ভাড়া দিয়ে যখন বাসার চাবি নিয়ে তন্বি নিচে নেমে এলো তখন ওকে দেখে মনে হচ্ছে একটা যুদ্ধ জয় করে এসেছে। ওর খুশী দেখে রুহানের মেজাজ ভালো হয়ে যেতে থাকে তারপরও মনে হয় তন্বি কে জিজ্ঞেস করা উচিৎ এই সবের মানেটা কি?! রিক্সায় উঠে রুহান জিজ্ঞেস করে,
"তন্বি কি হচ্ছে এগুলো তুমি কি আমাকে বলবে?"
"কেন তুমি দেখতে পারছো না?"
"পারছি কিন্তু বুঝছি না। তুমি আমার সাথে বাসা নিলে মানে কি? তুমি এখন থেকে আমার সাথে থাকবে?"
"হুম।"
"আর বাসায় কি বলবে?"
"উম বলেছি আমি একা একা বিয়ে করে ফেলেছি। মামনি আর বাবা খুব রাগ করেছে। তারপর আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আমি এই চার দিন ধরে টুম্পার বাসায় আছি। মামনি বলেছে আমি নাকি তার মেয়েই না! আমি এখন কি করবো বলো? বাসা না নিয়ে কোন উপায় ছিলো?" ভালো মানুষের মত মুখ করে তাকিয়ে আছে রুহানের দিকে তন্বি। মেয়েটা এমন করে তাকালে আদর করে দিতে ইচ্ছা করে। তাই খুব রাগ হয়ে থাকলেও কেন যেন কিছুই বলতে পারে না রুহান। সব রাগ কেমন পানি হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবে "এই মেয়েটা এতো পাজি কেন? রাগও করতে পারি না!" কিন্তু উপর দিয়ে কিছু বুঝতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
"তোমার সাথে এতো কিছু হলো তুমি আমাকে বলো নি কেন? আর একা একা বিয়ে করেছো মানে কি? তোমার কি ধারনা এইসব কথা তুমি বলে বেড়ালে আমি তোমাকে বিয়ে করবো?"
"আমি জানি তুমি করবে না। কিন্তু তোমার সাথে আমার কি, কেন আমি তোমার সাথে এতো ঘুরি, এই নিয়ে অনেক কথা জিজ্ঞেস করছিলো তারপর আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আর আমি হঠাৎ করে বলে ফেলেছি বিয়ের কথা। পরে তো আর স্বীকার করতে পারি না মিথ্যা বলেছি তাই বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু বলেছি। আর মামনি সেটাই বিশ্বাস করেছে। আমাকে বকেছে মেরেছে। তারপর বাসা থেকে চলে যেতে বলেছে।" ঠোঁট উল্টিয়ে বলতে থাকে তন্বি।
রুহান জানে ব্যাপারটা ঠিক হয় নি। তারপরও কেন জানি তন্বির এই পাগলামীর অংশ হয়ে যায় ও। বাসা নেবার পর সে কি উৎসাহ তন্বির। অফিস থেকে বাসায় আসার সময় প্রত্যেকদিন কিছু না কিছু কিনে নিয়ে আসছে ঘরের প্রয়োজনীয়। রুহানকে এটা ওটা বলতেই থাকে তন্বি। বাড়িওয়ালী এসে মাঝে মাঝে দেখে যায় ওদেরকে। একটু একটু করে বাসা সাজানো গুছানো হচ্ছে দেখে নিজেও অনেক পরামর্শ দিয়ে যায়। তন্বিকে সেদিন রুহান হঠাৎ বলতে শোনে,
"আন্টি আমাদের তো টোনাটুনির সংসার। করবো সব আস্তে আস্তে। আপনি শুধু দোয়া করবেন।"
কথাটা কেমন যেন মাথার মধ্যে ঢুকে যায় রুহানের। টোনাটুনির সংসার! বলার মধ্যে কি যে এক মায়া ছিলো! "কেন করছে মেয়েটা এইসব?" মনে মনে ভাবতে ভাবতেই নিচে চলে যায় রুহান সিগারেট খাবার জন্য। আগে বাসায় বসে সিগারেট খেতে পারতো কিন্তু তন্বির সাধে বাসায় সিগারেটের ধোঁয়া সে সহ্য করবে না বলে দিয়েছে তাই বাধ্য হয়ে প্রত্যেকবার নিচে যেতে হয়। এটা একটু বিরক্তিকর লাগে রুহানের। তন্বি কে ভালো লাগে না তা না। কিন্তু.......ভাবনায় ছেদ পরে ফোন বেজে ওঠাতে,
"শোন জানু তুমি দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে এসো তো। আমার আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছে।"
"তোমার ঠান্ডা লেগেছে তার মধ্যে আইসক্রিম খেতে হবে কেন?"
"আমার ইচ্ছা করছে তো এই জন্য।"
"না ইচ্ছা করতে হবে না। আমি বলেছি তুমি খাবে না ব্যস খাবে না।"
"উহু হু হু হু" খুন খুন করে কাঁদতে কাঁদতে ফোন রেখে দিয়েছে তন্বি। এই মেয়েটা এমন বাচ্চা মানুষের মত কেন?! আইসক্রিম নিয়ে বাসায় যেয়ে দেখে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আছে। রুহানকে দেখার সাথে সাথে ওর দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ে তন্বি তাই দেখে রুহান বলে,
"ঠিক আছে রে বাবা ভুল হয়ে গেছে বকা দিয়েছি। আইসক্রিম এনেছি তো এখনো রাগ করে থাকবে?"
"হুম"
"দেখো এমন করে আমার সামনে ঠোঁট উল্টাবে না বলে দিলাম। আমি কিন্তু তাহলে কামড় দিবো।"
বলতে বলতেই তন্বির কাছে চলে যায় রুহান। তন্বির কাছে রুহানের যাওয়া মানে মনের মধ্যে থাকা সব প্রতিরোধ রাগ এক নিমিষে ঝুর ঝুর করে ভেঙ্গে পড়া। রুহান যেয়ে বিছানায় বসে এক হাত দিয়ে ওকে টেনে তুলে জড়িয়ে ধরে। তন্বি বুকে মুখ রেখে বলে,
"এমন করে বকা দিলে কেন? তুমি কি আমার উপর রাগ?"
"তোমাকে দেখলে আর রাগ করতে পারি না।" গলায় ঠোঁট বুলিয়ে বলে রুহান। এইসব এমন ঘটনাগুলো ছিলো প্রত্যেকদিনের। রুহানের কাছে মনে হতো তন্বির মত বাচ্চা মানুষের সাথে থাকতে থাকতে ওর মধ্যেও ছেলেমানুষী ব্যাপারগুলো ঢুকে যাচ্ছে।
ভালোই যাচ্ছিলো সব কিছু। সাজানো গুছানো সুন্দর একটা সংসার। পাগলের মত ভালোবাসার একজন মানুষ। এতোদিন বাড়ী থেকে দূরে হলে, মেসে থাকা একটা মানুষের জন্য অনেক বেশী ভালো লাগার মত একটা ব্যাপার। রুহানের অফিসের সবাই একবাক্যে বলতো, "বউ হলে তন্বি ভাবির মত হওয়া উচিৎ। এতো ভালোবাসে আপনাকে! ছবির মত সাজিয়েছে সব।" কথাগুলো শুনলে গর্ব লাগে নিজের অজান্তেই। রুহান তন্বিকে নিয়ে সুখে ছিলো। ভুলে গিয়েছিলো তন্বি ওর বিয়ে করা বউ না। মনে করার আসলে দরকার হয়নি কখনো। এই মেয়েটা এমন ভালোবাসা দিয়েছে যে রুহান আর সব কিছুর কথা, সবার কথা বলতে গেলে ভুলেই গিয়েছিলো। কিন্তু নিয়তি বলে একটা কিছু বোধ হয় সত্যি আছে। নাহলে এমন হবে কেন?
প্রত্যেকদিনের মত সেদিনও রুহান তন্বিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। এমন সময় একটা ফোন আসে। রুহান ফোন কে করেছে দেখেই তন্বিকে ছেড়ে উঠে বারান্দায় চলে যায়। তন্বি ঘড়ি দেখে সকাল ৬টা বাজে। এতো সকালে কে ফোন করেছে ভেবে একটু অবাক হচ্ছিলো। রুহান কথা শেষ করে যখন রুমে আসে তখন প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে।
"কে ফোন করেছে? বাসা থেকে কেউ? কিছু কি হয়েছে জান?" জিজ্ঞেস করে তন্বি।
"না কেউ না। আমাকে একটু বাহিরে যেতে হবে। রাতে বাসায় ফিরবো কিনা জানি না এখনো। তুমি ভয় পেও না। আর আমি কল না করলে প্লীজ তুমি করো না।" কথাগুলো বলেই তাড়াহুড়া করে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। সেদিন সারা রাত রুহানের কোন খোঁজ নেই। ফোন করতে মানা করেছে রুহান তারপরও টেনশনে ফোন করে বসে তন্বি। কিন্তু ফোন বন্ধ! সারা রাত ছটফট ছটফট করেই কেটেছে তন্বির। দুইদিন কোন খোঁজ পায় না রুহানের। এই দুইদিন তন্বি বলতে গেলে পাগলের মত হয়ে গেছে। তিনদিনের দিন রুহান বাসায় আসে। এসে তন্বিকে জিজ্ঞেস করে,
"তুমি কিছু খেয়েছো তো?" কেমন করে যেন জিজ্ঞেস করে রুহান তন্বিকে। শুনে মনে হয় অনেকদিনের অভ্যেসের বশে জিজ্ঞেস করা।
"তুমি কোথায় ছিলে? কি হয়েছে?" রুহানের কথার উত্তর না দিয়ে ভয় ভয় গলায় জিজ্ঞেস করে তন্বি।
"এই সব প্রশ্ন করবে না। আমার তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবার কোন ইচ্ছা নাই। আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তাই বলো।" চিৎকার দিয়ে বলে রুহান।
"তুমি এমন করছো কেন?" কান্না চেপে জিজ্ঞেস করে তন্বি।
"জানি না কেন করছি। আমি শুধু জানি আমার ভালো লাগছে না কিছু ভালো লাগছে না।" বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে বাথরুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তন্বি খুব নরম টাইপের মেয়ে। ওর রুহানের এই ব্যবহার দেখে খুব কষ্ট হতে থাকে। অনেকক্ষন পর রুহান শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসে। তাই দেখে কান্না চেপে তাড়াতাড়ি তন্বি রুহানের জন্য নাস্তা বানাতে থাকে। তখন রুহান এসে বলে,
"আমি একা খাবো না তোমাকেও খেতে হবে। যাই বানাবে দুইটা বানাও।" গলার সুর এখন অনেকটাই নমনীয়। তাই শুনে একটু স্বস্তি পায় তন্বি। নাস্তা করা শেষ হবার পর তন্বি রুহানকে বলে,
"জান শরীরটা বেশী ভালো না আমার। শুধু ডাল ভাত করি?"
"করো। শরীর ভালো না কেন? কি হয়েছে?" গায়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে রুহান তারপর নিজেই বলে
"তোমার গায়ে তো অনেক জ্বর। ডাক্তার দেখাওনি?" রুহানের এই এতো টুকু কথা শুনেই চোখে পানি চলে আসে তন্বির।
"তুমি ছিলে না। আমি তোমার জন্য অনেক বেশী চিন্তায় ছিলাম। তাই আর নিজের দিকে খেয়াল দিতে পারি নি।"
"তন্বি এমন করে আমার কাছ থেকে তুমি কিছু পাবে না। তুমি এই সব করে কি প্রমান করতে চাও তুমি আমাকে বেশী ভালোবাসো?" খুব বিরক্ত হয়ে বলে রুহান।
"তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন? আমি কি বলেছি আমি কিছু প্রমান করতে চাইছি? একটা মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় গেলো তার জন্য আমার চিন্তা হবে না?" কাদঁতে কাঁদতে বলতে থাকে তন্বি।
"প্লীজ কান্নাকাটি বন্ধ করো। আমার এইসব পেইন ভালো লাগে না। তুমি আমার সামনে থেকে যাও।" বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় রুহান। তন্বি অনেকদিন রুহানের সাথে থাকার জন্য ভালো করেই ওকে বুঝতে পারে। যেহেতু এখন বলতে চাইছে না এখন হাজার জিজ্ঞেস করলেও বলবে না রুহান কি হয়েছে। তারচেয়ে ওর মুড ভালো হবার জন্য অপেক্ষা করাই ভালো। তন্বি চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকে। রাতে খাবার পর ১২টার দিকে রুহান বিছানায় এসে তন্বি কে বলে,
"আমার কাছে এসো। তোমাকে কিছু কথা বলবো।"
"বলো"
"তোমার আগে আমার জীবনে একটা মেয়ে ছিলো। মেয়েটা আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে। আমি যখন প্রায় ডুবে যাওয়া একজন মানুষ ছিলাম তখন এই মেয়েটা বলতে গেলে আমাকে বাঁচিয়েছে। আমি ওর উপর অনেক কৃতজ্ঞ। আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম ও আমার কাছে যা চাইবে যেভাবে চাইবে আমি ওর জন্য তাই করবো। আমি ওর ভালোর জন্য, সুখের জন্য সব করতে পারি। তুমি বুঝতে পারছো আমার কাছে ও কত বেশী ইম্পর্টেন্ট?"
"হুম বুঝতে পারছি।" কথাটা বলতে যেয়ে তন্বি খেয়াল করে দেখে ওর বুকের মধ্যে কেমন ব্যথা করছে আর মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে এতোটাই কষ্ট হচ্ছে।
"ও আমার কাছে আবার ফিরে এসেছে। ওর ধারনা আমার সাথে বিয়ে হলে ও ভালো থাকবে।" কোন কথা না বলে অপলক রুহানের দিকে তাকিয়ে আছে তন্বি। তাই দেখে রুহান আবার বলে,
"তোমাকে কত ছেলে পছন্দ করে, ভালোবাসে। তোমার জন্য ছেলের অভাব হবে না। দরকার হলে আমি তোমার জন্য ছেলে দেখবো। তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলো।" তন্বির চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়তে থাকে এই কথা শুনে।
"তন্বি আমি জানি আমি তোমাকে খুব বেশী কষ্ট দিচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার কিছু করার নাই। আমি পারবো না ওকে ফেরাতে। আমি ওর জন্য বেঁচে আমি। আমাকে তুমি যেমন দেখো বলতে পারো অনেকটাই আমি ওর জন্য এমন। আমি এখন কি করবো বলো?"
"আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমি কি করে থাকবো? আমি আর কাউকে ভালোবাসি না। আমি আর কারো জন্য বাঁচি না। আমি কি করবো তুমি শুধু আমাকে তাই বলে দাও।" চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে তন্বি।
"তুমি আমাকে ভুলে যাও।" এমন একটা কথা রুহান বলতে পারলো? মনে হয় এই কথাটা চিন্তা করেই তন্বির কান্না বল্ধ হয়ে যায়। কোন কথা না বলে তন্বি বারান্দায় চলে যায়। সারা রাত বারান্দায় বসে শুধু পাগলের মত কেঁদেছে আর ভেবেছে কি করবে এখন। আর অন্য দিকে রুহান তন্বিকে কষ্ট দেবার জন্য নিজেকে ভীষণ অপরাধী ভাবতে থাকে। তন্বির কান্নার শব্দ সারাটা রাত শুনেছে কিন্তু একটা বারও কাছে যেয়ে বলেনি কিছু। এমন কষ্টের সময় কিছু বলা যায় না কাউকেই। দুইজন দুই জায়গায় সম্পূর্ণ বিপরীত কষ্টে রাত পার করেছে। একটা সময় নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছে রুহান। আর তন্বি খুঁজে পেয়েছে সমধান। ভোর রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ভোর ৬টার সময় তন্বির মনে হলো এখন সময় হয়েছে-------
ছাদের উপর রুহানের হাতের উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে তন্বি আর রুহান চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকছে কাউকে। রুহান যখন হাসপাতালে নিয়ে আসে তন্বিকে তখন পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি তন্বির। ডাক্তার সব পরীক্ষা করে বললো ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেনি এই অবস্থায় তাই বেশী দূর্বল হয়ে গেছে আর জ্বর বেশী ছিলো তার মধ্যে বৃষ্টিতে ভেজা সব মিলিয়ে শরীরটা আর নিতে পারে নি। রুহান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে চিন্তা করে ধরতে পেরেছে ডাক্তার কোন একটা বিশেষ অবস্থার কথা বলেছে।
"এই অবস্থা মানে?"
"আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট।" কোন কথা না বলে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে রুহান। এই অবস্থায় কি করা যেতে পারে? কাউকে কিভাবে করে কি বা বলা যায়? রুহান নিজেই জানে রুহানের পরিস্থিতিটা। তন্বির সামনে প্রত্যেকদিন এসে বসে থাকে রুহান তন্বি কোন কথা বলে না আর রুহান নিজের থেকে কিছু বলতে পারে না। একদিন অফিস থেকে হাসপাতালে যেয়ে অনেক খুঁজেও রুহান তন্বিকে খুঁজে পায় না। পাগলের মত ফোন করেছে একটার পর একটা। বলতে গেলে সবাইকে ফোন করা হয়ে গেছে কেউ জানে না তন্বি কোথায়। অনেক রাতে শূণ্য বাসায় ফিরে রুহান দেখে ফ্রিজের ডোরে চাপা দেয়া একটা কাগজ। দেখেই মনে পড়ে যায় তন্বি জরুরী কিছু বলার থাকলে এভাবে লিখে রেখে যেতো। কাগজটা নিয়ে দেখে তন্বি লিখেছে,
"চলে গেলাম। তোমার ছোট একটা অংশ চুরি করে নিজের সাথে নিয়ে যাচ্ছি। আমি তোমাকে বাঁচাতে পারি নি হয়ত কিন্তু মেরে ফেলতেও পারব না। ভালোবাসা তুমি জেনে রেখো আমি শুধু তোমারই ছিলাম। থাকবো। তুমি শুধু ভালো থেকো।"
কারো জন্য কখনো কষ্ট হয় না রুহানের। কান্না পায় না কারো জন্যেই। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে কি যেন একটা নেই বুকের ভেতরে। একটু আগেও ছিলো এখন বুকটা খালি। ভাবনাটা আসতেই কেমন যেন ভেতর থেকে ডুকরে উঠে আসে কান্না।
----------------------------------------------------------
একটা ছোট বাচ্চা ছেলে শপিং মলে দৌড়া দৌড়ি করে বেড়েচ্ছে। তাই দেখে সুহানা বলে,
"দেখো বেবীটা কি সুইট।" কথাটা শুনেই বাচ্চাটাকে দেখার জন্য ঘুরে তাকায় রুহান। বাচ্চাটা আসলেই অনেক সুন্দর। একটা মেয়ে এসে বাচ্চাটার হাত ধরে বলে,
"রিশান প্লীজ বাবা এমন করে না।" খুব পরিচিত কষ্ঠস্বর। রুহান সুহানাকে কিছু না বলে কেন যেন হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটার সামনে চলে যায়। নিজের অজান্তেই বলে,
"তন্বি!"
দুই খন্ড '''''''
লিখেছেন-মেঘ_মেঘা
"তন্বি কি হচ্ছে এগুলো তুমি কি আমাকে বলবে?"
"কেন তুমি দেখতে পারছো না?"
"পারছি কিন্তু বুঝছি না। তুমি আমার সাথে বাসা নিলে মানে কি? তুমি এখন থেকে আমার সাথে থাকবে?"
"হুম।"
"আর বাসায় কি বলবে?"
"উম বলেছি আমি একা একা বিয়ে করে ফেলেছি। মামনি আর বাবা খুব রাগ করেছে। তারপর আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আমি এই চার দিন ধরে টুম্পার বাসায় আছি। মামনি বলেছে আমি নাকি তার মেয়েই না! আমি এখন কি করবো বলো? বাসা না নিয়ে কোন উপায় ছিলো?" ভালো মানুষের মত মুখ করে তাকিয়ে আছে রুহানের দিকে তন্বি। মেয়েটা এমন করে তাকালে আদর করে দিতে ইচ্ছা করে। তাই খুব রাগ হয়ে থাকলেও কেন যেন কিছুই বলতে পারে না রুহান। সব রাগ কেমন পানি হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবে "এই মেয়েটা এতো পাজি কেন? রাগও করতে পারি না!" কিন্তু উপর দিয়ে কিছু বুঝতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
"তোমার সাথে এতো কিছু হলো তুমি আমাকে বলো নি কেন? আর একা একা বিয়ে করেছো মানে কি? তোমার কি ধারনা এইসব কথা তুমি বলে বেড়ালে আমি তোমাকে বিয়ে করবো?"
"আমি জানি তুমি করবে না। কিন্তু তোমার সাথে আমার কি, কেন আমি তোমার সাথে এতো ঘুরি, এই নিয়ে অনেক কথা জিজ্ঞেস করছিলো তারপর আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আর আমি হঠাৎ করে বলে ফেলেছি বিয়ের কথা। পরে তো আর স্বীকার করতে পারি না মিথ্যা বলেছি তাই বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু বলেছি। আর মামনি সেটাই বিশ্বাস করেছে। আমাকে বকেছে মেরেছে। তারপর বাসা থেকে চলে যেতে বলেছে।" ঠোঁট উল্টিয়ে বলতে থাকে তন্বি।
রুহান জানে ব্যাপারটা ঠিক হয় নি। তারপরও কেন জানি তন্বির এই পাগলামীর অংশ হয়ে যায় ও। বাসা নেবার পর সে কি উৎসাহ তন্বির। অফিস থেকে বাসায় আসার সময় প্রত্যেকদিন কিছু না কিছু কিনে নিয়ে আসছে ঘরের প্রয়োজনীয়। রুহানকে এটা ওটা বলতেই থাকে তন্বি। বাড়িওয়ালী এসে মাঝে মাঝে দেখে যায় ওদেরকে। একটু একটু করে বাসা সাজানো গুছানো হচ্ছে দেখে নিজেও অনেক পরামর্শ দিয়ে যায়। তন্বিকে সেদিন রুহান হঠাৎ বলতে শোনে,
"আন্টি আমাদের তো টোনাটুনির সংসার। করবো সব আস্তে আস্তে। আপনি শুধু দোয়া করবেন।"
কথাটা কেমন যেন মাথার মধ্যে ঢুকে যায় রুহানের। টোনাটুনির সংসার! বলার মধ্যে কি যে এক মায়া ছিলো! "কেন করছে মেয়েটা এইসব?" মনে মনে ভাবতে ভাবতেই নিচে চলে যায় রুহান সিগারেট খাবার জন্য। আগে বাসায় বসে সিগারেট খেতে পারতো কিন্তু তন্বির সাধে বাসায় সিগারেটের ধোঁয়া সে সহ্য করবে না বলে দিয়েছে তাই বাধ্য হয়ে প্রত্যেকবার নিচে যেতে হয়। এটা একটু বিরক্তিকর লাগে রুহানের। তন্বি কে ভালো লাগে না তা না। কিন্তু.......ভাবনায় ছেদ পরে ফোন বেজে ওঠাতে,
"শোন জানু তুমি দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে এসো তো। আমার আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছে।"
"তোমার ঠান্ডা লেগেছে তার মধ্যে আইসক্রিম খেতে হবে কেন?"
"আমার ইচ্ছা করছে তো এই জন্য।"
"না ইচ্ছা করতে হবে না। আমি বলেছি তুমি খাবে না ব্যস খাবে না।"
"উহু হু হু হু" খুন খুন করে কাঁদতে কাঁদতে ফোন রেখে দিয়েছে তন্বি। এই মেয়েটা এমন বাচ্চা মানুষের মত কেন?! আইসক্রিম নিয়ে বাসায় যেয়ে দেখে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আছে। রুহানকে দেখার সাথে সাথে ওর দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ে তন্বি তাই দেখে রুহান বলে,
"ঠিক আছে রে বাবা ভুল হয়ে গেছে বকা দিয়েছি। আইসক্রিম এনেছি তো এখনো রাগ করে থাকবে?"
"হুম"
"দেখো এমন করে আমার সামনে ঠোঁট উল্টাবে না বলে দিলাম। আমি কিন্তু তাহলে কামড় দিবো।"
বলতে বলতেই তন্বির কাছে চলে যায় রুহান। তন্বির কাছে রুহানের যাওয়া মানে মনের মধ্যে থাকা সব প্রতিরোধ রাগ এক নিমিষে ঝুর ঝুর করে ভেঙ্গে পড়া। রুহান যেয়ে বিছানায় বসে এক হাত দিয়ে ওকে টেনে তুলে জড়িয়ে ধরে। তন্বি বুকে মুখ রেখে বলে,
"এমন করে বকা দিলে কেন? তুমি কি আমার উপর রাগ?"
"তোমাকে দেখলে আর রাগ করতে পারি না।" গলায় ঠোঁট বুলিয়ে বলে রুহান। এইসব এমন ঘটনাগুলো ছিলো প্রত্যেকদিনের। রুহানের কাছে মনে হতো তন্বির মত বাচ্চা মানুষের সাথে থাকতে থাকতে ওর মধ্যেও ছেলেমানুষী ব্যাপারগুলো ঢুকে যাচ্ছে।
ভালোই যাচ্ছিলো সব কিছু। সাজানো গুছানো সুন্দর একটা সংসার। পাগলের মত ভালোবাসার একজন মানুষ। এতোদিন বাড়ী থেকে দূরে হলে, মেসে থাকা একটা মানুষের জন্য অনেক বেশী ভালো লাগার মত একটা ব্যাপার। রুহানের অফিসের সবাই একবাক্যে বলতো, "বউ হলে তন্বি ভাবির মত হওয়া উচিৎ। এতো ভালোবাসে আপনাকে! ছবির মত সাজিয়েছে সব।" কথাগুলো শুনলে গর্ব লাগে নিজের অজান্তেই। রুহান তন্বিকে নিয়ে সুখে ছিলো। ভুলে গিয়েছিলো তন্বি ওর বিয়ে করা বউ না। মনে করার আসলে দরকার হয়নি কখনো। এই মেয়েটা এমন ভালোবাসা দিয়েছে যে রুহান আর সব কিছুর কথা, সবার কথা বলতে গেলে ভুলেই গিয়েছিলো। কিন্তু নিয়তি বলে একটা কিছু বোধ হয় সত্যি আছে। নাহলে এমন হবে কেন?
প্রত্যেকদিনের মত সেদিনও রুহান তন্বিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। এমন সময় একটা ফোন আসে। রুহান ফোন কে করেছে দেখেই তন্বিকে ছেড়ে উঠে বারান্দায় চলে যায়। তন্বি ঘড়ি দেখে সকাল ৬টা বাজে। এতো সকালে কে ফোন করেছে ভেবে একটু অবাক হচ্ছিলো। রুহান কথা শেষ করে যখন রুমে আসে তখন প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে।
"কে ফোন করেছে? বাসা থেকে কেউ? কিছু কি হয়েছে জান?" জিজ্ঞেস করে তন্বি।
"না কেউ না। আমাকে একটু বাহিরে যেতে হবে। রাতে বাসায় ফিরবো কিনা জানি না এখনো। তুমি ভয় পেও না। আর আমি কল না করলে প্লীজ তুমি করো না।" কথাগুলো বলেই তাড়াহুড়া করে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। সেদিন সারা রাত রুহানের কোন খোঁজ নেই। ফোন করতে মানা করেছে রুহান তারপরও টেনশনে ফোন করে বসে তন্বি। কিন্তু ফোন বন্ধ! সারা রাত ছটফট ছটফট করেই কেটেছে তন্বির। দুইদিন কোন খোঁজ পায় না রুহানের। এই দুইদিন তন্বি বলতে গেলে পাগলের মত হয়ে গেছে। তিনদিনের দিন রুহান বাসায় আসে। এসে তন্বিকে জিজ্ঞেস করে,
"তুমি কিছু খেয়েছো তো?" কেমন করে যেন জিজ্ঞেস করে রুহান তন্বিকে। শুনে মনে হয় অনেকদিনের অভ্যেসের বশে জিজ্ঞেস করা।
"তুমি কোথায় ছিলে? কি হয়েছে?" রুহানের কথার উত্তর না দিয়ে ভয় ভয় গলায় জিজ্ঞেস করে তন্বি।
"এই সব প্রশ্ন করবে না। আমার তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবার কোন ইচ্ছা নাই। আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তাই বলো।" চিৎকার দিয়ে বলে রুহান।
"তুমি এমন করছো কেন?" কান্না চেপে জিজ্ঞেস করে তন্বি।
"জানি না কেন করছি। আমি শুধু জানি আমার ভালো লাগছে না কিছু ভালো লাগছে না।" বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে বাথরুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তন্বি খুব নরম টাইপের মেয়ে। ওর রুহানের এই ব্যবহার দেখে খুব কষ্ট হতে থাকে। অনেকক্ষন পর রুহান শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসে। তাই দেখে কান্না চেপে তাড়াতাড়ি তন্বি রুহানের জন্য নাস্তা বানাতে থাকে। তখন রুহান এসে বলে,
"আমি একা খাবো না তোমাকেও খেতে হবে। যাই বানাবে দুইটা বানাও।" গলার সুর এখন অনেকটাই নমনীয়। তাই শুনে একটু স্বস্তি পায় তন্বি। নাস্তা করা শেষ হবার পর তন্বি রুহানকে বলে,
"জান শরীরটা বেশী ভালো না আমার। শুধু ডাল ভাত করি?"
"করো। শরীর ভালো না কেন? কি হয়েছে?" গায়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে রুহান তারপর নিজেই বলে
"তোমার গায়ে তো অনেক জ্বর। ডাক্তার দেখাওনি?" রুহানের এই এতো টুকু কথা শুনেই চোখে পানি চলে আসে তন্বির।
"তুমি ছিলে না। আমি তোমার জন্য অনেক বেশী চিন্তায় ছিলাম। তাই আর নিজের দিকে খেয়াল দিতে পারি নি।"
"তন্বি এমন করে আমার কাছ থেকে তুমি কিছু পাবে না। তুমি এই সব করে কি প্রমান করতে চাও তুমি আমাকে বেশী ভালোবাসো?" খুব বিরক্ত হয়ে বলে রুহান।
"তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন? আমি কি বলেছি আমি কিছু প্রমান করতে চাইছি? একটা মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় গেলো তার জন্য আমার চিন্তা হবে না?" কাদঁতে কাঁদতে বলতে থাকে তন্বি।
"প্লীজ কান্নাকাটি বন্ধ করো। আমার এইসব পেইন ভালো লাগে না। তুমি আমার সামনে থেকে যাও।" বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় রুহান। তন্বি অনেকদিন রুহানের সাথে থাকার জন্য ভালো করেই ওকে বুঝতে পারে। যেহেতু এখন বলতে চাইছে না এখন হাজার জিজ্ঞেস করলেও বলবে না রুহান কি হয়েছে। তারচেয়ে ওর মুড ভালো হবার জন্য অপেক্ষা করাই ভালো। তন্বি চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকে। রাতে খাবার পর ১২টার দিকে রুহান বিছানায় এসে তন্বি কে বলে,
"আমার কাছে এসো। তোমাকে কিছু কথা বলবো।"
"বলো"
"তোমার আগে আমার জীবনে একটা মেয়ে ছিলো। মেয়েটা আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে। আমি যখন প্রায় ডুবে যাওয়া একজন মানুষ ছিলাম তখন এই মেয়েটা বলতে গেলে আমাকে বাঁচিয়েছে। আমি ওর উপর অনেক কৃতজ্ঞ। আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম ও আমার কাছে যা চাইবে যেভাবে চাইবে আমি ওর জন্য তাই করবো। আমি ওর ভালোর জন্য, সুখের জন্য সব করতে পারি। তুমি বুঝতে পারছো আমার কাছে ও কত বেশী ইম্পর্টেন্ট?"
"হুম বুঝতে পারছি।" কথাটা বলতে যেয়ে তন্বি খেয়াল করে দেখে ওর বুকের মধ্যে কেমন ব্যথা করছে আর মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে এতোটাই কষ্ট হচ্ছে।
"ও আমার কাছে আবার ফিরে এসেছে। ওর ধারনা আমার সাথে বিয়ে হলে ও ভালো থাকবে।" কোন কথা না বলে অপলক রুহানের দিকে তাকিয়ে আছে তন্বি। তাই দেখে রুহান আবার বলে,
"তোমাকে কত ছেলে পছন্দ করে, ভালোবাসে। তোমার জন্য ছেলের অভাব হবে না। দরকার হলে আমি তোমার জন্য ছেলে দেখবো। তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলো।" তন্বির চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়তে থাকে এই কথা শুনে।
"তন্বি আমি জানি আমি তোমাকে খুব বেশী কষ্ট দিচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার কিছু করার নাই। আমি পারবো না ওকে ফেরাতে। আমি ওর জন্য বেঁচে আমি। আমাকে তুমি যেমন দেখো বলতে পারো অনেকটাই আমি ওর জন্য এমন। আমি এখন কি করবো বলো?"
"আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমি কি করে থাকবো? আমি আর কাউকে ভালোবাসি না। আমি আর কারো জন্য বাঁচি না। আমি কি করবো তুমি শুধু আমাকে তাই বলে দাও।" চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে তন্বি।
"তুমি আমাকে ভুলে যাও।" এমন একটা কথা রুহান বলতে পারলো? মনে হয় এই কথাটা চিন্তা করেই তন্বির কান্না বল্ধ হয়ে যায়। কোন কথা না বলে তন্বি বারান্দায় চলে যায়। সারা রাত বারান্দায় বসে শুধু পাগলের মত কেঁদেছে আর ভেবেছে কি করবে এখন। আর অন্য দিকে রুহান তন্বিকে কষ্ট দেবার জন্য নিজেকে ভীষণ অপরাধী ভাবতে থাকে। তন্বির কান্নার শব্দ সারাটা রাত শুনেছে কিন্তু একটা বারও কাছে যেয়ে বলেনি কিছু। এমন কষ্টের সময় কিছু বলা যায় না কাউকেই। দুইজন দুই জায়গায় সম্পূর্ণ বিপরীত কষ্টে রাত পার করেছে। একটা সময় নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছে রুহান। আর তন্বি খুঁজে পেয়েছে সমধান। ভোর রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ভোর ৬টার সময় তন্বির মনে হলো এখন সময় হয়েছে-------
ছাদের উপর রুহানের হাতের উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে তন্বি আর রুহান চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকছে কাউকে। রুহান যখন হাসপাতালে নিয়ে আসে তন্বিকে তখন পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি তন্বির। ডাক্তার সব পরীক্ষা করে বললো ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেনি এই অবস্থায় তাই বেশী দূর্বল হয়ে গেছে আর জ্বর বেশী ছিলো তার মধ্যে বৃষ্টিতে ভেজা সব মিলিয়ে শরীরটা আর নিতে পারে নি। রুহান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে চিন্তা করে ধরতে পেরেছে ডাক্তার কোন একটা বিশেষ অবস্থার কথা বলেছে।
"এই অবস্থা মানে?"
"আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট।" কোন কথা না বলে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে রুহান। এই অবস্থায় কি করা যেতে পারে? কাউকে কিভাবে করে কি বা বলা যায়? রুহান নিজেই জানে রুহানের পরিস্থিতিটা। তন্বির সামনে প্রত্যেকদিন এসে বসে থাকে রুহান তন্বি কোন কথা বলে না আর রুহান নিজের থেকে কিছু বলতে পারে না। একদিন অফিস থেকে হাসপাতালে যেয়ে অনেক খুঁজেও রুহান তন্বিকে খুঁজে পায় না। পাগলের মত ফোন করেছে একটার পর একটা। বলতে গেলে সবাইকে ফোন করা হয়ে গেছে কেউ জানে না তন্বি কোথায়। অনেক রাতে শূণ্য বাসায় ফিরে রুহান দেখে ফ্রিজের ডোরে চাপা দেয়া একটা কাগজ। দেখেই মনে পড়ে যায় তন্বি জরুরী কিছু বলার থাকলে এভাবে লিখে রেখে যেতো। কাগজটা নিয়ে দেখে তন্বি লিখেছে,
"চলে গেলাম। তোমার ছোট একটা অংশ চুরি করে নিজের সাথে নিয়ে যাচ্ছি। আমি তোমাকে বাঁচাতে পারি নি হয়ত কিন্তু মেরে ফেলতেও পারব না। ভালোবাসা তুমি জেনে রেখো আমি শুধু তোমারই ছিলাম। থাকবো। তুমি শুধু ভালো থেকো।"
কারো জন্য কখনো কষ্ট হয় না রুহানের। কান্না পায় না কারো জন্যেই। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে কি যেন একটা নেই বুকের ভেতরে। একটু আগেও ছিলো এখন বুকটা খালি। ভাবনাটা আসতেই কেমন যেন ভেতর থেকে ডুকরে উঠে আসে কান্না।
----------------------------------------------------------
একটা ছোট বাচ্চা ছেলে শপিং মলে দৌড়া দৌড়ি করে বেড়েচ্ছে। তাই দেখে সুহানা বলে,
"দেখো বেবীটা কি সুইট।" কথাটা শুনেই বাচ্চাটাকে দেখার জন্য ঘুরে তাকায় রুহান। বাচ্চাটা আসলেই অনেক সুন্দর। একটা মেয়ে এসে বাচ্চাটার হাত ধরে বলে,
"রিশান প্লীজ বাবা এমন করে না।" খুব পরিচিত কষ্ঠস্বর। রুহান সুহানাকে কিছু না বলে কেন যেন হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটার সামনে চলে যায়। নিজের অজান্তেই বলে,
"তন্বি!"
দুই খন্ড '''''''
লিখেছেন-মেঘ_মেঘা
No comments:
Post a Comment