Responsive Ads Here

20 January 2012

বৃষ্টি চাই, দেবে ?

১।
তেরচা করে ঢুকেছে সকালের সোনালি রোদ্দুর। আমার মাথার কাছে চুপটি করে। তার উষ্ণতায় ভেসে যাচ্ছে দশদিক। সোনা সোনা আলো তে ভেসে আছে ঘর দুয়ার। আমি উষ্ণতার প্রত্যাশী । আমি জীবনের প্রত্যাশী। একটু আগেও কুয়াশা ছিল । গাছের পাতায় শিশির বিন্দু ছিল। আমি দেখিনি। আমি ঘুমাচ্ছিলাম। প্রশান্তির ঘুম। অনেক অনেক দিন পর। রোদের আলোয় এখন আমার ঘুম ভেঙ্গেছে। আমি কম্বল সরাই... দু হাতে সূর্য ধরতে চাই। তার গহন আলোতে স্নান করতে চাই। আমি শুদ্ধ হতে চাই। উঠে বসি আমি। পূর্ণ মাত্রার ফ্যান এর বাতাসে আমার গহন কাল চুল উড়ে, আমার রেশম ওড়নার আচল ওড়ে । আমার স্বপ্ন ওড়ে , আমার কষ্টরা ওড়ে । আমি সূর্য কে বলি, আস আমাকে পূর্ণ কর, আমাকে গ্রহণ কর। সূর্য দেখে , দূর থেকে হাসে , কাছে আসেনা। আমার দুচোখ বেয়ে জল ঝরে, আমার গাল ভিজে যায়, বালিশ ভিজে যায়, আমার সব ভিজে যায়। আমার চোখের জলে আমি ভিজে যাই ।
মনে পড়ে কাল সেই যে এলাম কাপড় ও বদলাইনি। মুখ ধুইনি, দীর্ঘ দিন এর অভ্যাসমত মুখে ক্রিম মাখিনি। চুল বাঁধিনি। ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম । তার আগে দীর্ঘ ক্ষণ বসে ছিলাম সমুদ্রের পারে। সমুদ্রের ঢেউ গুনেছি । ক্ষুধা তৃষ্ণার বোধহীন আমি। নিজের কাছে পরাজিত ।জীবনের কাছে ক্লান্ত । কিন্তু আমিতো এমন জীবন চাইনি। এত কষ্টের জীবন, এত বিষাদ মাখা , পদ্মপাতার উপর এক বিন্দু শিশির এর মত সুখময় । রাত বাড়ছিল । সমুদ্রপার জনশূন্য হচ্ছিলো, অজানা কেউ এসে আমাকে উঠে যেতে বলছিল, বলছিল যায়গাটা ভালো না, চোর ডাকাত আছে আর আছে নারী- মাংসলোভী শকুনেরা। আমি শুনেছি কিন্তু বুঝতে পারিনি তখন ওদেরই কেউ একজন প্রায় জোর করেই আমাকে এগিয়ে দিয়ে গিয়েছিল হোটেল এর গেট এ। তারপর মহান হাসি দিয়ে বলেছিল ভাল থাকবেন, আমি কিছুই বলিনি, শুনেছি কিন্তু উত্তরে ধন্যবাদ জাতীয় কিছু বলিনি... আমি আশ্চর্য রকম নিশ্চুপ ছিলাম। বলেছিল আপনি কি একা? বলেছিল আপনার কোন প্রব্লেম? বলতে পারেন। আমি কি বলেছিলাম মনে করতে পারিনা। শুধু হোটেলের গেট দিয়ে ঢুকে গিয়েছিলাম তার আশ্চর্য দৃষ্টির সামনে ।
জানালা থেকে সাগর দেখা যায় । আকাশ দেখা যায় । আতে লক্ষ তারার মেলা, আর দেখা যায় সামনের রাস্তাটুকু । আমি গহন রাতে দেখছিলাম সমুদ্রকে, তারাকে আর বিড়বিড় করছিলাম Coleridge এর প্রিয় কিছু পংক্তি ।
A grief without a pang, void, dark, and drear,
A stifled, drowsy, unimpassioned grief,
Which finds no natural outlet, no relief,
In word, or sigh, or tear—
...................................................

Those stars, that glide behind them or between,
Now sparkling, now bedimmed, but always seen;
Yon crescent Moon, as fixed as if it grew
In its own cloudless, starless lake of blue;
I see them all so excellently fair,
I see, not feel, how beautiful they are!


বাস্তবিকই কোন কিছুই আমাকে স্পর্শ করছিলনা। আমি কঠিন হয়েছিলাম, নিজের সিদ্ধান্ত টা আবার ও যুক্তি তর্কের আলোয় বিবেচনা করছিলাম। তারপর একসময় শান্ত হয়েছিলাম । তারপর ই এসেছিল ঘুম। শান্তিময় ঘুম।
এই সকালে সমুদ্র তটে কৈশোরের উচ্ছ্বাস, যৌবনের পাগলামি আর শৈশবের চাপল্য । নরম আলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতে হাত রেখে যুগলরা। সাদা ফেনায়িত ঢেউ এর পর ঢেউ । কি আশ্চর্য সুন্দর তার রূপ। আমি দেখি কিন্তু কিছুই আমাকে স্পর্শ করেনা, কোন বোধ সৃষ্টি করেনা।
নিঃসঙ্গতা অসহনীয় লাগে। ত্রস্তে নেমে আসি নিচে। এক কাপ চা। তাতে অস্থির চুমুক দেই। আমার শরীর এর মধ্যে নেমে যায় গরম তরল। পুড়ে যাই আমি, আমার গলা, বুক, জিভ। আকাঙ্ক্ষা করি ভেতরের বরফ ও গলে যাবে, তাতে বৃষ্টি নামবে, ধুয়ে দিবে আমার গহন গাঢ় কষ্টগুলো। তেমন কিছুই টের পাইনা , শুধু আরো কুঁকড়ে যাই। নিজেকে অভিশাপ দেই। এরকম জীবনই হয়ত আমার পাওনা ছিল। বলি যা মর, মৃত্যুই তোকে মানায়।
আমি পূর্ণতার প্রত্যাশী ছিলাম। আমার না শূন্য জীবনের পূর্ণতা। পরিপূর্ণ পূর্ণতা। একটুকু খালি ছিল বোধহয় আমার, তাতে আলো বাতাস ছিলনা, সূর্য ছিলনা, চাঁদের আলোর মায়াবী স্পর্শ ছিলনা। আমার মাঝে ঘোর ছিল, স্বপ্ন ছিল - মায়া আর ভালবাসার, গাঢ় অভিলাষের ঘোর। যখন আকাশ জুড়ে বৃষ্টি হতো, মেঘের গর্জন শোনা যেত, আমি কোন এক শক্ত বাহুর মায়াময় আশ্রয় এর প্রত্যাশায় ছিলাম। বিকেলের দামাল হু হু করা বাতাসে আমি কোন এক অনিন্দ্য কান্তি পুরুষ এর বুকে মুখ লুকাতে চাইতাম। ভাবতাম তাকে জ্যোৎস্না মাখা রাতে , হু হু করে জল পড়ত কখনো দুচোখ বেয়ে। যারা কাছে আসতে চাইতো তাদের প্রতি ভয়ানক নির্লিপ্ত ছিলাম। ভাবতাম আমি খুঁজে নিব তাকে । তাকে বলব মনের সব কথা। গহন মায়াতে তার দশ দিগন্ত ছাপিয়ে দেব। বলব আমি হাজার বছর তোমার পথ চেয়ে আছি। এবার নাও আমায়। আমার সব শূন্যতা কে পূরণ করে দাও।
বসে আছি তো আছিই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল এর আলো নেমেছে সাগর তীরে। কাঁচা সোনার মত রঙ তার। এই আলোতেই দেখা তার সাথে একদিন। বই মেলার মঞ্চে, কবিতা পাঠের আসরে। তার দু একটা লেখা আগেই পড়েছি । তাতে বিপ্লবের গন্ধ নেই, পরিবর্তনের কথা নেই, শুধু মায়া আছে, আদর আছে আর স্বপ্ন আছে। একটা দীর্ঘ কবিতা পড়ল সে। তার শেষ কটা লাইন ছিল ঘোর জাগানিয়া।
‘আমার যদি ইচ্ছে করে জ্যোৎস্না রাতে হাঁটবো দুজন
চাঁদের আলো মাখবো গায়ে বিজন ক্ষণে শুনব কুজন
তখন যদি ঘুম ভাঙ্গিয়ে তোমায় ডাকি বাইরে এসো
ঘুম ভাঙ্গা ওই দুচোখ নিয়ে এমনি মায়ায় তখন হেসো ।
এমনি মায়ায় তখন হেসো এমনি মায়ায় হাতটি ধরে,
অচিন নেশার সুখ ছোঁয়া সুখ,
হাঁটবো মোরা অনেক দূরে।
অনেক দূরে ।

আমূল কেপে উঠেছিলাম আমি। সময় থমকে গেল। বাতাস থমকে গেল। আমি পলকহীন হয়ে গেলাম। পুরো লোকালয়ে আমি একা হয়ে গেলাম। বুঝলাম এই সেই পূর্ণতা । যার জন্য এত দীর্ঘ কালের প্রতীক্ষা আমার। বুকের অন্ধকার ঘরটিতে আলো জ্বলে উঠল। জানলাম সেই আমার নিয়তি, যাকে খণ্ডানোর সাধ্য আমার নেই। তার সাথেই কাটবে রাত, জোনাকির আলো মাখা। গহিন রাতে ঘুম না আসলে তাকেই ডাকব। বলব ফিস ফিস করে কথা । সে বলবে চল জ্যোৎস্না দেখি। নক্ষত্রের আলো দেখি । কথা বলতে বলতে রাত হবে । সকাল হবে। জ্যোৎস্না তার মায়াবি পরশ দিবে। সকালের সূর্য তার কোমল আদর বুলিয়ে দিবে।
বেপরোয়া আমি, অনেক অনেক সাহস এ বুক ভরে নিলাম। তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট । বাতাস বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা তে মগ্ন। তার গায়ে সবুজ পাঞ্জাবি, এলোমেলো চুল আর ছিপছিপে লম্বা শরীর। ঘিরে আছে বন্ধুদের কিন্তু একটু দূরে যেন তার দৃষ্টি । দৃষ্টি তে বিষণ্ণতা আছে , ভাবনা আছে। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী আমি চিরকালের, কিন্তু অজানা ভয়ে কাঁপছি। বন্ধুরা কি কথা নিয়ে হাসছিল । আমার উপস্থিতি ঝড় তুলতে পারে যেকোনো যায়গায় কিন্তু আমি সেই সময় অসহায় বোধ করি। অনেকটা অপ্রকৃতস্থের মত এগিয়ে যাই, তারপর আর কিছু বলি না, ... নির্বাক মুহূর্ত যায় ।
সবাই জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে থাকে । সবুজ পাঞ্জাবি কে বলি, আপনি একটু অন্যদিকে আসবেন?
সে অবাক হয় আবার সামলে নেয়। বলে কিছু বলবেন?
বললাম চলুন না ওইদিকে যাই।
চারপাশে হাসির হুল্লোড় উঠে। আমি প্রাণপণে সব অগ্রাহ্য করি। সে অপ্রস্তুত হয়। কিন্তু তার জনতা কে বলে ওয়েট, আসছি আমি । সে হয়তো টের পায় আমার অসহায়তাটুকু , আমার কাঁপুনি বুঝি তাকেও নাড়িয়ে দেয় ।
আজকে একটু কম ভিড়। কাল মাত্র ২১ ফেব্রুয়ারি গেল ।
বলি আপনি অনেক ভাল লিখেন ।
ও মাথা নাড়ে । বলে এ আর এমন কি? এই আর কি। চেষ্টা করি। নিজের আনন্দে লিখি।
আমি আর কথা খুঁজে পাইনা । নির্বাক মুহূর্ত যায় । আমি দাঁড়িয়েই থাকি। অনেকক্ষণ না অল্পক্ষণ । সময় স্থির দাঁড়িয়ে রয় ।
সে বলে আপনি আর কিছু বলবেন?
-আপনি কোথায় থাকেন?
- কেন বলুন ত? এইতো রাজশাহী ।
আমি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরি উপরের ঠোঁট দিয়ে । কথা হারিয়ে যায় আবার। কোনমতে বলি আপনি কি পড়েন?
হু, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি তে ফিজিক্স । ফাইনাল ইয়ার। এবার সে ভাবে। আমার দিকে প্রথম বারের মত মনোযোগী হয়। বলে আচ্ছা কি ব্যাপার বলুন তো ।
আমি নিশ্চুপ থাকি। আমার কথা হারিয়ে যায় ।
বলে আচ্ছা আমি যাই । ওরা ওয়েট করছে।
আমি সাহসী হই, আমার সাহসী না হয়ে কোন উপায় থাকেনা।
বলি আমি আপনাকে অনেক খুঁজেছি। অনেক দিন ধরে ...।
তার ভ্রু কুঞ্চিত হয় । বলে কি বললেন ?
তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে থাকে আমার। ইন-হেলার নিতে ইচ্ছা করে। দাঁতে দাঁত কামড়াই আমি । হারলে চলবে না আমার।
আমার কষ্ট ওর চোখে ছায়া ফেলে। বলে কি বলেন আবোল তাবোল ? আপনি কি আমাকে চিনেন?
না
তাইলে?
মাথা নিচু করি আমি। শরীর কাঁপিয়ে কান্না আসে । চোখ ভিজে যায় । বিন্দু বিন্দু করে তা নেমে আসে।
সে বলে সিনেমার মত ডায়লগ দিচ্ছেন না ? জীবনটা তো সিনেমা না।
বাতাসে ফুলের গন্ধ। সামনে অবাক করা এক পুরুষ । তার গা থেকে আসছে মাতাল করা সৌরভ । আকাশে চাঁদ । পরিপূর্ণ এক নারী আমি। কিন্তু আমার অস্তিত্ব জুড়ে শূন্যতা। আমি আকুল হয়ে কাঁদি। আমার গা কাঁপে , বসন্তের এই মাতাল করা রাতে আমি তীব্র শীতে আচ্ছন্ন হয়ে যাই ।
সে অস্থির হয়না। শান্ত স্বরে বলে, কি বলতে চাইছেন হয়ত বুঝতে পারছি। কিন্তু এত সহজ নাতো ব্যাপারটা । আপনি আমার নামও তো জানেন না ।
আমার চোখ দিয়ে জল পড়ে । শ্রাবণ এর জল। এত কান্না জমা ছিল আমার এই বুকে। সে আচমকা ই আমার হাত ছোঁয় ।
বলে কেঁদো না ।
একটু থামে। গহন মায়ার গলায় বলে, চাইলে পাবে আমাকে । চাও ?
আমি আকুল হয়ে মাথা নাড়ি।
বলে না জেনে না বুঝে নিয়ে নিবা? বইতে পারবা সারাজীবন?
বলি পারবো ।
সত্যি ত?
হু
কিছুই জান না কিন্তু ...
জানব ।
আচ্ছা এই যে রইল ফোন নম্বর । কথা হবে। তুমি যদি চাও।
তারপর থেকে শুরু । এক উদ্দাম চাওয়া, যার কোন সীমা পরিসীমা নেই। দুজন দেশের দুই প্রান্তে। মেইল বা ফোন এ কথা । তার বেশি কিছু মিলে না। বলে ওয়েট কর রাত্রি । এইত আর কিছু দিন । এক্সাম টা শেষ হোক । আসছি তোমার কাছে।
আমি সমাজ ভুলে যাই, সংসার ভুলে যাই, রক্ত সম্পর্ক গুলো বিস্মৃত হই। আমার রাত দিন এক হয়ে যায় , আবারও বছর ঘুরে আসে । আমি বই মেলায় একলা হেঁটে বেরাই, বুক ভরে ফুলের গন্ধ নেই । কখনো ঝর ঝর করে বৃষ্টি নামে। তাতে ভিজি । দুপুরের খর রৌদ্রে পুড়ি । আমার দিন রাত এর হিশাব থাকে না। ক্লাস করতে ভুলে যাই, ২য় বর্ষে এ ৩য় শ্রেণী পাই। আমার কিছুতেই কিছু আসে যায়না। আমাকে বাঁচিয়ে রাখে ফোনের কিছু কথা , সপ্তাহে ২/৩ টা মেইল। কম্পিউটার এ বসে বসে আমার চোখ ক্লান্ত হয়ে যায় আমার চোখের কোনে কালি জমে...। ওকে মেসেজ এর পর মেসেজ দেই। ও কালেভদ্রে উত্তর দেয়। বলে ফাইনাল এক্সাম চলে আসছে । আমিতো তোমারি। নিজেকে গড়তে দাও।
আসে একদিন হটাত। হোস্টেল এর সামনে দাঁড়িয়ে কল দেয়। বলে রাত্রি নেমে আস। আমি এসেছি । আমার সারা পৃথিবী রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে যায়।
বলে চল অনেক দূরে যাই ।
পদ্মার পারে পা ডুবিয়ে বসি । বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে । রাতের আকাশে জ্যোৎস্না চমকায় । আমি ওর হাতে হাত রাখি। হৃদয় এ গহন ঘর। আমরা সব ভুলে যাই। আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব ওর মাঝে লীন হয়ে যায়।

২।
আমার ফাইনাল এক্সাম শেষ হয় । ওর তো কবেই শেষ । বলে ওয়েট কর রাত্রি । স্কলারশিপটা হোক । নয়তো আরও ভালো একটা জব হোক ।
আমার সমাজ নাই সংসার নাই। আমি রাগ করিনা। আমি বাবা মাকে অবুঝ, হৃদয়হীন বলি। বলি তোমাদের ইচ্ছার কাছে বলি হবোনা। আমার জীবন আমার। আমাকে বুঝতে দাও । বাবা হুংকার দেন, মা নীরবে চোখের জল ফেলেন। বলেন তোকে ভুগতে হবে। ওই ছেলে কে বিয়ে করবি? ইহকাল যাবে, পরকাল যাবে। হটাত ভাবি ভুল করছি নাতো ? পর মুহূর্তে ভাবি আমার জীবন, যে যা বলুক। নেমে আসি ঢাকার পথে। একা আমি আর একা হয়ে যাই। শূন্যতারা বাড়তে থাকে।
আমার সংসার সমাজ না থাক ওর আছে। তাই একদিন বলে রাত্রি আমি চলে যাচ্ছি।
কোথায় ?
বলে স্কলারশিপ টা হয়ে গেছে।
আমি আনন্দে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করতে চাই। বলি আমি এত খুশি, এত, আমার অসম্ভব ভাল লাগছে।
আবার থমকাই আমি। শাওন এর কি বলার কথা না আমারা যাচ্ছি, বাবা মাকে বল । আমই অপেক্ষা করি। কখন ও বলবে সেই কথা। আমি শুনতে চাই। আমার শরীরের প্রতিটি কণা তার আহবানের জন্য আকুল আগ্রহে অপেক্ষা করে।
বলে তুমি আমাকে ক্ষমা কর। আমি পারবোনা । মাকে কষ্ট দিতে। ধর্ম না মানি অধর্ম করতে পারবোনা।
আমি কাঁদি না । অমানুষকে বোঝানোর কিছু নাই। তাকে ক্ষমা করি।
রাতে হোস্টেল এর ছাদে বসে থাকি । নির্ঘুম , নিশ্চুপ দিন গড়িয়ে যায়, খবর পাই চলে গেছে দূরে কোথাও। আমি ক্ষমা করি সবাইকে, বলি সবাই ভাল থাকুক। আনন্দে থাকুক।
কিন্তু কেউ আমাকে ক্ষমা করেনা। সবাই ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকায়। আমি কুঁকড়ে যাই। পৃথিবীতে আমি বোঝা হয়ে যাই.. নিজের অস্তিত্ব লুকানোর প্রাণপণ চেষ্টায় ব্যাপৃত হই ।

৩।
আজ সমুদ্রে মহা বিপদ সঙ্কেত। লাল পতাকা ওড়ে পতপত করে। আমি রুম এর বারান্দা থেকে দেখি। কেউ যায়না আজ সমুদ্রে। সমুদ্র আজ আমার মতই অবহেলিত আর পরিতেক্ত। তার গর্জন এ গহিন শূন্যতা ধ্বনিত হয়ে ওঠে। আমি আমার বুকের শব্দ শুনতে পাই তাতে। আমার কান্নার শব্দ ছড়িয়ে যায় তার অনুরণনে।
ফিনকি ফোটা জ্যোৎস্নায় আমি পথে নেমে আসি। আমার শূন্যতার ভয় করেনা, মৃত্যুর কথা মনে জাগে না। শুধু সমুদ্রের শূন্যতাকে গাঢ় আলিঙ্গনের সাধ জাগে । একবার আলিঙ্গন। যাতে কষ্ট নেই । কিছু হারাবার ভয় নেই। আমার চোখের জলে সমুদ্র ভিজে যায়, সমুদ্রের জলে আমই ভিজে যাই। আমি পূর্ণতা চেয়েছিলাম। বদলে শূন্যতা উঠে এলো। এতো শূন্যতা... আমি ধারণ করতে পারিনা।
আমি সমুদ্রের দিকে হেঁটে যাই। দূরে কিছু তারা জ্বলে, নীরব সাক্ষী হয়ে থেকে যায়।

(শেষ কথা: কবিতাটির জন্য কৃতজ্ঞতা আমার অগ্রজ ডঃ মুশতাক আহমেদ রানা ভাইয়া কে যে ইচ্ছে করলে কবিতার ভুবনে কালজয়ী ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারতো ।
গল্পটি উৎসর্গ করছি প্রিয় বন্ধু English Department, DU র সাহানা কে যে আত্মাহুতি দিয়েছে ভালবাসার ভয়ংকর আবেগের কাছে হেরে গিয়ে। পৃথিবীতে সাহানার মত মেয়েরা অনেক বার অনেক ভাবে সমালোচিত হয় কিন্তু ওদের কষ্টের অনুধাবন কেউ করেনা। আমরা সবাই বেঁচে আছি শুধু ও চলে গেছে না ফেরার দেশে। সাহানা বৃষ্টি ভালবাসত খুব, সেই বৃষ্টির জলে মিশে গেছে ও। আমি একা বসে আছি। প্রার্থনা করছি বৃষ্টির । সবার অপূর্ণতাগুলো যে বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে যাবে।)

লিখেছেন-সাকিবা ফেরদৌসি
(মালায়েশিয়া থেকে)

No comments:

Post a Comment