রায়হান
চেঁচিয়ে বললো, ভূত নেই, ভূত নেই, ভূত নেই।
জামিল বললো, ভূত নেই ভালো কথা। তুই ভূতে বিশ্বাস করিস না তা-ও ভালো। কিন্তু এত ভূতস্বরে চেঁচানোর মানে কী?
জগু মানে জগলুল আরো এক কাঠি বাড়িয়ে বললো, তোর ভূতস্বরে চেঁচানোই প্রমাণ করে ভূত আছে। কারণ অমন করে ভূতেরাই চেঁচায়। জগতে ভূতের কোনো কমতি নেই। ভূত নেই এ কথা কেউ আজ পর্যন্ত জোর দিয়ে বলতে পারেনি। মনে রাখিস।
রায়হান আগের চেয়ে জোরে চেঁচিয়ে বললো, ভূত আছে এ কথাও কেউ জোর দিয়ে বলতে পারেনি- এটাও মনে রাখিস।
জামিল বললো, তাহলে জেমস কার্টনি আর মাইকেল মিহানের কল্লা দুটো কী ছিল?
রায়হান অবাক হয়ে বললো, এরা আবার কারা?
জামিল বললো, এরা হচ্ছে এস এস ওয়াটারটাউন নামে একটি তেলবাহী জাহাজের শ্রমিক। মরে গিয়ে এরা ভূত হয়ে গিয়েছিল।
রায়হান বললো, ধ্যাৎ! কী সব আজে বাজে কথা বলছিস। কেউ ওদের ভূত হতে দেখেছে?
এতক্ষণে কথা বলার সুযোগ পেল জগু। এবং সুযোগ কাজে লাগালো, কেউ ওদের ভূত হতে দেখেনি তবে ভূত হওয়ার পর দেখেছে। ছবিও তুলে রেখেছে।
রায়হান বললো, বাজে কথা। এই একবিংশ শতাব্দীতে মানুষ যখন মঙ্গলগ্রহে পানির সন্ধান করছে, তখন তোরা ভূতের খবরাখবর জোগাড় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছিস। যত্তসব!
জামিল বললো, তাহলে খুলেই বলি। এস এস ওয়াটারটাউন নামের ওই তেলবাহী জাহাজের খালি ট্যাঙ্কি পরিস্কার করার কাজ করছিল ওই দুজন শ্রমিক। এমন খালি ট্যাঙ্কিতে গ্যাস জমে থাকে। বিষাক্ত গ্যাস। ওই বিষাক্ত গ্যাসে দুই শ্রমিক মারা যায়। মৃত শ্রমিকদুজন নিয়ে বড্ড বিপাকে পড়ে গেল জাহাজের লোকজন। কী আর করা। শ্রমিকদুজনকে সাগরে ফেলে দিল। জাহাজ তখন চলছিল পানামা খাল দিয়ে। সময়টা ছিল ১৯২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর। সারাদিন জাহাজ চললো। জাহাজটা এগিয়ে চলছে নিউ অরলিন্সের দিকে। পরদিন সকাল বেলা জাহাজের লোকজন অবাক। মৃত দুই শ্রমিকের কল্লা ভেসে ভেসে চলছে ওদের সাথে। জাহাজের অনেকেই এ দৃশ্য দেখেছে। নিউ অরলিন্সে পৌঁছানোর পর জাহাজের ক্যাপ্টেন এই দুর্ঘটনার কথা জানালেন কর্তৃপক্ষকে। কিছুদিন বিরতির পর আরেকটা যাত্রা শুরু করল জাহাজটা। গভীর সমুদ্রে আসার পর সেই একই ঘটনা। আবার সাগরের পানিতে ভেসে ওঠল দুই মৃত শ্রমিকের মাথা। ঢেউয়ের তালে নাচতে নাচতে এগিয়ে চলতে লাগলো জাহাজের সাথে পাল্লা দিয়ে। এবার আর ভুল করলেন না জাহাজের ক্যাপ্টেন ট্র্যাসি। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে রাখলেন ওই ভূতুড়ে কল্লা দুটোর। ছয় ছয়টা ছবি। তারপর ক্যামেরাটা খুব যত্ন করে রেখে দিলেন সিন্দুকে। জাহাজ কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে যখন ছবিগুলো দেখানো হল, তারা নিজেরাও অবাক হয়ে গেল। ভূত নেই এ কথা যারা জোর দিয়ে বলে আসছিল, তারাও বিশ্বাস করতে বাধ্য হল- সত্যি ভূত আছে। আর আছে বলেই ভূতদুটো বারবার ফিরে আসছে জাহাজের কাছে। জাহাজের চেনাপরিচিত জগতে আসতে চায় ওরা। এটাই হচ্ছে ভূতদের ধর্ম। ওরা কেবল চেনা জগতেই ফিরে আসে। এবং যে কোনো অতৃপ্ত আত্মাই ভূত হয়।এ পর্যন্ত বলে থামলো জামিল। একটু দম নেয়া আর কি। কিন্তু গল্পটার মোহে পড়ে গেল রায়হান। জানতে চাইলো, তারপর?
জামিল বললো, পরবর্তী যাত্রায় জাহাজের সকল নাবিক বদলে ফেলা হল। এরপর আর সেই ভূতদুটোর দেখা পাওয়া যায়নি।
রায়হান বললো, এ থেকে কী প্রমাণ হয়? ভূত নেই।
জামিল বললো, ভূত যদি না-ই থাকত তাহলে জাহাজের ক্যাপ্টেন ট্র্যাসি ভূতের সেই ছবি তুললেন কী করে?
রায়হান বললো, তুই সেই ছবি দেখেছিস?
জামিল বললো, দেখেছি। তুই দেখবি? চল তোকেও দেখাবো।
জামিলদের বাসার বারান্দাটা বেশ নিরিবিলি। আশপাশে বেশ গাছপালা। সকালের ঝকঝকে রোদ বাইরে। জামিল ঘরের ভিতর থেকে একটা প্রিন্ট করা ছবি নিয়ে এল। কম্পিউটার থেকে সাধারন প্রিন্ট করা একটা ছবি। ছবিটা ভালোমতো দেখলো রায়হান। তবু বললো, এটা কোনো জালিয়াতিও হতে পারে। কম্পিউটারে যে কোনো কিছু বানানো সম্ভব। নিজের চোখে না দেখলে কখনো আমি ভূত আছে বলে বিশ্বাস করবো না।
জগু বললো, অতৃপ্ত আত্মাই নাকি ভূত হয়। এবং কবরস্থান বা শশ্মানে থাকে ভূতরা।
জামিল বললো, সুযোগ পেলে তোকেও ভূত দেখাবো। তবে অমাবস্যার রাতে।
রায়হান বললো, অমাবস্যার রাতেই ভূত দেখতে হবে? কিছু দেখা যাবে?
জগু বললো, বাংলাসাহিত্যের অন্যতম ভূতলেখক ত্রৈলোক্যনাথ বলেছেন- যেমন জল জমিয়া বরফ হয়, অন্ধকার জমিয়া তেমন ভূত হয়। কাজেই ভূত দেখতে হলে অমাবস্যার রাত ছাড়া গতি নেই। এবং এজন্য তোকে গোরস্থানেই যেতে হবে। রাজি আছিস?
রায়হান বললো, রাজি।
জামিল বললো, একা যেতে হবে।
রায়হান বললো, তা-ও রাজি। তবু আমি প্রমাণ করে ছাড়বো ভূত নেই। এবার বল কবে?
জামিল বললো, আমি সময় হলেই বলবো।
২.
খবরটা হঠাৎ করেই পেল ওরা। রূপা আত্মহত্যা করেছে। রূপাকে ওরা তিনজনই চেনে। ওদের পাশের গ্রামেই বাড়ি। রূপার বাবার একটা মুদি দোকান আছে ঠাকুরবাজারে। বিয়ে হয়েছিল রূপার। বর ছিল বেকার। রূপা দেখতেও রূপসী। কেবল গায়ের রঙটা কালো। কেউ রূপার রূপটাকে দেখেনি। কেবল গায়ের রঙটাই দেখেছে। ওদের কাছে গায়ের রঙ ফকফকে মানে রূপসী। সেই রূপা কেন আত্মহত্যা করলো? এত খোঁজ নেয়ার দরকার মনে করেনি ওরা। তবে ওদের খারাপ লেগেছে। কোনো খোঁজ না নিলেও টুকরো টুকরো কিছু কথা ওদের কানে আসে। রূপার বরকে বিদেশে পাঠানোর পুরো খরচ নাকি রূপার বাবার দেয়ার কথা ছিল। সেটা দিতে পারেননি। এজন্য স্বশুড়বাড়িতে অনেক নির্যাতন সইতে হয়েছিল রূপাকে। একসময় আর সহ্য করতে না পেরে নিজেকেই নিজে...। পুলিশি ঝামেলা-টামেলা শেষ করে রূপাকে কবর দেয়া হয়েছে বাবার বাড়িতে এনে। রূপার স্বামীকে পুলিশ খুঁজছে। কোথায় পালিয়ে আছে কে জানে।
রূপার খবরও দেখতে দেখতে পুরনো হয়ে যায় অল্প ক’দিনেই। এ গ্রামের কেউ আর রূপার কথা মনে করে না। কেবল একজন ছাড়া। জামিল। ও ঠিকই মনে রেখেছে রূপার কথা। একদিন ও জগু আর রায়হানকে বলছিল, অতৃপ্ত আত্মাই নাকি ভূত হয়ে আসে।
জগু বললো, আমিও সেটা শুনেছি। তাহলে তো রূপার আত্মা অতৃপ্ত। রূপা এখন ভূত হয়ে ঘুরছে।
রায়হান হাসতে হাসতে বললো, ভূত দেখি তোদের ঘাড় থেকে নামেইনি। দুনিয়ার এত বিষয় থাকতে তোরা ভূত নিয়ে পড়ে আছিস এখনও।
জামিল বললো, তুই ভূতে বিশ্বাস করিস না ভালো কথা। আমাদের বিশ্বাস করতে তো অসুবিধা নেই।
জগু বললো, আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। রূপার কবরে গিয়ে অমাবস্যার রাতে একটা খুটি পুঁতে দিয়ে আসবে রায়হান। তাহলেই বুঝবো ভূতে ওর সত্যি সত্যি বিশ্বাস নেই। আর যদি রাজি না হয়, তাহলে বুঝবো ওর সবটাই ভান।
জামিল বললো, এবার টের পাবে ভূত কাকে বলে।
রায়হান বললো, তোরা কি রূপাকে ভূত হয়ে ঘুরতে দেখেছিস?
জামিল বললো, দেখতে আর কতক্ষণ! অতৃপ্ত আত্মা যদি ভূত হয়, তাহলে রূপাও এতদিনে ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস।
রায়হান বললো, ঠিক আছে। আমি রূপার কবরে খুটি পুঁতে দিয়ে এসে প্রমাণ করবো আসলেই ভূত বলে কিছু নেই।
জামিল বললো, অমাবস্যা তাহলে কবে?
জগু বললো, আগামী মঙ্গলবার।
জামিল বললো, তাহলে আগামী মঙ্গলবার রাতেই হবে তোর খুটি পুঁতে দিয়ে আসার দিন।
৩.
মঙ্গলবার সন্ধে। জামিল পড়ায় মন দিতে পারছে না। টেস্ট পরীক্ষা শুরু হতে আর বেশি বাকি নেই। বড়জোর মাসখানেক। আগামী বছর ও এসএসসি পরীক্সা দেবে। জগু অবশ্য এবার ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছে। আর রায়হানও আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে জামিল। ওদের মধ্যে কথা হয়ে আছে। ওরা একটা খুঁটি দেবে রায়হানের হাতে। রায়হান ঠিক ওই খুটিটাই পুঁতে দিয়ে আসবে রূপার কবরে। রাতে ওরা কবরস্থানের আশপাশ দিয়ে চলাফেরা করে না খুব একটা। গা ছম ছম করে। দিনের বেলাতেই ভয় ভয় লাগে। খুঁটিতে একটা বিশেষ চিহ্নও দেয়া থাকবে। রাত বারোটার পর রায়হান যাবে রূপার কবরের উপর খুঁটি পুঁততে। পরদিন ভোরে ওরা গিয়ে দেখে আসবে। খুঁটি পুঁতে দিয়েই চলে আসবে রায়হান। ওরা তিনজন একসাথেই সারারাত কাটাবে জামিলদের ঘরে। ফজরের আজান হলেই বেরিয়ে পড়বে। অবশ্য ফজরের আজানের সময় আকাশ পরিস্কার হয় না। আকাশ পরিস্কার হয় আরো কিছুক্ষণ পর।
জামিলদের বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। জামিল ঘড়ির দিকে তাকাল। পৌনে বারোটা বাজে। তখনই একটা শব্দ হলো। এই শব্দটা হলো সঙ্কেত। ওরা এসেছে। রায়হান আর জগুর একসাথেই আসার কথা।
জামিল বাতি নিভিয়ে বাইরে এলো। আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে বেশ মেঘ। তারাও দেখা যাচ্ছে না। জামিল বললো, এসেছিস?
রায়হান বললো, হুঁ।
জামিল আবার জানতে চাইল, জগু আসেনি?
রায়হান বললো, এসেছে তো। এই যে আমার পাশে।
জামিল জানতে চাইল, কীরে জগু, কথা বলছিস না কেন?
জগু বললো, কী বলবো। এই নে।
বলে জামিলের হাতে একটা কিছু ধরিয়ে দিল। খুটিটা। জামিল বললো, চিহ্ন দিয়ে রেখেছিস?
জগু জবাব দিল, রেখেছি। দেখবি?
জামিল বললো, এই অন্ধকারে কীভাবে দেখবো? টর্চ তো আনিনি। তোরা আনিসনি?
রায়হান বললো, আমাদের কি টর্চ আনার কথা ছিল? ছিল না।
জামিল বললো, টর্চ ছাড়াই চলবে। চল এবার কবরস্থানের দিকে।
তিনজন হাঁটতে লাগলো দক্ষিণ দিকে। ওদিকেই কবরস্থান। পাঁচগ্রামের মানুষ কবর দেয়া হয় ওই একটা কবরস্থানেই।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে চলে এল একটা কালভার্ট পর্যন্ত। কালভার্ট পার হলে ছোট্ট একটা ঝোপ। ঝোপ পেরোলেই কবরস্থান। রূপার কবরটা ওরা তিনজনই আজ সকালের দিকে দেখে এসেছে। এবং কোথায় খুটিটা পুঁততে হবে সেটাও দেখিয়ে দেয়া হয়েছে রায়হানকে। এবার রায়হানের হাতে খুঁটিটা দিল জগু। রায়হান খুঁটি নিয়ে চলে গেল।
জামিল বললো, কতক্ষণ লাগবে কে জানে? ততক্ষণ কী করবি? এখানেই ওর জন্য অপেক্ষা করবি নাকি আমার ঘরে যাবি?
জগু বললো, চল হাঁটি।
জামিল অবাক হয়ে বললো, হাঁটবি? কেন? যদি রায়হান এসে আমাদের না পায়?
জগু বললো, ও আসবে না।
জামিল অবাক হয়ে বললো, আসবে না মানে? ও তো খুটি পুঁতে দিয়েই চলে আসবে।
জগু বললো, এত তাড়াতাড়ি আসবে না।
জামিল জানতে চাইল, কেন?
জগু বললো, রূপার ভূত ওকে এত সহজেই ছেড়ে দেবে ভাবছিস? হিঁ হিঁ হিঁ!
জামিল বললো, তোর হাসিটা ভূতঙ্কর।
জগু বললো, সেটা আবার কীরকম।
জামিল বললো, ভূতদের মতো। চল ঘরেই চলে যাই।
জগু বললো, তুই যা। আমি কিছুক্ষণ হাঁটবো।
জামিল অবাক হয়ে বললো, একা!
জগু বললো, তুই না থাকলে তো একাই হাঁটতে হবে। না হলে রূপার ভূতটাকে সাথে নিয়ে নেবো। আমার খুব হাঁটতে ইচ্ছে করছে।
জামিল বললো, তোর ভয় করবে না?
জগু বললো, কেন?
জামিল বললো, যদি রূপার ভূতটা তোর কাছে চলে আসে?
জগু বললো, রূপার ভূত এখন রায়হানকে নিয়ে ব্যস্ত। আমার কাছে আসার সময় পাবে না। না যাইরে!
বলেই কালভার্টের দিকে হাঁটতে শুরু করল জগু। জামিল কিছুটা দৌড়ে গিয়ে জগুর হাত ধরে ফেললো। অন্ধকারে ওর চেহারা দেখা যাচ্ছে না। তবু ওর হাত ধরতে কেমন একটা অস্বস্তি লাগলো। জগুর হাত ধরেই বললো, একা যাবি? চল তোর সাথে আমিও যাবো। তবে ওদিকে না। ওদিকে।
বলে উত্তর দিক দেখাল জামিল। ব্যস ওদিকে হাঁটা শুরু করল দুজন। চুপচাপ অনেকক্ষণ হাঁটলো। কেউ কোনো কথা বলছে না। জামিল বুঝতে পারছে না, ওর কেন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। হঠাৎ করেই ওর কথা বলার ইচ্ছেটা মরে গেছে। আর জগুও কেমন যেন চুপ মেরে আছে আজ। একসময় জামিল বললো, চল দেখে আসি রায়হান এল কি না। ওর আসার সময় হয়ে গেছে। আর কোনো কথা না বলে ফিরতি পথ ধরল জামিল। জগুও জামিলের সাথে সাথে ফিরতি পথেই হাঁটতে শুরু করলো। ৪.
খুটিটা হাতে নিয়েই রওনা দিল রায়হান। হন হন করে কালভার্ট পেরোল ও। তারপর ঝোপ পেরোতে গিয়ে একটু ঝামেলাই হয়েছে ওর। এই অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। এখানে ওখানে বেশ কিছুর খোঁচা খেল ও। তারপর একসময় চলে এল কবরস্থানে। রূপার কবরটা কোথায় আছে দেখতে পাচ্ছে না। অনুমান করে যতটা সম্ভব রূপার কবরের কাছে চলে এল। আশপাশে তাকাল। নাহ্। কিছুই চোখে পড়ছে না। ভাবতে লাগলো রায়হান, অন্ধকারে কি ভূত দেখা যায়? মনে হয় না। কারণ জামিলই তো বলেছিল ত্রৈলোক্যনাথ নাকি ভূতের জন্ম রহস্যও উদঘাটন করেছেন- অন্ধকার জমে ভূত হয়। যদি অন্ধকার জমে ভূত হয়, তবে অমাবস্যার রাত হচ্ছে ভূতদের জন্মরাত। যেহেতু ভূতরা রাতে জন্মায় এবং অন্ধকার জমাট হয়ে ভূতের জন্ম, তাহলে নিশ্চয়ই ভূতরা অন্ধকারের মতোই কালো। রূপার কি তাহলে ভূত হওয়ার সম্ভাবনা আছে? রূপা কালো মানুষ হয়ে জন্মেছিল। ভূতদের কাছে মনে হয় কালো ভূতদের কদর বেশি। আর মানুষের বেলায় সাদা। মানুষের ঠিক একেবারে উল্টো। ভূতরা কি তবে হাত দিয়ে হাঁটে? রায়হান শুনেছে কোনো কোনো ভূতের পায়ের পাতা নাকি উল্টানো থাকে। সে যাই হোক। ভূতরা যদি কালো হয়, তবে এই অন্ধকারে ভূত দেখা যাওয়ার কথা নয়। যদি ভূত দেখা না-ই যায়, তাহলে ভূতে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। মনে মনে খানিকটা হেসে নিল রায়হান।
এবার যেখানে খুটি পুঁততে হবে সে জায়গাটা অনুমান করে নিল ও। মাটিটা ভেজা। এই ভেজা মাটিতে খুটি পুঁততে কষ্ট হবে না। একটা আধলা ইটও নিয়ে এসেছে ও। খুটিটা মোটে এক ফুট লম্বা। কাজেই খানিকটা না ঝুঁকে বা না বসে এটা ভালো মতো পুঁততে পারবে না। রায়হান বেশ খানিকটা ঝুঁকে খুটিটা পুঁতে ফেলল। আর মনে মনে ভাবতে লাগল, বোকাগুলো ভোরে এসে যখন দেখবে খুঁটিটা এখানে তখন নিশ্চয়ই বুক ফুলিয়ে আর কখনো বলতে পারবে না- ভূত আছে। জগু আর জামিলের ভূতের বিশ্বাস নিয়ে খানিকটা ব্যাঙ্গের হাসি হাসল। খুটিটা ভালো মতো পরীক্ষা করে দেখল। বেশ শক্ত হয়ে বসেছে। এবার আধলাটা ছুঁড়ে ফেলল খানিকটা দূরে। মনে হয় ঝোপের মধ্যে গিয়ে পড়েছে। কান পেতে শব্দটা শুনলো ও। এবার ফিরতে হবে। ঘুরে হাঁটতে শুরু করলো রায়হান। কিন্তু এ কি? ও হাঁটতে পারছে না। কে যেন ওকে পিছন থেকে টেনে ধরে আছে। বেশ খানিকক্ষণ চেষ্টা করলো রায়হান। হঠাৎ ওর মেরুদণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে এল। ঘাড়টা কেমন চিন চিন করছে। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। চিৎকার করে জগু আর জামিলকে ডাকতে চাইছে ও। কিন্তু মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরুচ্ছে না। হঠাৎ তীব্র একটা ঝাঁকুনি দিল ওর শরীর। এই ঝাঁকুনিতে শরীরের ভার রাখতে পারল না ও। পড়ে গেল। আর কিছু মনে নেই ওর।
৫.
রায়হানকে যেখানে বিদায় দিয়েছিল সেখানেই ফিরে এল জগু আর জামিল। ওরা অপেক্ষা করছে। হঠাৎ একটা তী² চিৎকার ভেসে এল দক্ষিণ দিক থেকে। ওদিকেই কবরস্থান। জামিল বেশ ভয় পেল। আর জগু?
জামিল হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দ্যাখে জগু নেই। ও গলা ফাটিয়ে চিৎকার করল, জগু জগু বলে। কিন্তু কারো কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। নিমিষে কোথায় গেল জগু? দৌড়ে বাড়ির পথ ধরলো জামিল। ওদের ঘরের উঠোনেই হঠাৎ দেখা জগুর সাথে। জামিল জানতে চাইল, কি রে না বলে হঠাৎ চলে এলি?
জগু বললো, না বলে মানে? আমি তো মাত্র এলাম। স্যরি দোস্ত। আসলে হয়েছে কি, আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙতেই দেখি দেড়টা বাজে। ছুটে চলে এলাম। রায়হান কোথায়?
জামিল বললো, কী বলছিস তুই? এতক্ষণ তাহলে কে ছিল আমার সাথে? তুই এতক্ষণ আমার সাথে হাঁটাহাঁটি করলি না?
জগু বললো, কী যা তা বলছিস। আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। আচ্ছা টর্চটা নিয়ে আয় তোর ঘর থেকে।
জামিল দৌড়ে ঘর থেকে টর্চ নিয়ে এল। তীব্র আলো টর্চটায়। জামিল টর্চের আলো ফেলল জগুর মুখে। সত্যি এটা জগু। তাহলে এতক্ষণ কে ছিল ওর সাথে? ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগলো ওর। আর ঠিক তখনই ওর মনে পড়ল রায়হানের কথা। জামিল বললো, রায়হান তো কবরস্থানে। ওখান থেকে এটা চিৎকার শুনলাম। চিৎকার শুনেই দেখলাম আমার পাশে তুই নেই। তারপর দৌড়ে চলে এলাম এখানে।
জগু বললো, আবারও ভুল করছিস। তোর পাশে আমি থাকতে যাবো কেন? আচ্ছা ওটা নিয়ে পরে কথা বলবো। এখন চল রায়হানের কী হলো দেখে আসি।
জামিল আর জগু চলে এল সোজা কবরস্থানে। এসে দেখে রায়হান মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু রায়হানকে তুলতে গিয়ে তুলতে পারলো না। কিসের সাথে যেন আটকে যায়। ভালো মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল, রায়হানের লুঙ্গি আটকে আছে খুটির সাথে। যে খুটিটা রায়হান পুঁতেছিল, খুটির সাথে নিজের লুঙ্গিটাও পুঁতে দিয়েছে। জামিল বললো, তাহলে ব্যপারটা এই! এটাকেই ভূতের ভয় ভেবে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে?
জগু বললো, এটা ওকে জানানো যাবে না।
জামিল বললো, ও এমনিতেই জেনে যাবে।
জগু অবাক হয়ে বললো, আমরা কেউ না বললে কেমন করে জানবে?
জামিল বললো, ওর লুঙ্গিতে ছিদ্রটা দেখেই ও যা বোঝার বুঝে যাবে।
একটু পর জ্ঞান ফিরল রায়হানের। জ্ঞান ফিরতেই রায়হান বললো, আমাকে কি ভূতে ধরেছিল?
জামিল বললো, নয় তো কী?
রায়হান বললো, যাহ। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল কে যেন আমাকে পিছন থেকে ধরে রেখেছে। ভূতরা কি পিছন থেকে টেনে ধরে রাখে?
জগু বললো, রাখতে পারে। সব ভূত তো আর একরকম নয়। একেক ভূত একেক রকম। ভূত যে আছে এবার কি বিশ্বাস হলো?
রায়হান কোনো জবাব দিল না। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো জামিল আর জগুর দিকে।
জামিল বললো, ঠিক আছে। আমরা ধরে নিচ্ছি মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ।
এবার খেপে গেল রায়হান, আমি এখনও ভূতে বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয় অন্য কিছু ঘটেছিল।
জামিল বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। তুই ভূতে বিশ্বাস করিস না। কিন্তু ভূতকে তো ভয় পাস?
এবার আর কোনো কথা বললো না রায়হান। ওর কোমল চাহনি বুঝিয়ে দিল সত্যি ভূতের ভয় ওরও আছে।
জামিলের ঘরে এল তিনজন। পুরো ঘটনা শুনল জগু। শুনল রায়হানও। সত্যি ভূত নেই এটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু জামিলের সাথে যে হাঁটল, সেটা জগু নয়। তাহলে কে সে? রূপা নয় তো! জগুর রূপ ধরে জামিলের সাথেই ছিল। অন্য কিছু? নাকি এটা রহস্যই থেকে যাবে সারাজীবন? যেমন রহস্যময় ছিল তেলবাহী জাহাজের সেই দুই ভূত।
আপনাদের জন্য স্পেশাল ভুতের গল্প।
চেঁচিয়ে বললো, ভূত নেই, ভূত নেই, ভূত নেই।
জামিল বললো, ভূত নেই ভালো কথা। তুই ভূতে বিশ্বাস করিস না তা-ও ভালো। কিন্তু এত ভূতস্বরে চেঁচানোর মানে কী?
জগু মানে জগলুল আরো এক কাঠি বাড়িয়ে বললো, তোর ভূতস্বরে চেঁচানোই প্রমাণ করে ভূত আছে। কারণ অমন করে ভূতেরাই চেঁচায়। জগতে ভূতের কোনো কমতি নেই। ভূত নেই এ কথা কেউ আজ পর্যন্ত জোর দিয়ে বলতে পারেনি। মনে রাখিস।
রায়হান আগের চেয়ে জোরে চেঁচিয়ে বললো, ভূত আছে এ কথাও কেউ জোর দিয়ে বলতে পারেনি- এটাও মনে রাখিস।
জামিল বললো, তাহলে জেমস কার্টনি আর মাইকেল মিহানের কল্লা দুটো কী ছিল?
রায়হান অবাক হয়ে বললো, এরা আবার কারা?
জামিল বললো, এরা হচ্ছে এস এস ওয়াটারটাউন নামে একটি তেলবাহী জাহাজের শ্রমিক। মরে গিয়ে এরা ভূত হয়ে গিয়েছিল।
রায়হান বললো, ধ্যাৎ! কী সব আজে বাজে কথা বলছিস। কেউ ওদের ভূত হতে দেখেছে?
এতক্ষণে কথা বলার সুযোগ পেল জগু। এবং সুযোগ কাজে লাগালো, কেউ ওদের ভূত হতে দেখেনি তবে ভূত হওয়ার পর দেখেছে। ছবিও তুলে রেখেছে।
রায়হান বললো, বাজে কথা। এই একবিংশ শতাব্দীতে মানুষ যখন মঙ্গলগ্রহে পানির সন্ধান করছে, তখন তোরা ভূতের খবরাখবর জোগাড় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছিস। যত্তসব!
জামিল বললো, তাহলে খুলেই বলি। এস এস ওয়াটারটাউন নামের ওই তেলবাহী জাহাজের খালি ট্যাঙ্কি পরিস্কার করার কাজ করছিল ওই দুজন শ্রমিক। এমন খালি ট্যাঙ্কিতে গ্যাস জমে থাকে। বিষাক্ত গ্যাস। ওই বিষাক্ত গ্যাসে দুই শ্রমিক মারা যায়। মৃত শ্রমিকদুজন নিয়ে বড্ড বিপাকে পড়ে গেল জাহাজের লোকজন। কী আর করা। শ্রমিকদুজনকে সাগরে ফেলে দিল। জাহাজ তখন চলছিল পানামা খাল দিয়ে। সময়টা ছিল ১৯২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর। সারাদিন জাহাজ চললো। জাহাজটা এগিয়ে চলছে নিউ অরলিন্সের দিকে। পরদিন সকাল বেলা জাহাজের লোকজন অবাক। মৃত দুই শ্রমিকের কল্লা ভেসে ভেসে চলছে ওদের সাথে। জাহাজের অনেকেই এ দৃশ্য দেখেছে। নিউ অরলিন্সে পৌঁছানোর পর জাহাজের ক্যাপ্টেন এই দুর্ঘটনার কথা জানালেন কর্তৃপক্ষকে। কিছুদিন বিরতির পর আরেকটা যাত্রা শুরু করল জাহাজটা। গভীর সমুদ্রে আসার পর সেই একই ঘটনা। আবার সাগরের পানিতে ভেসে ওঠল দুই মৃত শ্রমিকের মাথা। ঢেউয়ের তালে নাচতে নাচতে এগিয়ে চলতে লাগলো জাহাজের সাথে পাল্লা দিয়ে। এবার আর ভুল করলেন না জাহাজের ক্যাপ্টেন ট্র্যাসি। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে রাখলেন ওই ভূতুড়ে কল্লা দুটোর। ছয় ছয়টা ছবি। তারপর ক্যামেরাটা খুব যত্ন করে রেখে দিলেন সিন্দুকে। জাহাজ কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে যখন ছবিগুলো দেখানো হল, তারা নিজেরাও অবাক হয়ে গেল। ভূত নেই এ কথা যারা জোর দিয়ে বলে আসছিল, তারাও বিশ্বাস করতে বাধ্য হল- সত্যি ভূত আছে। আর আছে বলেই ভূতদুটো বারবার ফিরে আসছে জাহাজের কাছে। জাহাজের চেনাপরিচিত জগতে আসতে চায় ওরা। এটাই হচ্ছে ভূতদের ধর্ম। ওরা কেবল চেনা জগতেই ফিরে আসে। এবং যে কোনো অতৃপ্ত আত্মাই ভূত হয়।এ পর্যন্ত বলে থামলো জামিল। একটু দম নেয়া আর কি। কিন্তু গল্পটার মোহে পড়ে গেল রায়হান। জানতে চাইলো, তারপর?
জামিল বললো, পরবর্তী যাত্রায় জাহাজের সকল নাবিক বদলে ফেলা হল। এরপর আর সেই ভূতদুটোর দেখা পাওয়া যায়নি।
রায়হান বললো, এ থেকে কী প্রমাণ হয়? ভূত নেই।
জামিল বললো, ভূত যদি না-ই থাকত তাহলে জাহাজের ক্যাপ্টেন ট্র্যাসি ভূতের সেই ছবি তুললেন কী করে?
রায়হান বললো, তুই সেই ছবি দেখেছিস?
জামিল বললো, দেখেছি। তুই দেখবি? চল তোকেও দেখাবো।
জামিলদের বাসার বারান্দাটা বেশ নিরিবিলি। আশপাশে বেশ গাছপালা। সকালের ঝকঝকে রোদ বাইরে। জামিল ঘরের ভিতর থেকে একটা প্রিন্ট করা ছবি নিয়ে এল। কম্পিউটার থেকে সাধারন প্রিন্ট করা একটা ছবি। ছবিটা ভালোমতো দেখলো রায়হান। তবু বললো, এটা কোনো জালিয়াতিও হতে পারে। কম্পিউটারে যে কোনো কিছু বানানো সম্ভব। নিজের চোখে না দেখলে কখনো আমি ভূত আছে বলে বিশ্বাস করবো না।
জগু বললো, অতৃপ্ত আত্মাই নাকি ভূত হয়। এবং কবরস্থান বা শশ্মানে থাকে ভূতরা।
জামিল বললো, সুযোগ পেলে তোকেও ভূত দেখাবো। তবে অমাবস্যার রাতে।
রায়হান বললো, অমাবস্যার রাতেই ভূত দেখতে হবে? কিছু দেখা যাবে?
জগু বললো, বাংলাসাহিত্যের অন্যতম ভূতলেখক ত্রৈলোক্যনাথ বলেছেন- যেমন জল জমিয়া বরফ হয়, অন্ধকার জমিয়া তেমন ভূত হয়। কাজেই ভূত দেখতে হলে অমাবস্যার রাত ছাড়া গতি নেই। এবং এজন্য তোকে গোরস্থানেই যেতে হবে। রাজি আছিস?
রায়হান বললো, রাজি।
জামিল বললো, একা যেতে হবে।
রায়হান বললো, তা-ও রাজি। তবু আমি প্রমাণ করে ছাড়বো ভূত নেই। এবার বল কবে?
জামিল বললো, আমি সময় হলেই বলবো।
২.
খবরটা হঠাৎ করেই পেল ওরা। রূপা আত্মহত্যা করেছে। রূপাকে ওরা তিনজনই চেনে। ওদের পাশের গ্রামেই বাড়ি। রূপার বাবার একটা মুদি দোকান আছে ঠাকুরবাজারে। বিয়ে হয়েছিল রূপার। বর ছিল বেকার। রূপা দেখতেও রূপসী। কেবল গায়ের রঙটা কালো। কেউ রূপার রূপটাকে দেখেনি। কেবল গায়ের রঙটাই দেখেছে। ওদের কাছে গায়ের রঙ ফকফকে মানে রূপসী। সেই রূপা কেন আত্মহত্যা করলো? এত খোঁজ নেয়ার দরকার মনে করেনি ওরা। তবে ওদের খারাপ লেগেছে। কোনো খোঁজ না নিলেও টুকরো টুকরো কিছু কথা ওদের কানে আসে। রূপার বরকে বিদেশে পাঠানোর পুরো খরচ নাকি রূপার বাবার দেয়ার কথা ছিল। সেটা দিতে পারেননি। এজন্য স্বশুড়বাড়িতে অনেক নির্যাতন সইতে হয়েছিল রূপাকে। একসময় আর সহ্য করতে না পেরে নিজেকেই নিজে...। পুলিশি ঝামেলা-টামেলা শেষ করে রূপাকে কবর দেয়া হয়েছে বাবার বাড়িতে এনে। রূপার স্বামীকে পুলিশ খুঁজছে। কোথায় পালিয়ে আছে কে জানে।
রূপার খবরও দেখতে দেখতে পুরনো হয়ে যায় অল্প ক’দিনেই। এ গ্রামের কেউ আর রূপার কথা মনে করে না। কেবল একজন ছাড়া। জামিল। ও ঠিকই মনে রেখেছে রূপার কথা। একদিন ও জগু আর রায়হানকে বলছিল, অতৃপ্ত আত্মাই নাকি ভূত হয়ে আসে।
জগু বললো, আমিও সেটা শুনেছি। তাহলে তো রূপার আত্মা অতৃপ্ত। রূপা এখন ভূত হয়ে ঘুরছে।
রায়হান হাসতে হাসতে বললো, ভূত দেখি তোদের ঘাড় থেকে নামেইনি। দুনিয়ার এত বিষয় থাকতে তোরা ভূত নিয়ে পড়ে আছিস এখনও।
জামিল বললো, তুই ভূতে বিশ্বাস করিস না ভালো কথা। আমাদের বিশ্বাস করতে তো অসুবিধা নেই।
জগু বললো, আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। রূপার কবরে গিয়ে অমাবস্যার রাতে একটা খুটি পুঁতে দিয়ে আসবে রায়হান। তাহলেই বুঝবো ভূতে ওর সত্যি সত্যি বিশ্বাস নেই। আর যদি রাজি না হয়, তাহলে বুঝবো ওর সবটাই ভান।
জামিল বললো, এবার টের পাবে ভূত কাকে বলে।
রায়হান বললো, তোরা কি রূপাকে ভূত হয়ে ঘুরতে দেখেছিস?
জামিল বললো, দেখতে আর কতক্ষণ! অতৃপ্ত আত্মা যদি ভূত হয়, তাহলে রূপাও এতদিনে ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস।
রায়হান বললো, ঠিক আছে। আমি রূপার কবরে খুটি পুঁতে দিয়ে এসে প্রমাণ করবো আসলেই ভূত বলে কিছু নেই।
জামিল বললো, অমাবস্যা তাহলে কবে?
জগু বললো, আগামী মঙ্গলবার।
জামিল বললো, তাহলে আগামী মঙ্গলবার রাতেই হবে তোর খুটি পুঁতে দিয়ে আসার দিন।
৩.
মঙ্গলবার সন্ধে। জামিল পড়ায় মন দিতে পারছে না। টেস্ট পরীক্ষা শুরু হতে আর বেশি বাকি নেই। বড়জোর মাসখানেক। আগামী বছর ও এসএসসি পরীক্সা দেবে। জগু অবশ্য এবার ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছে। আর রায়হানও আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে জামিল। ওদের মধ্যে কথা হয়ে আছে। ওরা একটা খুঁটি দেবে রায়হানের হাতে। রায়হান ঠিক ওই খুটিটাই পুঁতে দিয়ে আসবে রূপার কবরে। রাতে ওরা কবরস্থানের আশপাশ দিয়ে চলাফেরা করে না খুব একটা। গা ছম ছম করে। দিনের বেলাতেই ভয় ভয় লাগে। খুঁটিতে একটা বিশেষ চিহ্নও দেয়া থাকবে। রাত বারোটার পর রায়হান যাবে রূপার কবরের উপর খুঁটি পুঁততে। পরদিন ভোরে ওরা গিয়ে দেখে আসবে। খুঁটি পুঁতে দিয়েই চলে আসবে রায়হান। ওরা তিনজন একসাথেই সারারাত কাটাবে জামিলদের ঘরে। ফজরের আজান হলেই বেরিয়ে পড়বে। অবশ্য ফজরের আজানের সময় আকাশ পরিস্কার হয় না। আকাশ পরিস্কার হয় আরো কিছুক্ষণ পর।
জামিলদের বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। জামিল ঘড়ির দিকে তাকাল। পৌনে বারোটা বাজে। তখনই একটা শব্দ হলো। এই শব্দটা হলো সঙ্কেত। ওরা এসেছে। রায়হান আর জগুর একসাথেই আসার কথা।
জামিল বাতি নিভিয়ে বাইরে এলো। আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে বেশ মেঘ। তারাও দেখা যাচ্ছে না। জামিল বললো, এসেছিস?
রায়হান বললো, হুঁ।
জামিল আবার জানতে চাইল, জগু আসেনি?
রায়হান বললো, এসেছে তো। এই যে আমার পাশে।
জামিল জানতে চাইল, কীরে জগু, কথা বলছিস না কেন?
জগু বললো, কী বলবো। এই নে।
বলে জামিলের হাতে একটা কিছু ধরিয়ে দিল। খুটিটা। জামিল বললো, চিহ্ন দিয়ে রেখেছিস?
জগু জবাব দিল, রেখেছি। দেখবি?
জামিল বললো, এই অন্ধকারে কীভাবে দেখবো? টর্চ তো আনিনি। তোরা আনিসনি?
রায়হান বললো, আমাদের কি টর্চ আনার কথা ছিল? ছিল না।
জামিল বললো, টর্চ ছাড়াই চলবে। চল এবার কবরস্থানের দিকে।
তিনজন হাঁটতে লাগলো দক্ষিণ দিকে। ওদিকেই কবরস্থান। পাঁচগ্রামের মানুষ কবর দেয়া হয় ওই একটা কবরস্থানেই।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে চলে এল একটা কালভার্ট পর্যন্ত। কালভার্ট পার হলে ছোট্ট একটা ঝোপ। ঝোপ পেরোলেই কবরস্থান। রূপার কবরটা ওরা তিনজনই আজ সকালের দিকে দেখে এসেছে। এবং কোথায় খুটিটা পুঁততে হবে সেটাও দেখিয়ে দেয়া হয়েছে রায়হানকে। এবার রায়হানের হাতে খুঁটিটা দিল জগু। রায়হান খুঁটি নিয়ে চলে গেল।
জামিল বললো, কতক্ষণ লাগবে কে জানে? ততক্ষণ কী করবি? এখানেই ওর জন্য অপেক্ষা করবি নাকি আমার ঘরে যাবি?
জগু বললো, চল হাঁটি।
জামিল অবাক হয়ে বললো, হাঁটবি? কেন? যদি রায়হান এসে আমাদের না পায়?
জগু বললো, ও আসবে না।
জামিল অবাক হয়ে বললো, আসবে না মানে? ও তো খুটি পুঁতে দিয়েই চলে আসবে।
জগু বললো, এত তাড়াতাড়ি আসবে না।
জামিল জানতে চাইল, কেন?
জগু বললো, রূপার ভূত ওকে এত সহজেই ছেড়ে দেবে ভাবছিস? হিঁ হিঁ হিঁ!
জামিল বললো, তোর হাসিটা ভূতঙ্কর।
জগু বললো, সেটা আবার কীরকম।
জামিল বললো, ভূতদের মতো। চল ঘরেই চলে যাই।
জগু বললো, তুই যা। আমি কিছুক্ষণ হাঁটবো।
জামিল অবাক হয়ে বললো, একা!
জগু বললো, তুই না থাকলে তো একাই হাঁটতে হবে। না হলে রূপার ভূতটাকে সাথে নিয়ে নেবো। আমার খুব হাঁটতে ইচ্ছে করছে।
জামিল বললো, তোর ভয় করবে না?
জগু বললো, কেন?
জামিল বললো, যদি রূপার ভূতটা তোর কাছে চলে আসে?
জগু বললো, রূপার ভূত এখন রায়হানকে নিয়ে ব্যস্ত। আমার কাছে আসার সময় পাবে না। না যাইরে!
বলেই কালভার্টের দিকে হাঁটতে শুরু করল জগু। জামিল কিছুটা দৌড়ে গিয়ে জগুর হাত ধরে ফেললো। অন্ধকারে ওর চেহারা দেখা যাচ্ছে না। তবু ওর হাত ধরতে কেমন একটা অস্বস্তি লাগলো। জগুর হাত ধরেই বললো, একা যাবি? চল তোর সাথে আমিও যাবো। তবে ওদিকে না। ওদিকে।
বলে উত্তর দিক দেখাল জামিল। ব্যস ওদিকে হাঁটা শুরু করল দুজন। চুপচাপ অনেকক্ষণ হাঁটলো। কেউ কোনো কথা বলছে না। জামিল বুঝতে পারছে না, ওর কেন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। হঠাৎ করেই ওর কথা বলার ইচ্ছেটা মরে গেছে। আর জগুও কেমন যেন চুপ মেরে আছে আজ। একসময় জামিল বললো, চল দেখে আসি রায়হান এল কি না। ওর আসার সময় হয়ে গেছে। আর কোনো কথা না বলে ফিরতি পথ ধরল জামিল। জগুও জামিলের সাথে সাথে ফিরতি পথেই হাঁটতে শুরু করলো। ৪.
খুটিটা হাতে নিয়েই রওনা দিল রায়হান। হন হন করে কালভার্ট পেরোল ও। তারপর ঝোপ পেরোতে গিয়ে একটু ঝামেলাই হয়েছে ওর। এই অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। এখানে ওখানে বেশ কিছুর খোঁচা খেল ও। তারপর একসময় চলে এল কবরস্থানে। রূপার কবরটা কোথায় আছে দেখতে পাচ্ছে না। অনুমান করে যতটা সম্ভব রূপার কবরের কাছে চলে এল। আশপাশে তাকাল। নাহ্। কিছুই চোখে পড়ছে না। ভাবতে লাগলো রায়হান, অন্ধকারে কি ভূত দেখা যায়? মনে হয় না। কারণ জামিলই তো বলেছিল ত্রৈলোক্যনাথ নাকি ভূতের জন্ম রহস্যও উদঘাটন করেছেন- অন্ধকার জমে ভূত হয়। যদি অন্ধকার জমে ভূত হয়, তবে অমাবস্যার রাত হচ্ছে ভূতদের জন্মরাত। যেহেতু ভূতরা রাতে জন্মায় এবং অন্ধকার জমাট হয়ে ভূতের জন্ম, তাহলে নিশ্চয়ই ভূতরা অন্ধকারের মতোই কালো। রূপার কি তাহলে ভূত হওয়ার সম্ভাবনা আছে? রূপা কালো মানুষ হয়ে জন্মেছিল। ভূতদের কাছে মনে হয় কালো ভূতদের কদর বেশি। আর মানুষের বেলায় সাদা। মানুষের ঠিক একেবারে উল্টো। ভূতরা কি তবে হাত দিয়ে হাঁটে? রায়হান শুনেছে কোনো কোনো ভূতের পায়ের পাতা নাকি উল্টানো থাকে। সে যাই হোক। ভূতরা যদি কালো হয়, তবে এই অন্ধকারে ভূত দেখা যাওয়ার কথা নয়। যদি ভূত দেখা না-ই যায়, তাহলে ভূতে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। মনে মনে খানিকটা হেসে নিল রায়হান।
এবার যেখানে খুটি পুঁততে হবে সে জায়গাটা অনুমান করে নিল ও। মাটিটা ভেজা। এই ভেজা মাটিতে খুটি পুঁততে কষ্ট হবে না। একটা আধলা ইটও নিয়ে এসেছে ও। খুটিটা মোটে এক ফুট লম্বা। কাজেই খানিকটা না ঝুঁকে বা না বসে এটা ভালো মতো পুঁততে পারবে না। রায়হান বেশ খানিকটা ঝুঁকে খুটিটা পুঁতে ফেলল। আর মনে মনে ভাবতে লাগল, বোকাগুলো ভোরে এসে যখন দেখবে খুঁটিটা এখানে তখন নিশ্চয়ই বুক ফুলিয়ে আর কখনো বলতে পারবে না- ভূত আছে। জগু আর জামিলের ভূতের বিশ্বাস নিয়ে খানিকটা ব্যাঙ্গের হাসি হাসল। খুটিটা ভালো মতো পরীক্ষা করে দেখল। বেশ শক্ত হয়ে বসেছে। এবার আধলাটা ছুঁড়ে ফেলল খানিকটা দূরে। মনে হয় ঝোপের মধ্যে গিয়ে পড়েছে। কান পেতে শব্দটা শুনলো ও। এবার ফিরতে হবে। ঘুরে হাঁটতে শুরু করলো রায়হান। কিন্তু এ কি? ও হাঁটতে পারছে না। কে যেন ওকে পিছন থেকে টেনে ধরে আছে। বেশ খানিকক্ষণ চেষ্টা করলো রায়হান। হঠাৎ ওর মেরুদণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে এল। ঘাড়টা কেমন চিন চিন করছে। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। চিৎকার করে জগু আর জামিলকে ডাকতে চাইছে ও। কিন্তু মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরুচ্ছে না। হঠাৎ তীব্র একটা ঝাঁকুনি দিল ওর শরীর। এই ঝাঁকুনিতে শরীরের ভার রাখতে পারল না ও। পড়ে গেল। আর কিছু মনে নেই ওর।
৫.
রায়হানকে যেখানে বিদায় দিয়েছিল সেখানেই ফিরে এল জগু আর জামিল। ওরা অপেক্ষা করছে। হঠাৎ একটা তী² চিৎকার ভেসে এল দক্ষিণ দিক থেকে। ওদিকেই কবরস্থান। জামিল বেশ ভয় পেল। আর জগু?
জামিল হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দ্যাখে জগু নেই। ও গলা ফাটিয়ে চিৎকার করল, জগু জগু বলে। কিন্তু কারো কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। নিমিষে কোথায় গেল জগু? দৌড়ে বাড়ির পথ ধরলো জামিল। ওদের ঘরের উঠোনেই হঠাৎ দেখা জগুর সাথে। জামিল জানতে চাইল, কি রে না বলে হঠাৎ চলে এলি?
জগু বললো, না বলে মানে? আমি তো মাত্র এলাম। স্যরি দোস্ত। আসলে হয়েছে কি, আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙতেই দেখি দেড়টা বাজে। ছুটে চলে এলাম। রায়হান কোথায়?
জামিল বললো, কী বলছিস তুই? এতক্ষণ তাহলে কে ছিল আমার সাথে? তুই এতক্ষণ আমার সাথে হাঁটাহাঁটি করলি না?
জগু বললো, কী যা তা বলছিস। আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। আচ্ছা টর্চটা নিয়ে আয় তোর ঘর থেকে।
জামিল দৌড়ে ঘর থেকে টর্চ নিয়ে এল। তীব্র আলো টর্চটায়। জামিল টর্চের আলো ফেলল জগুর মুখে। সত্যি এটা জগু। তাহলে এতক্ষণ কে ছিল ওর সাথে? ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগলো ওর। আর ঠিক তখনই ওর মনে পড়ল রায়হানের কথা। জামিল বললো, রায়হান তো কবরস্থানে। ওখান থেকে এটা চিৎকার শুনলাম। চিৎকার শুনেই দেখলাম আমার পাশে তুই নেই। তারপর দৌড়ে চলে এলাম এখানে।
জগু বললো, আবারও ভুল করছিস। তোর পাশে আমি থাকতে যাবো কেন? আচ্ছা ওটা নিয়ে পরে কথা বলবো। এখন চল রায়হানের কী হলো দেখে আসি।
জামিল আর জগু চলে এল সোজা কবরস্থানে। এসে দেখে রায়হান মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু রায়হানকে তুলতে গিয়ে তুলতে পারলো না। কিসের সাথে যেন আটকে যায়। ভালো মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল, রায়হানের লুঙ্গি আটকে আছে খুটির সাথে। যে খুটিটা রায়হান পুঁতেছিল, খুটির সাথে নিজের লুঙ্গিটাও পুঁতে দিয়েছে। জামিল বললো, তাহলে ব্যপারটা এই! এটাকেই ভূতের ভয় ভেবে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে?
জগু বললো, এটা ওকে জানানো যাবে না।
জামিল বললো, ও এমনিতেই জেনে যাবে।
জগু অবাক হয়ে বললো, আমরা কেউ না বললে কেমন করে জানবে?
জামিল বললো, ওর লুঙ্গিতে ছিদ্রটা দেখেই ও যা বোঝার বুঝে যাবে।
একটু পর জ্ঞান ফিরল রায়হানের। জ্ঞান ফিরতেই রায়হান বললো, আমাকে কি ভূতে ধরেছিল?
জামিল বললো, নয় তো কী?
রায়হান বললো, যাহ। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল কে যেন আমাকে পিছন থেকে ধরে রেখেছে। ভূতরা কি পিছন থেকে টেনে ধরে রাখে?
জগু বললো, রাখতে পারে। সব ভূত তো আর একরকম নয়। একেক ভূত একেক রকম। ভূত যে আছে এবার কি বিশ্বাস হলো?
রায়হান কোনো জবাব দিল না। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো জামিল আর জগুর দিকে।
জামিল বললো, ঠিক আছে। আমরা ধরে নিচ্ছি মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ।
এবার খেপে গেল রায়হান, আমি এখনও ভূতে বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয় অন্য কিছু ঘটেছিল।
জামিল বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। তুই ভূতে বিশ্বাস করিস না। কিন্তু ভূতকে তো ভয় পাস?
এবার আর কোনো কথা বললো না রায়হান। ওর কোমল চাহনি বুঝিয়ে দিল সত্যি ভূতের ভয় ওরও আছে।
জামিলের ঘরে এল তিনজন। পুরো ঘটনা শুনল জগু। শুনল রায়হানও। সত্যি ভূত নেই এটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু জামিলের সাথে যে হাঁটল, সেটা জগু নয়। তাহলে কে সে? রূপা নয় তো! জগুর রূপ ধরে জামিলের সাথেই ছিল। অন্য কিছু? নাকি এটা রহস্যই থেকে যাবে সারাজীবন? যেমন রহস্যময় ছিল তেলবাহী জাহাজের সেই দুই ভূত।
আপনাদের জন্য স্পেশাল ভুতের গল্প।
No comments:
Post a Comment