকে । ছয় মাস হলো তাদের বিয়েটা হয়েছে ।
সানি একটু গম্ভীর আর শান্ত স্বভাবের । আর্মি অফিসার সে । ছয় মাস আগে জাতিসংঘের একটা মিশন শেষ করে বাংলাদেশে ফেরার সাথে সাথেই বাবা মা চাপাচাপি করতে থাকে বিয়ের জন্য ।
বাবা-মায়ের কথা কখনই অমান্য করেনি সানি । তাই এ ব্যাপারেও তার কোন আপত্তি ছিলো না । এমনকি বাবা-মায়ের পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত ছিলো সে ।
তার বিশ্বাস আল্লাহতালা হয়তো তার ভাগ্যে অনেক ভালো কিছু রেখেছিলেন । এবং তারই পরিপেক্ষিতে হয়তো সায়মার মতো মিষ্টি একটা মেয়েকে সে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে ।
প্রথম যেদিন সায়মাকে দেখতে গিয়েছিলো সে , সায়মা একহাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে তার সামনে আসে । ঘোমটার আড়ালে সানির দিকে চেয়ে মুচকি হাসছিলো সে ।
মেয়েটা অদ্ভুত সুন্দর করে হাসতে । হাসলে গালে টোল পরে তার । তখন আরো বেশি সুন্দর লাগে তাকে ।
প্রথম দেখাতেই সায়মাকে অসম্ভব ভাল লাগে সায়েমের । বাবা-মাকে জানিয়ে দিতে তাই দেরি করে নি যে এই মেয়েকেই বিয়ে করবে সে ।
ছয় মাস আগের স্মৃতিগুলো মনে পরাতে একটু মুচকি হাসি খেলা করে গেলো সানির ঠোটে ।
সকালের মিষ্টি রোদ এখন সায়মার কপাল আর ডানচোখের উপর পরছে । সায়মা একটু নড়েচড়ে উঠলো ।
সানি আস্তে করে ডাক দিলো তাকে "সায়মা । উঠো । দেখো সকাল হয়ে গেছে ।"
সানির কন্ঠ শুনে সায়মা চোখ মিট মিট করে উঠলো । আড়মোড়া ভাঙ্গলো । ঘুমজড়ানো চোখে সানির দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাসলো ।
সানি মৃদু কন্ঠে বলল "good morning . . টেমা বেগম ।"
সায়মা হাসি মুখে উত্তর দিলো "same to u. . টেমি সাহেব ।"
সায়মার মুখের উপর এখনো খেলা করছে মিষ্টি রোদ । বাসের জানালাটা খুলে দিলো সানি ।
সায়মাকে ইশারা করলো বাইরের অপূর্ব দৃশ্যটুকু দেখার জন্য । সায়মা মুখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো অপূর্ব সুন্দর দৃশ্যটুকু । তার চোখে তখন অপার মুগ্ধতা ।
বাসটা এখন বান্দরবানের পাহাড়ি রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে । ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করেই বান্দরবান রওনা দিয়ে সানি আর সায়মা ।
সায়মাকে নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করার ইচ্ছাটা অনেক দিনের । তাই যখন মেজর শাহরিয়ার তাকে বান্দরবান যাওয়ার জন্য আমন্ত্রন করেছিলো , তখন আর মানা করেনি ।
মিশন থেকে ফিরে প্রায় ৬ মাস পর একটা লম্বা ছুটি পেয়েছে সে ।
সায়মাকে নিয়ে তাই বান্দরবান যাওয়ার সিদ্ধান্তটা নিতে বেশি দেরি করেনি সে ।
শাহরিয়ার , সানির বাল্যকালের বন্ধু । ক্যাডেট এ একসাথে পড়ার পর একই সাথে BMA তে ঢুকে তারা । একই সাথে ARMY তে জয়েন করে ।
শাহারিয়ার বর্তমানে বান্দরবান আর্মি বেইস ক্যার্ম্পের ইনচার্জ । নিরাপত্তা নিয়ে তাই তেমন কোন চিন্তা নেই সানির ।
(২)
বাসটা থামলো । বাস থেকে নেমে আড়মোড়া ভাঙ্গলো সানি । তারপর একহাতে লাগেজ আর এক হাতে সায়মার হাত ধরে হাটতে থাকলো সে ।
"আমরা কোথায় যাচ্ছি ?" জিজ্ঞেস করলো সায়মা ।
"আপাতত চান্দের গাড়ির খোঁজে । চান্দের গাড়িতে করেই গন্তব্যে পৌছানো যাবে ।" বলল সানি ।
"হাঃ হাঃ ! ! চান্দের গাড়ি ! ! অদ্ভুত নাম ।" হাসতে হাসতে বলল সায়মা ।
মুচকি হেসে সানি বলল "হমম । এখানকার বেশিরভাগ জায়গা অথবা জিনিসের নাম এমনই । স্থানীয় আদিবাসীদের দেয়া নাম । তাই একটু হাস্যকর শোনায় ।"
চান্দের গাড়িতে গাদাগাদি অবস্থা । ধাক্কাধাক্কি চলছে । সায়মাকে কোনমতে এককোনে বসিয়ে তার পাশে ধপ্ করে বসে বসে গেলো সানি ।
চলতে থাকলো গাড়িটা । এটা চিম্বুক রেঞ্জের বুক চিরে ওয়াই জংশন হয়ে যাবে গ্যারিসন নামে এক স্থানে । ওখানে আর্মি ক্যাম্পে নাম-ঠিকানা (নিরাপত্তার খাতিরে) দিয়ে সামনেই সদরঘাট বলে এক স্থানে সাঙ্গু নদী পার হতে হবে ।
সানি যতদূর জানতে পেরেছে নদীটা দিয়ে গ্রীষ্মকালে গাড়ি যেতে পারে । তবে বর্ষাকালে নৌকা অথবা হেটে পার হতে হয় ।
বর্ষাকাল মাত্রই শেষ হয়েছে । তাই এখন নদীতে পানি থাকবে । নদীটা পেরিয়ে একটু দূরে গেলেই একটা আর্মি ক্যাম্প । সেখানেই থাকবে শাহারিয়ার ।
এমনটাই চিঠি লিখে জানিয়েছিলো শাহারিয়ার । বান্দরবানে মোবাইলের নেটওর্য়াক নেই । তাই চিঠিই ভরষা ।
সায়মার দিকে তাকালো সানি । মেয়েটার মুখে ক্লান্তির ছাপ । এতোদূর এর আগে কখনো জার্নি করেনি সে । আবার ঘুমিয়ে পরেছে সে ।
ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে মায়া লাগলো সানির । পরম মমতায় সায়মার মাথাটা বুকের কাছে চেপে ধরলো সানি । যাতে গাড়ির ঝাকি লেগে মাথায় বাড়ি না খায় সে ।
---
চান্দের গাড়ি সদরঘাটে পৌছে গেলো । সবাই তাড়াহুড়া করে নামতে লাগলো । সানি আস্তে করে ডাক দিলো সায়মাকে ।
সায়মা উঠলো । লজ্জ্বা পেলো আবার ঘুমিয়ে পরাতে ।
সানি ,সায়মার মনের কথা বুঝে একটু মুচকি হাসলো ।
সদরঘাটে কিছু নৌকা দেখা গেলো । নৌকা না বলে সেগুলোকে ডিঙ্গি বলাটাই ভালো । নদীতে স্রোত তেমন বেশি না । স্থানীয় লোকজন হেটেই পার হতে লাগলো নদী ।
একটা ডিঙ্গি ভাড়া করলো সানি । ডিঙ্গির মাঝি একজন মুরং আদিবাসী । বাংলা তেমন ভালো বলতে পারে না । ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা শুনে সানি বুঝতে পারলো নদী পার হবার পর এক দেড় কিঃমিঃ হাটলেই রুমা বাজারে পৌছানো যাবে ।
সেখানে আর্মির আরেকটা ক্যাম্প আছে । ঐ ক্যাম্পে নাম ঠিকানা দিতে আবার জমা দিতে হবে ।
ডিঙ্গিটা পাড়ে ভিড়লো । সায়মাকে হাত ধরে নৌকা থেকে নামালো সানি । তারপর নৌকার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে হাটা ধরলো ।
বাজার সদরে পৌছাতে ১৫-২০ মিনিটের মতো লাগলো । স্থানীয় কিছু লোককে জিজ্ঞেস করতেই আর্মি ক্যাম্পটা দেখিয়ে দিলো ।
হাটতে হাটতে আর্মি ক্যাম্পের কাছে এগিয়ে গেলো । দূর থেকে দেখেই সানি বুঝলো শাহারিয়ার দাড়িয়ে আছে ।
শাহারিয়ারও সানিদেরকে দেখতে পেলো । হেটে আসতে লাগলো তাদের দিকে ।
কাছাকাছি এসে হাত নাড়লো সানিদের উদ্দেশ্যে ।
(চলবে)
লিখেছেনঃ আহনাফ সানভি
সংগ্রহে - লিমন
No comments:
Post a Comment