Responsive Ads Here

19 January 2012

জঙ্গলের ভিতর ভুত!

তখন ক্লাস সিক্স ইয়া সেভেনে পড়ি।
=======
অনেক আগে ঘটে যাওয়া আমার জীবনে ঘটনা। এটা গল্প মনে করে উড়িয়ে দিবেন না।
==========================
==========
তখনকার কথা। আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে কলা বাগান নামে একটা জঙ্গল আছে। সেই জঙ্গলের নাম শুনলেই গাঁ শুঁম শুঁম করে উঠে। কি গভীর জঙ্গল রে বাপ। দিনের আলোতে কিছুই দেখা যায়… আর রাত্রে কি দেখবেন? যাক- তো সেই জঙ্গল থেকে আরো আধা কিলিমিটার দূরে একটা এলাকা আছে, আর সেই এলাকাতে যাত্রা গান হবে। কিন্তু যাত্রা গানে যেতে হলে ঐ জঙ্গলের ভিতর দিয়েই যেতে হয়। তো আমরা সাহস করে তিন দিন আগে থেকেই আমি ও আমার বন্ধু আলি প্লান করে রেখেছি যাত্রায় যাব। যেখানে যাত্রা গান হয় সেখানে নাকি অনেক দূর দূরান্তর থেকে যাত্রা পাগলরা ভিঁড় জমায়। আমি ও আমার বন্ধু আলি দু�জনে দুইটা টিকেট কিনে রেখে দিলাম আর যাত্রার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। দেখতে দেখতে যাত্রার দিন চলে আসলো। যাত্রায় যাব সন্ধ্যার পর, কিন্তু সন্ধ্যা হতেই দেখি আমার বড় ভাই আমার রুমে এসে আমাকে মানা করে গেলেন যে তুই আজকে সন্ধ্যার পর কোথায় যাইবে না। (মনে হয় উনি জেনে গেছেন আমরা যাত্রাতে যাব) সন্ধ্যার পর তোকে বাসাতে যেন দেখতে পাই। আমি আর কি করবো, ভাইর কথাতে খুবই ভয় পেয়ে কোথায় গেলাম না, কিন্তু এদিকে আমার বন্ধু আলি আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে। তখনকার দিনে তো মোবাইল ছিল না যে ফোন করে বলে দিব দুস্ত আমি আসতে পারতেছি না। কি আর করা বাসায় বসে বসে টিভি দেখতেছি। কিন্তু কোন কিছুতে মন বসতেছে না… যাক কোন ভাবে রাতের খাবার খেয়ে শুঁয়ে পরলাম। কখন ঘুম চলে আসছে একটুও টেঁর পেলাম না। হঠাৎ দরজায় জোঁরে জোঁরে ঢাক্কার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি পুরা চমকে উঠলাম এত সকালে কে হতে পারে? লাইট অন করে দেখি সকাল প্রায় ৬টা বেঁজে গেছে। দরজার এপাশ থেকে জিজ্ঞ্যেস করলাম কে ওখানে? ওপাশ থেকে উত্তর আসলো… দরজা জলদি খুল? আলির কণ্ঠ শুনে চমকে গিয়ে তাড়াতাড়ী দরজা খুলে দেখি আলি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু পুরা শরীর ঘামে বিজে গেছে। সে তাড়াতাড়ী ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে টেবুলে রাখা পানি দেখে তাড়াতাড়ী পানি খেয়ে বিছানাতে লুটে পরলো। ওর অবস্থা দেখে আমার ভয় লাগলো, তার পর পুরা তাস্কি খেয়ে গেলাম, যাক… এভাবে কিছুক্ষন যাবার পর দেখি আলি কিছুটা নর্মাল হয়ে উঠে। এবার ওকে জিজ্ঞ্যেস করলাম কিরে কি হইছে? এমন করছ কেন? আলি কোন ভাবে মাথা তুলে আমাকে বললো দুস্ত আজকে মরণ ঘাট থেকে উঠে এসেছি। আল্লাহয় বাঁচাইছে নইলে মইরা যাইতাম। আমি বললাম হইছে কি? একটু খুলে বল?
দুস্ত বলতে লাগলো… তর জন্য আমি অনেকক্ষন ধরে বসে উপেক্ষা করতে করতে যখন তুই আসলি না তখন আমি ভাবলাম তোর দেরী হতে পারে, তাই তোকে তোর বাড়ি থেকে পিক করে নিয়ে যাব। এটা ভেবে যখন বাড়ি থেকে তোদের বাড়িতে আসার জন্য রওয়ানা হলাম, কিছু দূর যাবার পর দেখি তুই এদিকে আসতেছ। আমি তোর কাছে আসতেই তুই আমাকে বললে জ্বলদি চল, দেরী হয়ে যাচ্ছে।। বলেই তুই আগে আগে আমি পিছে পিছে চলতে লাগলাম, কিন্তু আমি অনেক স্প্রিড দিয়ে হেঁটেও তোর পাশাপাশি হতে পারতেছি না, তবুও অনেক স্প্রিড দিয়েই হাঁটতে লাগলাম।। যেতে যেতে কলা বাগানের ভিতরে চলে গেলাম। বাগানের কিছু দূর ভিতরে যেতেই দেখি অনেক মানুষের শব্দ, ভাবলাম হয়তো যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, এই জন্য এখান থেকে আওয়াজ আসতেছে, কিন্তু না! গভীর অন্ধকারের মধ্যে যাত্রার আওয়াজ আসার কথা নয়। আর এদিকে তুই কিন্তু বিরামহীন ভাবে জঙ্গলের ভিতরে চলতেই থাকলে, আমি তোকে ডাঁকতেছি কিন্তু তুই কোন জবাব না দিয়েই হাঁটতেই থাকলে। এবার আমার আর সহ্য না হয়ে আমি তোকে একটা গালি দিয়ে বললাম, একটু থামতে! তুই থেমে গেলে কিন্তু যখন তুই আমার দিকে ফিরে থাকালে…ঠিক তখনই আমার জ্ঞান হাঁড়িয়ে যাবার অবস্থা। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম, তোর মুখে কি কালো একটা বিস্রী চেহারা, দাত দুটি দুই হাত লম্বা, চোখদুটি আগুনের মতন লাল হয়ে আছে, ঠিক তখনই তুই জোঁরে জোঁরে হাঁসতে লাগলে… আজব একটা বিকট বিশ্রী হাসি। আমার অবস্থা কে দেঁখে? আমি জ্ঞান হাঁড়িয়ে ফেলবো এই মাত্র… ভয়ে শরীর থ থ করে কাপতে লাগলো, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বুঝতে পারলাম, এটা ভূত। আমি তাইলে ভুতের পিছনে পিছনে এখানে আসেছি।। এবার দেখি ভূতে ওর চেহারা বধলী করেছে, অন্য একটা কালো জল্লাদের মতন হয়ে আছে, আর আমার দিকে চোখ দুটি রাঙ্গিয়ে আসতে লাগলো। আমি তখন সাহস করে দিলাম একটা দৌড়। দৌড় দিয়ে কি ভূতের সাথে পারা যায়? আমিও পারলাম না। কিছু দূর যেতেই দেখি কিছুটা আলো দেখা যাচ্ছে। আমি সেখানে গিয়েই দাঁড়ালাম। এবার দেখি? না! একটা ভুত নয়। কয়েকটা ভুত আমার চারই পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এবার কোন দিকে যাওয়ার যায়গা নাই। আমি কি করলাম… নিজেকে খুবই শক্ত করে সাহস সঙ্গয় করতে লাগলাম, এভাবে মিনিট পাঁচ যাবার পর দেখি আস্তে আস্তে ভুতের সংখ্যা বাঁড়তেছে, এবার মনে হল হাফিজ হুজুর এর কথা!! তো আমি কি করলাম? মাটিতে একটা বড় করে গোল বূত্ত রেখা আঁকে ভিতরে বসে পড়লাম, এবং হুজুর বলেছিলেন একটা দোয়া পড়তে, সেটাও পড়ে নিলাম এবং জোরে জোরে দুরুদ, কলিমা, কোর-আনের আয়াত, যত ঠুকু জানি তা পাঠ করতে লাগলাম। এভাবে কিছুক্ষন চলতে লাগলো, একটু পর দেখি অনেক গুলি ভুত বাঘের মতন চিৎকার দিয়ে আমাকে ধরার জন্য চেষ্টা করতে লাগলো, কিন্তু গোল রেখার ভিতর ঢুকতেই পারলো না।। বনের ভিতর যত জানোয়ার ছিল সব এখানে আসতে লাগলো, এমনকি একেটা এত ভয়ানক যে দেখলে যে কেউ এমনেই মুইটা দিবে, তো রেখার চার পাশে দেখি ভুত ভয়ানক ভয়ানক হাতি, সিংহ, বাঘ আরো কত কিছুর রুপ ধারন করে আমাকে ধরার জন্য চেষ্টা করতেছে কিন্তু ধরতেই পাচ্ছে না। তার মানে শত চেষ্টা করলেই আমাকে ধরতে পারবে না। এবার কিছুটা শান্তি পেলাম, কিন্তু যতটুকু জানি ততটুকু পরতে তাকলাম। এভাবে পুরা রাত কেটে গেল, মসজিদে ফজরের আজান হতে না হতেই সবাই কয়েকটা ক্ষেপা সিংহের মত চিৎকার করে চলে গেলে। তার পর দেখলাম সবাই চলে গেছে, এবার আমি আস্তে আস্তে জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসলাম। এত টুকু বলেই সে জোরে জোরে স্বাস নিতে লাগলো……

বাপরে!!! ওর কথা শুনে গায়ের পশম খাড়া হইয়া গেলো। ভয়ে শরীর কাপতেছে…যাক- এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত ঐ জঙ্গলে যাই নাই। ঐ জঙ্গলের কথা শুনলেই সেই দিনের ঘটনা মনে পড়ে যায়।।

No comments:

Post a Comment