Responsive Ads Here

19 January 2012

অন্য ভূবন

( একটি কিশোর ছেলের জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ারগল্প) - ভৌতিক...

সন্ধ্যা হয় হয় করছে । চারদিকে আশ্চর্যরকম সুনসান নীরবতা । পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে ব্যস্ত পায়ে হেঁটে চলেছে রিনাল । নতুন কেনা শখের ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলতে তুলতে কখন যে পাহাড়ের এত গভীরে এসে পড়েছে টেরও পায়নি সে । একটু ভয় ভয় লাগতে শুরু করল ওর - সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে পারবে তো বাড়ি পৌঁছাতে ? কোন মানুষজনকেও দেখছে না । রাস্তা হারিয়ে ফেলেনি তো আবার - অজানা শংকা দানা বাঁধতে শুরু করল ওর মনে । ধ্যাৎ কি দরকার ছিল পাহাড়ের এত গভীরে আসার , মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করল সে ।
ক্রমেই অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে । ডিসেম্বরের শীতের সন্ধ্যা কুয়াশায় তরতর করে ঢেকে যাচ্ছে চারদিক । শীতের হিমেল হাওয়া ঝাপটা মারছে তার শরীরে , পরনে একটি মাত্র টি-শার্ট । সে যখন বেড়িয়েছিল তখন এত শীত করেনি তাই সঙ্গে আর কিছু আনেনি । টকটক করে কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে চলেছে রিনাল । গাছগুলো আস্তে আস্তে আবছা হতে শুরু করেছে - কাছে কোথও কর্কশ কন্ঠে ডেকে উঠল নাম না জানা কোন পাখি , খানিকটা কেঁপে উঠল ও। নিজেকে সামলানোর প্রানপন চেষ্টা করছে । পেছনের ব্যাকপ‌্যাক থেকে টর্চ বের করল , ওর ব্যাকপ‌্যাক এ সবসময়ই প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস থাকে । অচেনা পাহাড়ি ফুলেরকটু ঘ্রান এসে লাগছে তার নাকে । এমনিতে যথেষ্ট সাহসী আর অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ছেলে রিনাল , কিন্তু এই মুহূর্তে তার কেমন জানি ভয়ভয় লাগতে শুরু করল । এরকম পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পড়েনি সে । নিজেকে কেমন যেন অসহায় লাগছে তার ।
ক্লাস নাইন এর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে মৌলভীবাজারের একটি বাগানেমামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল রিনাল । তার মামা ঐ বাগানে চাকরি করেন এবং বাগানের ভেতরই সুন্দর একটা বাংলোতে থাকেন । ঢাকা থেকে গত রাতে এসে আজকে বাগানে বের হয়েই এই বিপাকে পড়ল সে । তার মামী তাকে একা বেরুতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু সে বলেছিল যে তার কোন সমস্যাহবে না এবং কাছে একটু দেখেই ফিরে আসবে । কিন্তু ঘুরতে ঘুরতে কিভাবে যে এত গভীরে চলে এসেছে নিজেও বুঝতে পারছে না ।
এমনিতেই অন্ধকার তার উপর প্রচন্ড কুয়াশায় দুহাত দূরের জিনিসও ভালমত দেখা যাচ্ছে না । আবছা চাঁদের আলোয় সবকিছুকে কেমন যেন গোলাটে করে ফেলছে । ভীষন ক্লান্ত আর অবসন্ন দেখাচ্ছে রিনালকে । মাঝে মাঝে লতাপাতার বাড়ি লাগছে তার নাকেমুখে । সুনসান নীরবতা ভেঙ্গে অদ্ভূতভাবেকাছে কোথাও ডেকে উঠছে কোন নিশাচর প্রাণী ।
চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করল তার , স্পষ্ট বুঝে গেছেএই বনের গোলকধাঁধাঁয় হারিয়ে গেছে সে ।
কোথায় যাচ্ছ তুমি ?
চমকে পেছনে ফিরে তাকাল রিনাল ।তার ঠিক পিছনেই তারসমবয়সী একটা পাহাড়ী ছেলে দাঁড়িয়ে আছে । কেমন যেন অদ্ভূত নিস্প্রান তার চেহারা ।চোখ দুটি রক্তশূন্য । পরনে একটি ছেঁড়া ময়লা শার্ট , রংচটা
প‌্যান্ট । কেমন য়েন ভাবলেশহীন চেহারা । বহুদূরের কোন গ্রহ থেকে উঠে এসেছে বলে মনে হয় ।
তু....তু....তু....তুমি এখানে কিভাবে এলে , কে তুমি । তোতলাতে শুরু করল রিনাল ।
আমি এদিকেই থাকি , তোমাকে দেখে এগিয়ে আসলাম ।তুমি যাচ্ছ কোথায় ?নিস্প্রান হাসি হেসে জবাব দিল ছেলেটা।
ও-স্বস্তি ফিরে ফেল সে , আমি আসলে হারিয়ে গেছি ।তোমাকে পেয়ে কি যে ভাল লাগছে বলে বুঝাতে পারব না ।
বল কি হারিয়ে গেছ ? বিষ্ময় দেখা গেল তার চোখে ।
হ্যাঁ , আচ্ছা আমি রিনাল । তোমার নাম কি ?
আমি টিতান ।
ও অদ্ভূত নাম তোমার । তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে । আমি এখন কোথায় আছি বলতে পার ?
হ্যাঁ , তুমি এখন অনেক পুরনো একটা গোরস্থানের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছ ।
বল কি চমকে উঠে ঝটকা মেরে সরে দাঁড়াল রিনাল , ভয়ের শীতল শীহরন বয়ে গেল তার শরীরে ।
এখান থেকে লোকালয় কতদূর ?
৫-৬ কিলোমিটার হবে ।
তুমি কি আমাকে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারবে ।
এতরাতে পৌঁছানো তো সম্ভব না তুমি বরং আজ রাতে আমাদের জগতে থাক - সকাল হলে তোমাকে তোমাদের জগতে পৌঁছে দেব । কেমন যেন শীতল শোনাল টিতান এর কন্ঠযা শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দেয় ।
তোমাদের জগত মানে ?
আমরা যেখানে থাকি ।
ও আচ্ছা চল তাহলে যাওয়া যাক ।
সরু আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চলছে ওরা ।
কোন ক্লাসে পড় তুমি ? - বলল রিনাল
আমাদের পড়তে হয় না ।
ও - কি কর ?
কিছু করি না ।
ও- একঘন্টা ধরে তো হাঁটছিতোমাদের বাসা আর কতদূর ?
কাছেই ।
এখন কয়টা বাজে বলতে পার ?
আমাদের কাছে সময়ের কোন মূল্য নেই , আমরা সময়ের উর্ধ্বে বাস করি ।
মানে ?
মানে আমাদের সময় থেমে আছে ,আমাদের সবসময়ই এক ।
তোমার কথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না ?
আমরা চলে এসেছি ।
চলে এসেছি মানে , এখানে তোঝোপঝাড় ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছি না ।
আরও একটু এগোও ।
এগোতে গিয়েই কিসে যেন ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল রিনাল। কোনমতে সামলে উঠে কিসে ধাক্কা খেয়েছে দেখার জন্য টর্চ জালাল সে । টর্চ জালিয়েই চিৎকার করে উঠল সে, ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল।নড়বার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে ।
একটি লাশ পড়ে আছে সেখানে । দু-তিন দিনের পুরনো হবে ।কেমন যেন বিকৃত । চোখ দুটো নেই , নাকে মুখে রক্তের শুকনো দাগ লেগে আছে , হাঁ করে চেয়ে আছে ওর দিকে । পুরোটাই বিকট, বিভৎস । বুঝাই যাচ্ছে অনেকনির্যাতন করে মারা হয়েছে ।কিন্তু বিকৃত লাশটি চিনতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি রিনালের । এটি আর কারও নয় তার সাথে এতক্ষন ধরে আসা টিতান এর ।
হায় ঈশ্বর এটা আমি কি দেখলাম - বলে উঠল রিনাল ।
ঠিকই দেখেছ তিনদিন আগে খুবনির্মমভাবে আমাকে মারা হয়েছে ।চমকে উঠে পেছনে তাকাল রিনাল, পেছনে টিতানের উপস্থিতি ভূলেই গিয়েছিল সে ।এটা কিভাবে সম্ভব ।
তার মানে তুমি মৃত - বলল রিনাল । ভয়ানক ভাবে কাঁপছেসে ।
হ্যাঁ আমি মৃত ।
হঠাৎ হিতাহিত গিয়ান হারিয়ে ঝট করে উঠে দাঁড়াল রিনাল , টিতানকে ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে ভয়ানক অন্ধকারের দিকে ছুটে চলল সে । কোথায় যাবে নিজেও জানে না । সে শুধু ছুটছে সামনের দিকে ,শুধু ছুটছে ।
পেছনে টিতানের ও ছুটে আসারপদশব্দ শুনতে পেল সে ।
...

No comments:

Post a Comment