Responsive Ads Here

19 January 2012

জ্যান্ত ভুতের গল্প ( STORY 1 )

এই কাহিনীর সবকিছু বাস্তব। তাই চরিত্রগুলির নাম দিচ্ছি না।

গল্পের খাতিরে ধরে নিই স্বামীর নাম সুজন, আর স্ত্রীর নাম, বিলক্ষণ, সখী।

আমাদের এই সুজন সাহেবও শিক্ষক। তবে কোন স্কুলের নয়, শখের।

সুজন দম্পতি নিঃসন্তান তাই পরের ছেলেকে ঘরে ডেকে খাইয়ে-দায়য়ে পড়িয়ে আনন্দ পান সুজন।

বয়স যখন ষাটের কোঠায় তখনই একটা ভুল করে ফেললেন সুজন। নিকাহ করলেন এক বিধবাকে।

ছাত্ররা যারা তখন বেশ তরুন তারা বললো--এটা কি করলেন আপনি?

সুজন হাসিমুখে বললেন--ও তোমরা বুঝবে না, আমার হিসেবে ভুলচুক নাই।

দুই পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাতে গিয়ে সুজন সাহেবের অবস্থা কাহিল। বসত বাড়িটাও বিক্রি করে দিলেন।

ঠাঁই নিলেন পাশের এক পড়ো বাড়িতে।

বাড়িটির আঙিনায় কোন পাঁচিল নাই।

নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে সুজন তাঁর দুই প্রিয় ছাত্রকে তলব করলেন।

ছাত্ররা তখন তরুণ। তাদের উপর পড়ল পাহারার দায়িত্ব।

পাহারা বলতে সুজন মাস্টার স্বপরিবারে ঘুমাবেন কোঠাঘরে। ছাত্রদুটি ঘুমাবে নিচের ঘরে।

সন্ধ্যাবেলা ছাত্ররা হাজির হলে সুজন বললেন--

এই রইল একটা লাঠি, তারসাথে একটা হ্যারিকেন এবং এক বান্ডিল বিড়ি। উপরে আল্লাহ নিচে তোমরা আমি চললাম ঘুমাতে।

ছাত্ররা গুরুর আদেশ মেনে দু-একটা বিড়ি খেয়ে বাকী বিড়িগুলি বালিশের নিচে রেখে শুয়ে পড়তো।

ছাত্ররা যখন গভীর ঘুমে তখন সুজন মাস্টার ডাকাডাকি শুরু করতেন--

তোমরা উপরে এসো একবার। ছাত্ররা চোখ ডলতে-ডলতে হাজির হতো কোঠায়।
দেখতো সখী আর নতুনী দুজনেই কাঁদছেন। তারমানে এক পশলা ছাত্রী-পেটাই হয়ে গেছে।

ছাত্রদের দেখে সুজন মাস্টার বলতেন--
একটা বড় দড়ি নিয়ে এসো।

হুকুম তামিল হতো।
সুজন বললেন--এই যে দেখছো পাশাপাশি দুটো ঘর, তার একটাতে থাকে সখী আর একটাতে থাকে নতুনী। আর আমি থাকি
এই বারান্দায় একটা টপপোরের ভেতরে, ঠিক কিনা?

--জী স্যার।
--এখন তোমরা সখীর ঘর থেকে আমার টপপোরের দুরত্ব মাপো। তারপর নতুনীর ঘর থেকে টপপোরের দুরত্ব মাপো।

ছাত্ররা মাপজোক শুরু করলো। শেষও করলো।

সুজন বললেন--কি দেখলে?

--দুটো ঘরেরই দুরত্ব সমান।

--তারমানে কিনা, আমি আমার দুই স্ত্রীকেই সমান ভালবাসি। ঠিক কিনা?

--তা ঠিক।

--তোমরা ছাত্র হয়ে যা বুঝছো ওরা স্ত্রী হয়ে তা বোঝে না কেন?
বলেই সুজনের দুজন স্ত্রীর পিঠে শুরু করলেন ছড়ির প্রহার। আঘাতে জর্জরিত সখী আর নতুনী যখন লাফাচ্ছেন, তখন
সুজন বলে উঠলেন--নাচরে বাঁদর তুড়ুক-তুড়ুক।

সব অশান্তি মিটিয়ে ছাত্ররা যখন নিচে ফিরে এল তখন মাঝরাত অতিক্রান্ত।

প্রতিরাতেই চলে ওই ঘটনা-দুর্ঘটনা।

সকাল বেলা ছাত্র দুজন যখন বাড়ি ফেরে তখনও তাদের চোখে ঘুম লেগে থাকে। আরো একটি বিষয়ে তারা অবাক হয়।
সকালে উঠে তারা দেখে বালিশের নিচে একটাও বিড়ি নাই।

প্রতি রাতে বিড়ি গায়েব হয় কি করে, এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলো দুই বন্ধুতে। কোন সমাধান-সুত্র পাওয়া গেল না।

মাঝরাতে সুজন-মাস্টারের নাটক আর ভোররাতে বিড়ি গায়েব, এর মধ্যে নিশ্চয় কোন সমন্ধ আছে?

একদিন ভোরের দিকে একজন ছাত্র বুঝলো তার বালিশের নিচে একটা হাত ঢুকে গেল। ছাত্র তখন জ্বিন ভেবে দোয়া-দরুদ
পড়ছে।
হাতটা বালিশের নিচ থেকে বিড়ির বান্ডিল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

তখন ছাত্রটি তার পিছু নিলো।

সাদা কাপড় পরা এক ছায়ামুর্তি। যখন বুঝলো কেউ তাকে অনুসরণ করছে তখন সে মাথার খোলা চুল ঝাঁকিয়ে বিকট হেসে
উঠলো।
ভয়ে --ব্যা-ব্যা-ব্যা করে উঠলো ছাত্রটা।
সুজন-মাস্টারের ঘুম ঠিক সেই সময়ে ভেঙেছিল। তিনি ছুটে এসে মারলেন লাঠির বাড়ি সেই ছায়া মানবীর মাথায়। একঘায়ে
ধরাশায়ী।

হ্যারিকেনের আলোয় দেখা গেল, ছায়া-মানবী আর কেউ নয় পাশের বাড়ির রিফাই-বুড়ি।

সেই রাতে তাঁকে সুস্থ করতে আবার ছাত্র-দুজনকে ছুটতে হলো খাটিয়া কাঁধে।

এরপর আর বিড়ি চুরির ঘটনা ঘটেনি।

No comments:

Post a Comment