Responsive Ads Here

20 January 2012

অসমাপ্ত ডায়েরি.....(১ম পর্ব)

[হঠাত করেই ডায়েরিটা এসে যায় আমার হাতে ।কি মনে করে যেন বন্ধু তমালের বাসায় গিয়েছি ।দেখি সে তার পুরনো বই খাতা পত্র বিক্রি করছে ।কাগজওয়ালা খাতাপত্র ওজন করছিল ,আর আমি দাঁড়িয়ে দেখছিলাম ।অকস্মাত্‍ চোখ আটকে গেল কাগজওয়ালার ঝুড়িতে থাকা একটা অপরিচ্ছন্ন মলিন সোনালি মলাটের ডায়েরির ওপর ।অন্যের ব্যক্তিগত ডায়েরি চুরি করে পড়া আমার কাছে নেশার মত ।ডায়েরিটা তুলে নিলাম ঝুড়ি থেকে ।জরাজীর্ণ ডায়েরিটা বহুদিনের অযত্ন আর অবহেলার সাক্ষ্য বহন করছিল । অনেকদিন পর তাতে যত্নের ছোঁয়া লাগল ।কাগজওয়ালা মামাকে ২টাকার একটা নোট দিতেই খুশি মনে চলে গেল ।বাসায় এসে ডায়রিটা পড়া শুরু করলাম ।খুবই সহজ সরল ভাষায় লেখা একটা আত্মকথন ।লেখাগুলো নিয়মিত নয় ।আর আছে অজস্র বানানের ভুল ।তাই কিছুটা পরিমার্জন করতে হল আমাকে ।]

২৮ফেব্রুয়ারি ,২00৬
ডায়েরি কিভাবে লিখতে হয় তা আমার জানা নেই ।জানার কোন প্রয়োজন ছিল না ,প্রয়োজন মনেও করি নি কোনদিন ।কিন্তু জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যাতে ভাঙাকুলার মত অপ্রয়োজনীয় জিনিসটাও হয়ে ওঠে সবথেকে দামী ।আমার জীবনে এই ডায়েরির ভূমিকাটাও তেমনি ।এখন এই ডায়েরি লেখাটা আমার প্রয়োজনীয় কাজগুলোর মাঝেই একটি ।বেশ ভালোভাবেই বুঝে গেছি যে আমাকে লিখতে হবে ।নিজের মাঝে কত কথাই বা জমা করে রাখা যায় ।শেয়ার করার জন্য তাই বেছে নিয়েছি এই ডায়েরিটাকে ।কোন এক বিজ্ঞানী একদা বলেছিলেন ,জড়বস্তুরও অনুভূতি আছে ।সত্য হোক বা না হোক আমি এই কথাটাকে বিশ্বাস করতে চাই ।দেখেছি যে এই বিশ্বাস আমাকে কেমন হালকা করে দেয় ।


১মার্চ ,২০০৬

আমি একটা চরম বখাটে ছেলে ।তবে এই বখে যাওয়ার পিছনে বোধহয় নিয়তিই দায়ী ।আসল মাকে কোনদিন চোখে দেখি নি ,ঘরে ছিল সত্‍ মা ।তাই অত্যাচার অনাদর অবহেলা ছিল আমার নিত্যসঙ্গী ।সেই সাথে সমাজেরও ছুঁড়ে ফেলা স্বভাবের কারণে জীবন হয়ে উঠেছিল বিষময় ।তাই কিছুটা আনন্দ ,কিছুটা শান্তির আশায় বন্ধু বান্ধব নিয়ে পড়ে থাকতাম অলিতে গলিতে ।আমার খোঁজ নেওয়ারও দরকার মনে করে নি কেউ ।আর তাই ভালো হবার চিন্তাটাও মাথায় আসে নি কোন দিন ।এভাবে থাকতে থাকতেই একদিন হাতে উঠে সিগারেট ।নৈশ আড্ডায় মাঝে মধ্যে চলত মদ কিংবা গাঁজাও ।কেউ নিষেধ করেনি ,ভুল শুধরে দিতে এগিয়ে আসে নি ।শুধু দেখতাম মানুষ আমাকে যেমন ঘৃণা করত তেমনি আবার ভয়ও পেত ।বাড়িতে বেশি একটা থাকতাম না ।সত্‍ মা আমার মৃতা মাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০১টা অভিশাপ দিত আমার মত কুলাঙ্গারকে পেটে ধরার জন্য ।এসব শুনতে আমার ভাল লাগত না ।সিগারেট খেয়ে জ্বালা জুড়াতাম ।অবিরাম সিগারেট খেতে খেতে ঠোঁট কুচকুচে কাল বানিয়ে ফেলেছি ।
আর আমার বন্ধুরাও তেমনি ।এখন সবাইকে নিয়ে পড়ে থাকি রাস্তার পাশের একটা সিডি দোকানে অথবা রশিদ মিঞার টংয়ের দোকানে ।সারাদিন সেখানে চলে আমাদের শয়তানী কান্ডকারখানা ।কাজের মধ্যে ছিল শুধু রাস্তা দিয়ে যাওয়া স্কুল কলেজপড়ুয়া মেয়েদের উত্যক্ত করা ।অনতিদূরেই আছে একটা গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজ যেখানে দুই শিফটে ক্লাশ চলে । তাই আমাদের পোয়াবারো ।এটাই আমাদের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ।
কারও আদর ভালবাসা পাইনি জীবনে ।তাই ভালবাসার মূল্যও আমি বুঝি নি কোনদিন ।আর প্রেম-ভালবাসা ছিল আমার কাছে উলুবনে ছড়ানো মুক্তার মত ।ভালোবাসা বলে কিছু আছে তা আমি বুঝতাম না ,শুধু জৈবিক সম্পর্কটাই খুঁজে পেতাম ,আমার জন্য এটাও কোন অস্বাভাবিক কিছু নয় .....শুধু ঐ দিনটার আগ পর্যন্ত ।

২২ফেব্রুয়ারি ,২০০৬
[ডেট সিক্যুয়েন্সের এই ওলটপালটটা তারই করা ।এছাড়া সিনট্যাক্সঘটিত ভুলও রয়েছে লেখার মধ্যে ।তবে একে ছেলেটির স্বভাববিরুদ্ধ অপটু হাতের লেখা বলেই মেনে নিয়েছি ]

অন্যান্য দিনের মতই বসে আছি সিডি দোকানটাতে ।একা নই ,সাথে সঙ্গীরাও আছে।সমানে সিগারেট ফুঁকছি।আজ কলেজ বন্ধ ,তাই কাজও নেই ।প্রায় দুপুর হয়ে আসছে ।রাস্তায়ও বেশি মানুষ নেই খুব একটা ।এসময় হঠাত্‍ করেই একটা মেয়েকে আসতে দেখলাম ।একা ।তার উপর রাস্তাও ফাঁকা ।আমরা একটা উত্‍সবের গন্ধ পাচ্ছি ।মেয়েটা এগিয়ে আসছে ।কাছে ,আরও কাছে ,একেবারে সামনে ।তখনি ঘটে গেল সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ।আমি মেয়েটিকে টিজ করতে পারছি না ।কেন জানি না। মুখের কথা মুখেই আটকে গেছে ।নড়তে পর্যন্ত পারছি না যেন জমে গেছি ,আশেপাশে কি হচ্ছে কিছুই টের পাচ্ছি না ।আমি শুধু তাকিয়ে আছি,একদৃষ্টিতে ।পলক ফেলতে পর্যন্ত ভূলে গেছি ।মেয়েটা চলে যাচ্ছে মাথা নিচু করে ।এসময় ঘটল আরও একটা ঘটনা ,এও অপ্রত্যাশিত ।মেয়েটি তাকাল যা কোন মেয়ে করে না ।চোখ বিস্ফোরিত হলো যেন ,এত সৌন্দর্য ! এও সম্ভব ! তবে হঠাত্‍ই বুঝতে পারলাম তার তাকাবার কারণটা ।আমার সঙ্গীরা যে তাকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিঁয়ে যাচ্ছে অকথ্য ভাষায় ।মাথায় ছোটখাট একটা বজ্রপাত হলো ।মেয়েটার এই দৃষ্টিকে আমি চিনি ।কারণ মানুষের কাছ থেকে সচরাচর যে দুধরনের দৃষ্টি আমি পেয়ে থাকি এ তারই একটি ।তার সেই দৃষ্টির সামনে আমি সিগারেটের ধোঁয়ার মতই উড়ে যাচ্ছিলাম ।ইচ্ছে করছিল ধোঁয়ার মত বাতাসে অদৃশ্য হয়ে যেতে। কিন্তু তা তো পারব না ।
হঠাত্‍ কি হল আমার জানি না ।ঘুরে গেলাম পিছনদিকে আর বিরাট এক ধমক দিয়ে বসলাম সঙ্গীদের ,থামার জন্য ।তারা সাথে সাথেই থেমে গেল ।তাদের উপরও যেন সহসা বজ্রপাত ঘটল ।অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে দেখছে আমাকে ।দেখারি কথা ।আমি নিজেও তো কম অবাক হই নি নিজের আচরণে ।আচ্ছা মেয়েটি কি ভাবছিল ? সেও কি অবাক হয়েছিল ?জানি না ,কারণ ঘুরে তাকাতে পারি নি ।তাছাড়া কোন মেয়ের অবাক হওয়া চেহারা কেমন দেখতে তাও আমার জানা নেই ।
[দেখলাম সব জায়গায়ই ছেলেটি "বন্ধু "শব্দটি কেটে এরো দিয়ে "সঙ্গী" শব্দটি লিখেছে ।এর কারণ তখন বুঝিনি ।]

২৩ফেব্রুয়ারি ,২০০৬
সকাল
কয়েকটি প্রশ্ন (নিজেকেই ):এটা কি হল ?কেন হল ?মেয়েটিকে দেখে আমার এমন অনুভুতি কেন হল ?এমনতো কখনও হয় নি ?এ অনুভূতির নাম কি ?
এমন অদ্ভুত আচরণই বা কেন করলাম ওদের সাথে ?সারাজীবন তো টিজই করে এসেছি আর আজকে ওদের ধমক দিয়ে বসলাম ?কেন ???
উত্তর :জানি না ।।সারারাত ধরে ভেবেছি গতকালকে ।বের করতে পারি নি ।এই অনুর্বর মস্তিষ্ক দিয়ে বের করতে পারব বলেও মনে হয় না ।এমন কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন কখনো হই নি আগে ।তাই উত্তরটা সময়ের জন্যই তোলা থাক ।



২৭ফেব্রুয়ারি ,২০০৬

রাস্তার এমাথা ওমাথা ,কলেজের আশেপাশে যে কতবার চক্কর দিয়েছি তার হিসাব নাই ।রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসা সবগুলো মেয়েকেই লক্ষ্য করেছি ।কিন্তু সেদিনের সেই চেনা ,আকাঙ্ক্ষিত চেহারাটাকে খুঁজে পাই নি কোথাও ।

৪মার্চ ,২০০৬

বাসে করে ফিরছিলাম শহর থেকে ।আমি আবার কখনই বাসের ভাড়া দেই না ।যদি কোন হেল্পার একটু তোড়জোড় করে তবে তার কপালে জোটে গালিগালাজ কিংবা মাইর ।গাড়ি ভাঙচুরের ইতিহাসও আমার রয়েছে ।তাই এখন আর কোন হেল্পার আমার কাছে ভাড়া চাইতে আসে না ।এদের সবকটাকেই অবশ্য বলা যায় যে চিনি ।তবে আজ একটা ছোকড়াটাইপ অল্পবয়সী হেল্পারকে দেখলাম ।মনে হয় নতুন ,আমাকে চিনে না ।দুম করে ভাড়া চেয়ে বসল ।
একটু ঝাঁঝের সাথে বললাম -আমি বাসে ভাড়া দেই না ।
ছোকড়াটা আসলেই আমাকে চিনে না বোঝা গেল ।সে তোষামোদ শুরু করল ।রাগে চোখদুটো জ্বলে উঠল আমার,ওর কলারটা চেপে ধরে একটা রামধমক মেরে সাথে সাথে ওঠে দাঁড়িয়ে গেলাম ।বুঝলাম ছোকড়াটার কপালে কিছু শনি আছে ।ঠিক তখন হঠাত্‍ই আমার চোখ পড়ে গেল কয়েকসীট সামনে ।এভাবে ?লোকাল বাসে ?! আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না প্রথমে ।ধমকাধমকি শুনেই বোধ্হয় মেয়েটা তাকিয়েছিল ,একনজর ।তারপরই মুখ ঘুরিয়ে নিল ।আমাকে খেয়াল করেছে কিনা জানি না ।তবে ততক্ষণে আমি দমে গেছি ।যে ঝাঁঝ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম তা যে কোথায় উধাও হয়ে গেল ।নিজের কণ্ঠস্বর শুনে নিজেই চমকে উঠলাম ।এত শান্ত ভাবে ও আমি কথা বলতে পারি ।
জিজ্ঞেস করলাম -ভাড়া কত ?
ছেলেটা হতভম্ব ,প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছিল ।আমতা আমতা করে বলল -"ভাড়া লাগবে না স্যার ।"
কিন্তু আমি পকেট হাতড়ে ১০টাকার একটা নোট বের করে গুজে দিলাম তার হাতে ।আমার মধ্যে শুরু হয়ে গেছে অচেনা কালবৈশাখী ।জানি থামাতে পারব না কোনমতেই ।
আমার দৃষ্টি তখনও সামনের দিকে ।ভাঙতি ফেরত নিয়ে বসতে যাব তখনি শুনি মেয়েটা তার পাশের লোকটাকে বলছে -"ভাই,স্মোকিং টা যদি বন্ধ করতেন প্লিজ ।সিগারেটের গন্ধে আমার বমি আসে" কিন্তু লোকটা সিগারেট ফেলে দিল না বরং আয়েশি ভঙিতে টানতে লাগল ।দেখে তো রাগে আমার সারা শরীর জ্বলতে লাগল ।আরেকটু হলেই লোকটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতাম জানালা দিয়ে ।কিন্তু তার আগেই বিধাতার গড়ে দেয়া এক অদৃশ্য দেয়ালে বিশাল এক ধাক্কা খেলাম ।আমি নিজেই তো একজন চেইন স্মোকার ।আমার হাতেও যে জ্বলন্ত সিগারেট ।মুখে সিগারেটের গন্ধ ।গন্ধ ?! হ্যাঁ ,তাই ।হঠাত করেই এই বোধটা আমার মাথায় আসল ।ননস্মোকারদের কাছে সিগারেটের গন্ধ তাহলে এমনই ।আর তাহলে তো আমি গন্ধের মধ্যেও দুর্গন্ধ ।কারণ আমি যে শুধু সিগারেটেই তা নয় ,আমি তো এরচেয়েও বেশিকিছু ।সহসা একটা জেদ চাপল মনের মধ্যে ।হাতের সিগারেটটা সহ পকেটে থাকা সব সিগারেটগুলোকে বের করে দুমড়ে মুচড়ে প্যাকেটসহ ছুঁড়ে দিলাম বাইরে জানালা দিয়ে ।মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে কয়েকটা শব্দ -সিগারেটের গন্ধে আমার বমি আসে ।

৮মার্চ ,২০০৬

আজও দূর থেকে দেখেছি তাকে ।না না ,কাছে যাই নি ।ভয়ে ,যদি বলে বসে "সিগারেটের গন্ধে আমার বমি আসে"
আমি অবশ্য কোন গন্ধ বুঝি না ।বুঝব কিভাবে ?আমি নিজেই তো সিগারেটের আধার ।ভাগাড় নিজে কি জানে তার গায়ে কতটা দুর্গন্ধ ? অথবা ডাস্টবিন কি বুঝে সে কতটা গন্ধ ছড়ায় তার চারপাশে ?

৭এপ্রিল ,২০০৬

নিজের মধ্যে পরিবর্তনটা খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছি ।এখন আর সেই সিডি দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকি না ।টংয়ের দোকানেও আড্ডা মারা হয় না বেশি একটা ।তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা হয়েছে সিগারেটের মাঝে ।যে আমি দিনে কমপক্ষে দেড় দু প্যাক সিগারেট ছাড়া চলতেই পারতাম না ,এখন সেখানে কয়েকটা সিগারেটেই দিব্যি দিন পার করে দিচ্ছি ।নিজেই নিজেকে বুঝতে পারি না আমি ।এজন্যই বুঝি আমরা মানুষ ।সত্যিই বড় আজিব চিড়িয়া ।
তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হয় যে এজন্য আমার সাথে সৌরভ ,রফিক ,শিশির ,রিয়েন ,অনিক ওদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে ।ওরা আমার এই পরিবর্তনটা নিতে পারছে না ।প্রথম দিকে এ নিয়ে অনেক হাসি তামাশা ,ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছে ।কিন্তু যখন বুঝেছে যে আমি কেবল বলার জন্যেই বলিনি ,বরং সত্যি সত্যি চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছি তখন ওদের মাঝে আমিও কেমন যেন চেঞ্জ দেখতে পেয়েছি ।অন্তরঙ্গতাটাও আর আগের পর্যায়ে নেই ।তবে আচ্শর্য হয়ে লক্ষ্য করছি ওদের সাথে না মিশতে পারাতে আমার তেমন খারাপ লাগছে না ।এমন কি সময় সময় ওদের কথা ভুলেই যাচ্ছি ।এখন আমার চিন্তা জুড়ে থাকে একটি মেয়ে ,যার সাথে এখন পর্যন্ত একটি কথা পর্যন্ত হয় নি ।কি আশ্চর্য !

১৬এপ্রিল ,২০০৬

আজকাল এমন অনেক দিন চলে যাচ্ছে সিগারেট ছাড়াই !আমার মাঝে লুকিয়ে থাকা এক অচেনা আমিকে খুঁজে পেয়েছি ।ছন্নছাড়া সে জীবনটাকেও অনেকখানি গুছিয়ে ফেলেছি ।নিজেকে দিয়েই বুঝতে পারছি মানুষ চাইলেই কত সহজে বদলে যেতে পারে ।তবে তার জন্য প্রয়োজন উত্‍সাহ ,প্রেরণা যা আমি পরিবার থেকে কথনই পাই নি ।তাহলে আমার জীবনটা নীঃসন্দেহে আরো অন্যরকম থাকত ।তবে এখন আমাকে এক অজানা শক্তি পরিচালিত করছে ,এর স্বরূপ বুঝার চেষ্টা করছি । এটাই কি সেই অধরা ভালোবাসার শক্তি ? তা কি করে হবে ,আমি যে কাউকে কিছুই বলি নি ।

১৯এপ্রিল ,২০০৬

আজ সকালে খাবার পর হঠাত্‍ই একটা সিগারেটের ইচ্ছা হলো ।অনেকদিন খাই নি ।দোকানে গেলাম ।সিগারেট কিনে ঠোঁটে পুরলাম ।লাইটারটা কেবল জ্বালিয়েছি এমন সময় দেখি সে আসছে ।সাথে দুজন বান্ধবী ।ধ্বক করে উঠল বুকের মাঝে ।যেন খুন করে ধরা পড়ে গেছি ।ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠতেই সিগারেটটা পড়ে গেল নিচে ।মেয়েটি হয়তো দেখে ফেলেছে ।সিগেরেটটা পা দিয়ে মাড়িয়ে আমি উল্টোদিক ঘুরে চলে গেলাম ।
শরীর কাঁপছে ।আশ্চর্য !আমি ভয় পেলাম !কিসের এত ভয় ?হারাবার ভয় ?আমার দিকে হয়ত আর তাকাবেনা এই ভয় ?
অবশেষে নিশ্চিত হলাম এটাই ভালোবাসা যা এতদিন আমার কাছে ছিল সাত সাগর আর তের নদীর ওপারের কোন কল্পদৃশ্য ।অনুভূতিটা প্রকট হয়ে উঠল ।মেয়েটাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি ।ঘোর অমাবস্যা রাতে পূর্ণিমা চাঁদ দেখতে পেলাম আমি ,কেবলি আমি ,আর কেউ নয় ।

কিন্তু পরক্ষণেই সে জ্যোছনার আলো ফিকে হতে লাগল ।অমাবস্যা রাতে হঠাত্‍ চমকানো কোন বিজলীর মত । হয়ত আমি অনেক পরিবর্তিত হয়েছি কিন্তু সমাজের চোখে তো এখনও সেই বখাটেই রয়ে গেছি ,অমানুষ নামটা এখনও আমার পরিচায়ক ।ভালোবাসা জানানোর পক্ষে যা প্রায় অনতিক্রম্য এক বাঁধা ।
পৃথিবীতে মানুষের ভালোবাসা প্রকাশের অনেক ভাষাই হয়ত রয়েছে কিন্তু অমানুষের ভালোবাসা প্রকাশের কোন ভাষা আছে বলে তো আমার জানার নেই ।

[লেখাগুলো বড় বেশি অনিয়মিত ।অগোছালো আর খাপছাড়াও বটে।তবে মেয়েটার প্রতি তার যে ক্রমবর্ধমান ভালোবাসার জোয়ার দেখেছি তাতে বিন্দুমাত্র বিরতি নেই ।নেই সামান্যতম ভাঁটার টানও]


১২মে ,২০০৬

বন্ধুদের সাথে আমার সে দূরত্বটা বেড়েই চলছিল ।অবশ্য আমিও তাই চাচ্ছিলাম ।সেইসাথে চাচ্ছিলাম এটা যেন বজায়ও থাকে ।কিন্তু শুধু আমি চাইলেই তো আর হচ্ছে না ,ওরা যে এখন অনেকটা বেপরোয়া ।এভাবে দিনের পর দিন কি ছুতো দিয়ে তাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় ?যায় না ।কখনো না কখনো আমাকে ধরে ফেলবেই ।হাজার হোক এতগুলো বছর ধরে এই বন্ধুরাই ছিল আমার প্রতিদিনকার জীবন ।এই বন্ধুরাই ...
বন্ধু ?না ,তাদের সাথে আমার সম্পর্কটা আর যাই হোক বন্ধুত্বের পর্যায়ে পড়ে না ।বন্ধুত্বের আসল মানে না জানলেও এটা অন্তত জানি যে ,বন্ধুরা সবসময় একে অন্যের ভালোই চায় ।আর এরা ?
আসলে খারাপ পথে কেউ কারও বন্ধু হতে পারে না ,হয় সঙ্গী ।চোরে চোরে মাসতুতু ভাই যেমন তেমনি বহু দূরের একটা নামমাত্র সম্পর্ক ,কখনই বন্ধুত্বের মত আত্মার বন্ধন না । আর তাই এসব সঙ্গীরা আমার পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারে নি ।এসব সঙ্গীরা অন্য সব সঙ্গীকে একই স্তরে কিংবা আরো খারাপের স্তরেই দেখতে চায় ।আমার মাঝে ভালো খারাপের বিবেচনা দেখে ওরা বিরক্ত হয় ।দুদিনের বৈরাগী ভাতকে বলে অন্ন -এমনভাবে দেখে যেন আমি চিড়িয়াখানার জন্তু ।কিন্তু আমি কি করব ?
আমার সামনে যে একজন খুলে দিয়েছে আলোর দুয়ার ।আমি এখন ভালো মন্দ বিবেচনা করতে পারি ,কোন কাজের আগে ভাবতে পারি এটা ঠিক হচ্ছে কি না ।আর পূর্বের কৃতকাজগুলোর জন্যে জাগে গভীর অনুশোচনা ।আমি এসব কাউকে বলতে পারছি না,বোঝাতে পারছি না ।তাইতো এতদিন পর বুঝতে পারছি আসলে আমি একা ।আশেপাশে কেউ কোথাও নেই ।এই সঙ্গীরা আমাকে এইভাবে দেখতে চায় না । চায় না আমি ভালো হই ।তারা চায় আমি ফিরে যাই আমার আগের অবস্থায় ।কিন্তু জানি এখন আর তা হবার নয় ।

হয়ত এতসব কিছুকে থোড়াই কেয়ার করে আমি এগিয়ে যেতে পারতাম ।কিন্তু আমার জীবনতরী যে আগে থেকেই ছিল দিকভ্রান্ত,গতিহীন ।স্রোতহীন নদীর মত আমার জীবননদীর চলার পথও অজস্র শৈবাল আর আগাছার ভীড়ে রুদ্ধপ্রায় ।আমি আজ দিক খুঁজে পেয়েছি ,কিন্তু এই আগাছা শৈবালগুলোকে মাড়িয়ে তরীটাকে সামনে এগিয়ে নিতে একা আমি অক্ষম ।এই জঞ্জালগুলোকে মুক্ত করতে আমার একজন সাহায্যকারী যে অপরিহার্য ।অতীতকে ভুলে আমি আজ আমার বর্তমানকেই আঁকড়ে ধরতে চাই ।কিন্তু কে আছে এমন সাহায্যকারী ?আমি অবশ্য তাকেই আমার এমন সাহায্যকারী হিসেবে ভাবতে চাই ।কিন্তু মেয়েটি কি রাজি হবে ?


৩১মে ,২০০৬

একদিকে মনের অনুভূতি জানাতে না পারার হতাশা আর আরেকদিকে সঙ্গীদের আপ্রাণ আর বেপরোয়া প্রচেষ্টা -আমি দ্বিতীয়বারের মত পরাজিত হলাম জীবনের কাছে ।বহুদিন পরে হাতে উঠল সিগারেট ,যোগ দিলাম নৈশ আড্ডায় ।আবার কিছুদিন চলল আগের সেই ছন্নছাড়া ঘৃণার্হ জীবন ।কিন্তু দ্রুতই বুঝে গেলাম যে আবার পা বাড়িয়ে ফেলেছি ভুলপথে ।মনের মাঝে যে আলাদা একটা স্বস্তি,একটা প্রশান্তি ছিল তা উধাও হয়ে গিয়েছিল ।পুনরায় আমার অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠলাম ।এ আমি কি করছি ?আমার এতদিনের প্রচেষ্টা ,এতদিনের সাধনা সব যে ব্যর্থ হয়ে গেল ।প্রতিজ্ঞা করলাম এ পথে আর নয় ।যা করার আমার নিজেকেই করতে হবে ।সম্পূর্ণ একা ,আমার কোন সাহায্যকারী নেই ।


৪জুন ,২০০৬

আজ ঐ আঁধারবাসী সঙ্গীগুলোর সাথে প্রচুর তর্কাতর্কি আর কথা কাটাকাটি হয়েছে ।আরেকটু হলেই মনে হয় একটা মারাত্মক রকমের মারামারি লেগে যেত । সৌরভ হুংকার ছুড়ে বলল ,"তুই দুদিনের দেখা ঐ সামান্য মেয়েটার জন্যে আমাদের পরিত্যাগ করলি? যে তোর দিকে চাইয়াও দেখে না ?এর ফল কখনই ভালো হবে না ।মনে রাখিস "
এরকম একটা কিছু ঘটতে পারে সে আশঙ্কা অনেক আগে থেকেই করছিলাম ।তবে সৌরভের হুমকিটাকে আমলে নিলাম না ।আর মেয়েটা ওদের কাছে সামান্য হতে পারে ,কিন্তু আমার কাছে সে অসামান্য ,অসাধারণ ,অনন্য ।তবে এই ঘটনাটার জন্য আমার কিছু একটা করার স্পৃহা বহুগুণে বিবর্ধিত হয়ে গেল ।

৬জুন ,২০০৬

ওহ !দিনটা আমার জন্য আসলেই দুর্ভাগ্যের আর মারাত্মক হতাশার ।নিজেকে নিজেই ধিক্কার দিচ্ছি ।এভাবে কাজটা করা আমার মোটেই উচিত্‍ হয় নি ।এমনটা হতে পারে তা কল্পনাও করিনি ।কিন্তু কি করব ?সারাজীবন যেমনভাবে করে এসেছি তার বাইরে গিয়ে কিছু একটা করার কথা যে মাথায়ই আসে নি । আর আমাকে যে কেউ শিখিয়ে দেয়ার নেই ।
মেয়েটা একা হয়ে একটু নির্জন রাস্তায় আসতেই হঠাত্‍ পথ আগলে তার সামনে এসে দাঁড়ালাম ।তখন মাথায় কি ভর করেছিল জানি না ।তবে ঠিকই বুঝেছিলাম ভালোবাসার মানুষের সামনে দাঁড়াতে বুকে কতখানি সাহস লাগে ।
"অনামিকা !"
হ্যাঁ ,মেয়েটার নাম অনামিকা ।নামটা অনেক কষ্টে জেনেছিলাম ।আশা করেছিলাম অনেক কষ্টে হলেও হয়ত মনের কথাটাও জানাতে পারব ।কিন্তু মেয়েটি কোন সুযোগ দেয় নি ।আমাকে দেখেই সে অত্যন্ত ঘাবড়ে গিয়েছিল ।প্রচণ্ড ভয়ে দেখলাম তার ঠোঁট মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে ।হয়তবা আমার বখাটেপনার কথা কারো কাছে শুনে থাকবে ।তাছাড়া আশেপাশেও কেউ ছিল না ।তাই মেয়েটি ভেবেছে সে গভীর জলে জলদানোর মুখোমুখি হয়েছে ।আর কিছুক্ষণ এভাবে চললে হয়ত সে জ্ঞান হারাত আর না হয় চিত্‍কার জুড়ে দিত অজানা আশংকায় ।এমন অবস্থায় মনের কথা বলা যায় না ।তাই আমি চলে এলাম ।তবে আসার আগে তাকে এভাবে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য Sorry বলে এসেছি অত্যন্ত নমনীয় আর কোমলভাবে ।সেইসাথে এমন কাজের জন্য তার কাছে ক্ষমাও চেয়েছি যা আমার জীবনে অভূতপূর্ব ।নিজের বাবার কাছেও তো কোনদিন ক্ষমা চাই নি আমি ।

৭জুন ,২০০৬


ভাবছি কিভাবে অনামিকার সামনে নিজেকে সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারব ?মেয়েটা আমাকে এত ভয় কেন পেল ? আমি কি দেখতে এতটাই ভয়াবহ ?নাকি সেও আমার নামটা বখাটের খাতাতেই রেখে দিয়েছে ? হয়ত বা তাই।এখনো মানুষ আমাকে বখাটে ই বলে ।আসলে ভিতরের পরিবর্তনটা কেউ সহজে দেখতে পারে না ,সবাই দেখে বাইরের রূপটা ।আর আমিও এখনো পরিপাটি তথা স্মার্ট ছেলে বলতে যা বুঝায় তা কখনই ছিলাম না ,এখনও হয়ে উঠতে পারি নি ।
 ১৩জুন ,২০০৬

সৌরভ আর অনিকের সাথে বেশ ভালো রকমের একটা মারামারি হয়ে গেল ।কোথা থেকে কি যে হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না ।যখন বুঝলাম তখন দেখি সৌরভের নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরছে ,বোধহয় নাক ভেঙে গেছে ।আর অনিকের মাথা ফেটে গেছে। রিয়েন আর শিশির ওকে ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে ।রফিক আমাকে জাপটে ধরে আছে ।ঝগড়া পর্যন্ত সব ঠিক ছিল কিন্তু ওদের আমি এইভাবে মারলাম ?
ধ্যাত্‍!এ ব্যাপারে লিখতে একটুও ভাল্লাগছে না ।মনটা ভীষণ খারাপ ।পরে লিখব ।

[এরপর ডায়েরির অনেকগুলো পাতা ছেঁড়া ।হয়ত ছেলেটা লিখেছিল ,কিন্তু পরে নিজেই চায়নি এ লেখাগুলো কেউ পড়ে ফেলুক ।তাই পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলেছে ।আর তা না হয় অন্য কেউ ইচ্ছে করে কিংবা ভুলবশতঃ ছিঁড়ে নিয়েছে পৃষ্ঠাগুলোকে ।তবে বুঝা যায় যে এর মাঝে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা ]

৪জুলাই ,২০০৬

আজ ঘটেছে আমার জীবনের সবচাইতে স্মরণীয় ঘটনা ।এ ক্ষণস্থায়ী মুহুর্তটাকে আমি কিছুতেই ভুলব না ।
হঠাত্‍ করেই শুরু হয়ে গেল বৃষ্টিটা ।বেশ জোরেশোরেই ।সহজে থামবে বলে মনে হচ্ছে না ।এই তুমুল বৃষ্টির মাঝে আমি ছাতা হাতে ছুটে যাচ্ছি ইয়াছিনের দোকানের দিকে ।হাতে ছাতা কিন্তু ফুটাচ্ছি না ,ভিজে ভিজেই যাচ্ছি।এমন নয় যে আমার কিছু প্রয়োজন ।শুধু মন বলছিল ।অনুভব করছিলাম একটা অজানা আকর্ষণ ।আর নাবলা একটা স্বপ্নের আহ্বান ।মনে হচ্ছিল যে তাকে পাব ,সে দাঁড়িয়ে থাকবে ।অনেকদিন যে তাকে দেখি নি ।
দোকানে পৌঁছার পর আমি অবাক ,বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি ।অনামিকা ,হ্যাঁ আমার অনামিকাই ।দাঁড়িয়ে আছে ।আচ্ছা আমি কিভাবে টের পেলাম ?আমার তো জানার কথা নয় !এটাই তাহলে ভালোবাসার রহস্যময় শক্তি ।লক্ষ্য করলাম অনামিকার চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ । তবে কি সে বৃষ্টি পছন্দ করে না ?
বার বার ঘড়ি দেখছে অনামিকা ।হঠাত্‍ই চোখাচোখি হয়ে গেল ।মুহুর্তেই তার মুখ থেকে বিরক্তির ভাবটা চলে গেল ।সেখানে সামান্য ভীতি ,তবে তার চেয়েও বেশি বিস্ময়ের ছাপ ।চোখ নামিয়ে একপাশে সরে গেল ।আমি এগিয়ে গেলাম ।সে আরেকটু সরে গেল ।আমি তার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালাম ।তার পিছানোর কোন জায়গা নেই ।এবার তার চোখে দেখলাম স্পস্ট ভীতির ছায়া ।আমি হেসে ফেললাম এটা বুঝাতে যে আমি তার কোন ক্ষতি করতে আসিনি ।তবে খুব সতর্কভাবে আবার না ভিলেনমার্কা হাসি হয়ে যায় ।মনে হয় কিছুটা কাজে দিল ।কোন কথা হল না ,যা বলার সব যেন চোখে চোখে ।আমি ছাতাটা বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু সে নিল না ।ভীতি,সংকোচ ,দ্বিধা ,জড়তা ,বিস্ময় সব একসাথে কাজ করছিল তার মাঝে ।আমি ছাতাটা তার পাশে ফেলে রেখে চলে এলাম ।অনামিকা হয়ত ছাতাটা কখনই নিত না । কিন্তু যখন দেখল এছাড়া কোন উপায় নেই ,ভিজে যেতে হবে পুরো রাস্তা তখন ছাতাটা উঠিয়ে নিল ।আমার দেওয়া ছাতা মাথায় সে নেমে পড়ল রাস্তায় ।আড়াল থেকে দেখলাম সবই ।কি যে ভাল লাগছিল বলে বোঝাতে পারব না ।অবশেষে বৃষ্টির ঝাপটায় যখন তার অবয়বটা ঝাপসা হতে হতে মিলিয়ে গেল তখন ফিরে এলাম ।মনে আনন্দের ঝড় ।অনেকক্ষণ ভিজলাম অঝোর বৃষ্টিধারায় ।এ এক অসাধারণ অনুভূতি ।
হয়নি বলা কোন কথা ,শুধু হয়েছে অনুভূতি ...

আমার ফিকে হয়ে যাওয়া স্বপ্নটা আবার প্রাণ ফিরে পেল ......একসময় জীবনে কোন স্বপ্ন ছিল না ,জানতামই না স্বপ্ন দেখতে ।তবে এখন শিখেছি কেমন করে স্বপ্ন দেখতে হয় ।তাই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি ,ঘুরেফিরে অবশ্য সে একই স্বপ্ন বারবার ।একঘেয়েমি লাগে না ,বিরক্তও হই না ।কারণ এটা যে আমার সারাজীবনের স্বপ্ন ,বিধাতার কাছে আমার এক অমোঘ চাওয়া ।এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন কি হবে না ?অবশ্যই হবে ।আমি আশা ছাড়ি না ।স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার স্বপ্নও যে এখন আমি দেখতে পারি ।
 ১৪জুলাই ,২০০৬

ইচ্ছে করেই এখন আর সামনে যাচ্ছি না অনামিকার ।আড়াল থেকে দেখতেই অনেক ভালো লাগছে ।প্রতিদিন কলেজে আসা-যাওয়ার পথে তার চোখজোড়া একজনকে খুঁজে বেড়ায় ।বুঝতে পারি সে একজন আমি -আমার দেয়া ছাতাটা যে এখনও তার কাছে রয়ে গেছে ।যদিও শারীরিক আমি নই ,তবু আমার দেয়া একটা জিনিস তো রয়ে গেছে অনামিকার কাছে ।সত্যি জড়বস্তুরও অনুভূতি আছে আর তাইতো ওটার মাধ্যমেই অনামিকার হাতের উষ্ণ পরশ আমি পাচ্ছি প্রতিদিন । এটাই বা কম কিসে !দেখা হলেই ছাতাটা আমাকে ফেরত দিয়ে দেবে ।ভালোলাগার এই অনুভূতি টা হতে এত দ্রুত নিজেকে ছেঁটে ফেলতে চাচ্ছি না আমি ।আর তাইতো দৃষ্টির আড়ালে থেকেই দেখছি ওকে ,পর্দার আড়াল থেকেই বুনে যাচ্ছি গভীর ভালোবাসার জাল ।একদিন না একদিন নিয়তি ঠিকই আমাদের কাছে এনে দেবে ।সেই একদিন কবে তা জানি না ,তবে আপাতত সে অপেক্ষাতেই আছি ।


[ অনেকগুলো পৃষ্ঠা উল্টালাম ।কিন্তু ডায়েরিটা ফাঁকা ।আর কি কিছু লেখা নেই ?...শেষ ভেবে অতৃপ্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে যখন উঠতে গেছি ঠিক তখনই নজরে এল লেখাগুলো ।লালচে কালো রঙের ।সেই সাথে ছোপ ছোপ ফোঁটা ফোঁটা দাগ ছড়িয়ে আছে পুরো লেখাটা জুড়ে । কালি ছড়িয়ে পড়ায় অক্ষরগুলো বেশ অস্পস্ট ।যাই হোক অনেক কষ্ট করে পড়া শুরু করলাম ।কিন্তু কিছুটা পড়তেই জমে গেলাম আমি ... ]
 ২৩ জুলাই ,২০০৬

আমার বেঁচে থাকার সব আশা আকাঙ্ক্ষা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে ।স্বপ্নের সমাধি ঘটে গেছে ।যে চোখ দিয়ে স্বপ্ন দেখতাম তা আজ অন্ধ ।বেঁচে থেকেও আজ আমি মৃত ।জীবনের সমস্ত আলো নিভে গেছে ।সেখানে অন্ধকার , হতাশা,যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই নেই ।আমার মনের অবস্থা আমি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না ,কাউকে বোঝাতেও পারব না কখনো।অই কুত্তার বাচ্চারা -নাম মুখে আনতেও ঘৃণা হচ্ছে-আমার এত বড় সর্বনাশ করে দিল ।বেজন্মা নরপিশাচগুলা আমার উপর শোধ নিতে এসিড ছুঁড়েছে আমার অনামিকার গায়ে ।হাসপাতালে শুয়ে এখন সে মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে ।এসিড ছুঁড়ার ঘটনা আগে আমার মনে দাগ কাটত না ,কিন্তু এখন বুঝতে পারছি ।এসিডের চাইতেও বেশি যন্ত্রণা আমি অনুভব করছি ।ওই হারামজাদাদের একটাকেও আমি ছাড়ব না ।আমার অনামিকা তো কোন দোষ করেছিল না ,আমার জন্য সে কেন শাস্তি পেল ?আমি তো শুধু চেয়েছিলাম আমার অতীতকে ভুলে বর্তমানের আমিকে আকঁড়ে ধরতে । পশুত্বের যে বৃত্তে আমি বন্দী ছিলাম তা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসতে ।এটাই কি আমার অপরাধ ?তাই যদি হয় তবে সে শাস্তি কেন আমি পেলাম না ।কেন অনামিকাকে একাই আমার কর্মের ফল ভোগ করতে হচ্ছে ?তীব্র মানসিক যন্ত্রণা আর আত্মদহনে আমি জ্বলে যাচ্ছি ।এ জ্বালা আমাকে মিটাতেই হবে ।কোন শালাকেই আমি ছাড়ব না ।কিছুতেই না ।
কিন্তু আমার অনামিকা ?তার কি হবে ?সে তো ফিরে পাবে না তার আগের জীবনকে ।আর কথনো দেখা যাবে না তার নিষ্পাপ সুন্দর চেহারা ,অবাক হওয়া দুটিচোখের সৌন্দর্য ।সেই মনকাড়া হাস্যোজ্জ্বল চেহারার কথা মনে পড়ছে বারবার ।আর যন্ত্রণাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ।ওর এই অবস্থার জন্য তো আমিই দায়ী ।কেন যে ভালোবেসে ফেলেছিলাম অনামিকাকে ।আসলে রাস্তার কুকুরদের ভালোবাসার কোন অধিকার নেই ।আমার মত ছেলের জন্য ভালোবাসা নয় -এ আমার আগেই বোঝা উচিত্‍ ছিল ।এ শাস্তি তাই আমারও প্রাপ্য ।কিন্তু যন্ত্রণা ?হ্যাঁ ,সেটাও ।এসিডে দগ্ধ হবার যন্ত্রণাটা বেশি নাকি পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত আগুনে পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণাটা বেশি ?
আমি শুধু অনামিকার কাছে যেতে চাই আর তা হবে অনামিকার চাইতেও বেশি যন্ত্রণা ভোগ করার পর ।

[দেখেই সন্দেহ হয়েছিল ।নিশ্চিত হলাম এই লেখাটা ছেলেটি লিখেছে রক্ত দিয়ে ।অনামিকা নামের সেই মেয়েটির প্রতি নাম না জানা এই ছেলেটির এমন নিখাদ,গভীর আর প্রকৃত ভালোবাসা দেখে আবেগকে থামাতে পারিনি ।কান্নায় আমার চোখ ধরে এল ।সেই কান্নাভেজা ঝাপসা চোখে আমি শুধু একটা দৃশ্যই কল্পনা করতে পারলাম -
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে ।প্রকৃতিতে বৃষ্টির উন্মাদনা ।বয়ে চলা বর্ষার নদীর পানির উপর বৃষ্টির ছন্দময় পতন এক স্বর্গীয় মাদকতার সৃষ্টি করেছে ।অচেনা কোন এক কূশলী শিল্পীর নিপুণ তুলিতে আঁকা বর্ষা প্রকৃতির এ রঙিন ছবিটাতে আরো সৌন্দর্যের পসরা ছড়িয়ে দিতে সেখানে উপস্থিত একটি মেয়ে ।বর্ষা প্রকৃতি আর নদীর পানিতে বৃষ্টির পতনের অসাধারণ সৌন্দর্য সে দেখছে অবাক হয়ে ।সেইসাথে ছাতা দিয়ে দুর্নিবার বৃষ্টির ফোঁটার হাত থেকে নিজেকে রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করছে ।চোখে মুখে কৃত্রিম একটা বিরক্তিভাব ।অনতিদূরে একটা ছেলে একগুচ্ছ সদ্য পেরে আনা কদম ফুল হাতে স্মিত হাস্যোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে ।তার মস্তক কিঞ্চিত্‍ অবনত ,বুক দুরুদুরু ।তবে তার চোখে আছে আহ্বান ।হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত উত্তাল ভালোবাসাকে প্রকাশের আহ্বান,ভালোবাসার মানুষটিকে বর্ষার কদমে সাজিয়ে দেয়ার আহ্বান,দুজনে মিলে এই বৃষ্টিবিধৌত প্রকৃতিতে মুক্ত উল্লাসে হারিয়ে যাবার আহ্বান,মেয়েটাকে সারাজীবন গভীরভাবে ভালোবাসার আহ্বান ।আর সর্বোপরি একটা স্বপ্নকে বাস্তবায়নের আহ্বান -যে স্বপ্নটা ছেলেটি দেখে গেছে তার সারাজীবন ধরে ]


পুনশ্চ: BUET এর হলে চলে আসার আগ দিয়ে বইপত্র বিক্রি করছিলাম ।হঠাত্‍ ই সেখানে আবিষ্কার করি অনেক আগের একটা ডায়রি ।এই ডায়েরিটাই প্রায় এক যুগ আগে ছিল আমার নিত্যদিনকার সঙ্গী ।ওটা খুঁজে পেয়ে নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম ।তারই পরিণতি এই "অসমাপ্ত ডায়েরি" গল্পটি।



লিখেছেন-রাসেল

সংগ্রহে - লিমন

No comments:

Post a Comment