Responsive Ads Here

26 January 2012

।। মৃত্যুর হাতছানি ।। (পর্ব ৪)

(৭)

বাকি রাতটা ঘুমাতে পারলো না সানি ।

সায়মাকে জোড় করে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে সে । মেয়েটা অসুস্থ হয়ে গেছে বিভত্‍স দৃশ্যটা দেখে । ওর বিশ্রাম প্রয়োজন ।

সানি ভাবছে এই অদ্ভুত ঘটনার কারনটা কি হতে পারে তা নিয়ে ।

ভোরের দিকে দরজায় মৃদু টোকা পরলো । বিছানা থেকে নেমে আস্তে করে দরজা খুলল সানি ।

সান্টু দাড়িয়ে আছে । ছেলেটাকে কেমন যেনো ভীত মনে হচ্ছে ।

ঠোটে তর্জনী রেখে সান্টুকে আওয়াজ করতে নিষেধ করলো সে । ছেলেটা ঘাড় কাত করলো । তারমানে সে বুঝতে পেরেছে ।

দরজাটা লক করে , চাবিটা পকেটে রেখে আস্তে করে বেড়িয়ে এলো সানি ।

সান্টু সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল "মেজর সাব আপনারে যাইতে কইছে ।"

সানি কিছু বলল না । নিরবে সান্টুর সাথে ক্যাম্পের দিকে যেতে লাগল ।

তাবুর কাছে পৌছে তাবুর কোনা সরিয়ে উকি দিলো সানি । ভিতরে শাহারিয়ার ছাড়াও আরো দুজন সামরিক কর্মকর্তা আছেন ।

কাধের প্রতিকগুলো দেখে বোঝা যায় একজন আর্মির কর্নেল আর একজন নৌবাহিনীর কমান্ডার ।

সানি তাবুর ভিতরে ঢুকে স্যালুট করলো তাদেরকে ।

"আয় । তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম । পরিচয় করিয়ে দিই । ইনি কর্নেল আফসার , চট্রগাম ক্যান্টেনম্যান্ট এর ইনচার্জ এবং ইনি কমান্ডার জাওয়াদ । তিনি বর্তমানে একটা সামরিক যুদ্ধজাহাজে আছেন ।" বলল শাহারিয়ার ।

তাদের সাথে হ্যান্ডশেক করলো সানি ।

"মেজর । তোমার কি মনে হয় ? কেনো হচ্ছে এসব ?" শাহারিয়ারকে জিজ্ঞেস করলেন কর্নেল ।

"জানি না স্যার । কেনো এরকম হচ্ছে এর কোন ব্যাখ্যা পাইনি । সবচেয়ে বড় কথা , যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদেরকে কি যে লেকের মধ্যে টেনে নিয়ে যায় তাও জানা যায়নি । তবে যারাই রহস্যময় ভাবে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে কয়েকজনের লাস লেকে পাওয়ার কারন ধারনা করা হচ্ছে এই লেকটার সাথে তাদের মৃত্যুর কোন যোগাযোগ আছে ।" বলল শাহারিয়ার ।

"লাসগুলোর পোস্টমর্টেম করা হয়নি ?" জিজ্ঞেস করলো কর্নেল ।

"হয়েছে স্যার । তবে কোন ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়নি । একে তো পানিতে ছিলো , তার উপর একদম পচে গেছে ।

ডাক্তারের ধারনা লাসগুলো প্রায় ১৫-২০ দিন পানির নিচে ছিলো । তাছাড়া লাসগুলো প্রত্যেকটার হাড়ে ধারালো কোন কিছুর আচড় দেখা গেছে । যাতে সন্দেহ হয় যে সম্ভবত কোন জলজ প্রানীর কাজ এটা ।" বলল শাহারিয়ার ।

"হমম । এখন তাহলে কি করতে চাও ?" কর্নেল প্রশ্ন করলেন ।

"লেকের মধ্যে একটা সার্চ করা উচিত । এছাড়া আর কোন পথ দেখতে পাচ্ছি না ।" বলল শাহারিয়ার ।

"আমার সাথে ৬ জন অভিজ্ঞ স্কুবা ডাইভার আছে । তারা এধরনের সার্চ এন্ড ডেসট্রয় মিশন করার জন্য ট্রেনিং করা । আমারও মনে হয় লেকটাতে একটা সার্চ করা উচিত ।" কর্নেলকে উদ্দেশ্য করে বললেন কমান্ডার জাওয়াদ ।

"স্যার । আমার মনে হয় এখানকার আদিবাসীরা কিছু জানে ব্যাপারটা সর্ম্পকে । কাল রাতে লাসটা যখন পাওয়া যায় তখন তাদের কথা শুনেছি ।

কথার অর্থ যদিও বুঝতে পারিনি । তবে আমার ধারনা তারা কিছু একটা অবশ্যই জানে । এবং যেটা তাদেরকে ভীত করে তুলছে ।" বলল সানি ।

"তাহলে একটা কাজ করো । তুমি একজন দোভাষীকে নিয়ে আজকে বিকালেই কাছের গ্রামটায় যাও । আর আমরা লেকটা সার্চ করবো ১০ টার দিকে । অল ক্লিয়ার ?" কর্নেল বললেন ।

সবাই সায় জানালো । সানি তাবু থেকে বেড়িয়ে এলো । হোটেলে ফিরে যেতে লাগলো । পথে একজায়গায় দেখলো সান্টু একটা পরিবারের সাথে হাটছে । বাবা , মা , আর দুটো ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে পরিবারটা । হয়তো কোন পর্যটক হবে । ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামালো না আর ।

(৮)

হোটেলে পৌছে , লবি থেকে একটা পত্রিকা নিয়ে নিজের রুমে গেলো সানি । দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখলো সায়মা জেগে গেছে ।

মুখ ধুচ্ছে মেয়েটা । কিছু না বলে চুপচাপ ছোফায় বসে পত্রিকাটা পড়তে লাগলো সানি ।

"কোথায় গিয়েছিলে ?" সায়মা প্রশ্ন করলো ।

"শাহারিয়ারের কাছে । কাজ ছিলো ।" জবাব দিলো সানি ।

-কেনো গিয়েছিলে ?

--লেকটা আজকে সার্চ করা হবে । ঐ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলাম ।

- ও আচ্ছা ।

পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে সায়মার দিকে চেয়ে সানি বলল "টেমা । তোমার খুব বিরক্ত লাগছে তাই না ? ছুটি কাটাতে এসেই এভাবে একটা আজব ঘটনার সাথে জড়িয়ে গেলাম !"

ড্রেসিং টেবিলের সামনে আয়নায় দেখে মাথা আচড়াচ্ছিলো সায়মা । সানির কথা শুনে মিষ্টি হাসি দিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল "জ্বি না টেমি সাহেব । আপনি আমার পাশে আছেন । এতেই আমি খুশি । আপনাকে তো কাছে পাওয়াই যায় না ।"

তার কথা শুনে হাসলো সানি । হটাত্‍ চোখ পড়লো দেয়াল ঘড়ির দিকে । ৯.১৫ বাজে ।

"চলো চলো । নাস্তা করতে যাই । না হয় ১০ টার দিকে সার্চ পার্টিতে যেতে দেরি হয়ে যাবে ।" তাড়া দিলো সানি ।

চুল বাধা দ্রুত শেষ করে সায়মা উঠে দাড়ালো । দরজা লক করে দুজনে হোটেলের নিচতলায় নেমে এলো । খাওয়ার জায়গা এটাই ।

দক্ষিন দিকের একটা টেবিলে বসলো তারা । পাশের টেবিলে তাকিয়ে সকাল বেলার পরিবারটাকে দেখতে পেলো সানি ।

সায়মাকে নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো সে ।

"Excuse me . . আপনারা কি এখানে আজই এসেছেন ?" জিজ্ঞেস করলো ।

"জ্বি । আমার নাম রিফাত আহমেদ । আর এই যে আমার ওয়াইফ শায়লা আহমেদ । আর এরা হলো নিয়াজ , নাফা ।" হাসিখুশি ভাবে নিজেদের পরিচর দিলো লোকটা ।

"আমি আরাফাত সানি । আর ও আমার ওয়াইফ সায়মা চৌধুরি । আপনারা কি ঢাকা থেকে এসেছেন ?" বলল সানি ।

"জ্বি । ঘুড়তে এসেছি । ছেলেমেয়ে দুটো স্কুলে পড়ে । আর আমিও ব্যাবসা নিয়ে ব্যাস্ত । তাই একটু সময় করে চলে এলাম । আর আপনারা ?" বলল রিফাত আহমেদ ।

"জ্বি আমরাও ঢাকা থেকে এসেছি । কেমন লাগছে এখানে ?" প্রশ্ন করলো সানি ।

"জায়গাটা সুন্দরই । তবে আদিবাসীদের ভাষা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে । তাছাড়া mainly যে জন্য আসা , বগা লেক দেখার জন্য সেটা হচ্ছে না । আর্মিরা যেতে দিচ্ছে না । কি যেনো সমস্যা আছে ।" বললেন ভদ্রলোক ।

সানি বুঝলো জায়গাটা সিল করে দেওয়া হয়েছে ।

"আপনারা এক কাজ করতে পারেন । এখানে আশে পাশেই অনেক সুন্দর ঝড়না আছে । সেগুলো দেখতে পারেন ।" বলল সানি ।

লোকটা হাসিমুখে জানালো যে তাদেরও এই পরিকল্পনাই ছিলো । কথা ওখানেই শেষ করে , নাস্তা খেয়ে সায়মাকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে এলো সানি ।

সরাসরি বগা লেকের দিকে এগোলো । সবাই ওখানেই থাকার কথা ।

(চলবে)

লিখেছেনঃ আহনাফ সানভি
সংগ্রহে - লিমন

No comments:

Post a Comment