Responsive Ads Here

20 January 2012

তেঁতুল বনে জোছনার খোঁজ

বিশ মিনিটের মধ্যে ফিরে এলো সাজিদ। ওকে ভীষণ নিস্পৃহ লাগছে। আমি প্রশ্ন করি, ‘কীরে কী হইলো? ছেড়ে গেছিস কিছু?’ ও বলে, ‘যাবো না।’ আমি অবাক হই। ‘যাবি না মানে, ঝামেলা হইছে কোনো?’ ও বলে, ‘এইসব আর ভাল্লাগে না।’ সাজিদ ‘তেঁতুল বনে জোছনা’ টেবিলের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বিছানায় ধপাস করে বসে। তিন বছরে এটা সাত নম্বর ‘তেঁতুল বনে জোছনা’,বুদ্ধিটা অবশ্য আমি ওকে দেই। এই বইটা প্রথম সাক্ষাতে গিফ্ট করে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করা সহজসাধ্য বলে আমার অনুমান। আর ফলাফল হবে পজিটিভ। গল্পের মূল চরিত্র ডাক্তার বলেই বুঝি বইটার প্রতি আমার পক্ষপাতিত্ব একটু বেশি। তাই আমরা প্রতিবার লাইব্রেরিতে গিয়ে তেঁতুল বনে জোছনা খুঁজি। সাজিদ শেষ পর্যন্ত তেঁতুল বনে ভূত খুঁজে পায়।

আমি চেয়ার ছেড়ে সাজিদের পাশে গিয়ে বসি। ‘হঠাৎ আবার কি মনে আসলো তোর? যাবি না ক্যান?’ সাজিদ বলে, ‘অনেক তো হইলো। ভেবে দেখলাম এইবারও আগের মতোই হবে। আমার কপালটাই খারাপ বুঝছিস।’ আমি বলি, ‘কপালের দোষ দিয়া কি করবি? কপাল তোর ভালোই আছে। সর্বোত্তমের জন্যই হয়তো এতো বিলম্ব হইতেছে।’ ও বলে, ‘আর মেয়েগুলারে এইভাবে কেবল একটা দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার তো কোনো মানে হয় না। গত তিন বছরে এই নিয়া সাতজন। ফেইসবুক, মিগ দিয়া এসব হয় না বুঝছিস। একটারে যদি ভাল্লাগতো!’ বলতে বলতে সাজিদ মাথার এপাশ থেকে ওপাশে দুই হাতে জোরে ডলা দেয়। নিজেই নিজেকে সান্ত¦না দেয় বুঝি। ও আবার বলতে শুরু করে, ‘কী আর হবে। এটাও আগের মতোই হবে। কণ্ঠে তো মধু ঝরে, আর দেখলেই...ধুর। ভাল্লাগে না আর।’ আমি বলি, মৌসুমীকে তুই তো দেখলি না। দেখাটা অন্তত কর। পছন্দ না হলো আগের মতো সিম বদলাবি। পুরাপুরি ক্রস। আমি হাসার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেকে নিবৃত করি। ও আবার বলতে শুরু করে, ‘এইসবের কোনো মানে হয় দ্যাখ। একটা মেয়ের সাথে এতোদিন কথা বললাম। আজ দেখা করবো, পছন্দ হবে না। সাথে সাথে সিম চেঞ্জ। সম্পর্ক কাট। নিজেরে মনে হইতেছে একটা রাক্ষস। তাজা মাংসের লোভে খালি লুচ্ছামি করতেছি। পার্সোনালিটির ধার না ধেরে ব্যক্তিগত সব কথা শেয়ার করতেছি। এই মেয়েটার কথাবার্তা খুব ভাল্লাগতো। আন্তরিক। কিন্তু দেখার পর কী হবে এই সংশয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আর যাবো না। এগুলাতে আমি আর নাই বুঝছিস।’ আমি আর কথা বাড়াই না। বলি, দেখ যা ভালো মনে হয় কর।

সাজিদ বিছানায় উবু হয়ে শোয়। আমি চুপচাপ। একসময় ও ঘুমায় হয়তো। আমি ঘণ্টা দুয়েক পরে প্রেসকাবে যাওয়ার জন্য রওনা হই। ওকে আর জাগাই না। অটোরিকশা হওয়ায় যাতায়াতের এখন বেশ সুবিধা। মেডিকেল মোড় থেকে জাহাজ কোম্পানি মোড় মাত্র পাঁচ টাকা। আমি যে অটোরিকশায় উঠি তার চালকের ভাগ্য বরাবরই ভালো। দেখা যায় সবকটা সিটের যাত্রী পেয়ে যায়। কিন্তু আজ আমি কুফা। যাত্রী আমি একা। সুরভী উদ্যানের সামনে চালক অটোরিকশা থামায়। এদের দৃষ্টি প্রখর। কে উঠবে না উঠবে এজন্য এরা দৃষ্টিক্ষেত্র চারপাশে প্রসারিত করে রাখে। একটা মেয়ে উঠে এসে বসে। মহা একটা টাশকি খাই আমি। এ কী জিনিসরে ভাই? এমন সুন্দর মেয়ে পৃথিবীতে থাকতে পারে? মেয়েটি বারবার মুঠোফোন ডায়াল করে আর কানে ধরে। নিরুপায় হয়ে আবার নামিয়ে আনে। সংযোগ পাচ্ছে না বোধ হয়। আকস্মিকভাবে আমি মেয়েটির চোখের কোণে পানি ঝরার পূর্বাভাস পাই। মুহূর্তেই তা পরিণতি লাভ করে। আমি অবশ্য আলাদা থিওরি নিয়া চলি। প্রেম করার জন্য কাক্সিক্ষত মেয়েটিকে জানাতে হবে এমন কোনো কথা নাই। তোমারে যখন দেখছি, ভালো লাগছে, তো তুমি আমার বিছানায় চইলা গেছো। মেয়েটি যেহেতু মাথা নিচের দিকে করে আছে, তাই তার দিকে সরাসরি তাকাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমার খুব মায়া লাগে মেয়েটির জন্য। আমি ইথারে ভাসিয়ে দেই, যাও তোমাকে মুক্তি দিলাম। আর তুমি কাঁদো কেনো মেয়ে? কার জন্য কাঁদো তুমি? যাও তোমাকে আশীর্বাদ করলাম অথবা দ্বিতীয় কাউকে অভিশাপ দিলাম, যার জন্য তুমি কাঁদো সে যেন জনম জনম কাঁদে। ##


লিখেছেন-shaheduzzaman lingkon

No comments:

Post a Comment