Responsive Ads Here

20 January 2012

হাসিখুশি মেয়ে

সকাল থেকেই তুলির মেজাজ অসম্ভব খারাপ। এমনিতে সে যথেষ্ট হাসিখুশি মেয়ে । কিন্তু আজ কোন কারন ছাড়া মেজাজ টা কোন সিগন্যাল না দিয়েই খারাপ হয়ে গেলো। মন আর মেজাজ পরস্পর "জিগরি" দোস্ত । এক জন খারাপ থাকলে অন্যজন ও ভালো থাকতে পারে না। আর মেজাজ সবচেয়ে বেশী খারাপ থাকে যখন মেজাজ খারাপ এর কারন টা অজানা থাকে। " বৃহ + পতি = বৃহস্পতি" সন্ধি বিচ্ছেদের ন্যায় ইহাও নিপাতনে সিদ্ধ ।
ফোনটা বাজছে। তুলি তার খুব পছন্দের একটা গান ringtone এ set করেছে। কিন্তু ফোন টা খুব কম সময় এ তুলি কে তার গান টি শোনাতে পারে। কারন তুলি কে ফোন করা লোককে Google এ search দিয়েও বের করা সম্ভব না । তুলির নিজের জন্য যত কষ্ট লাগে তার চেয়ে বেশী দুঃখ লাগে ঐ হতভাগা ফোনটার জন্য !!!!!
" হ্যালো । "
" ওরে বাপরে, এতো ToP FamOus লোকজনও আমাকে ফোন করে !!!! আমি তো সোনার কপাল নিয়ে জন্মাইছি!!!! :p :p "
"দেখ তুলি , বেশী ফাজলামি করবি না , কাজ আছে তাই ফোন করলাম ।"
"তাতো আমিও জানি যে তোর কাজ আছে , কাজ ছাড়া তুই আমাকে ফোন করছ কোনদিন ???"
"এইতো লাইন এ আসছ , তুই আমাকে যে chemistry নোট দিলি তাতে তো সব নাই , সিলেবাস এর অনেক কিছুই তো নাই "
"খারাপ ছাত্রী , বুঝিস না !!!!! আমি তোর মতো এতো ভাল ছাত্র হলে তো আর আমার এত্ত দুঃখ থাকত না ।"
" শালি , এই কথা আমাকে আগে বলবি তো !!! আমার পরীক্ষা , আমি এখন এতো নোট কই পাবো ??? ছেলেরা কেউ নোট করেনা ,তুই আগে বললে অন্য কোন মেয়ের কাছ থেকেই নিতাম। অন্তত পরীক্ষার আগে এই ভোগান্তিটুক হতো না'
"নোট দেয়ার সময়ই তো বলেছিলাম যে আমি সব নোট দিতে পারব না, হুম, অন্য কোন মেয়ের কাছ থেকে নিলে ভালো নোটেও পাবি, টাংকিও মারতে পারবি । 2 in 1 , টাংকি মারার সুযোগ টা miss গেলো। sorry রে"
" তুই এতো ফাজিল কেন রে????? বোধ শক্তি দিন দিন কমছে , "Horlics" খা বেশী বেশী, "Taller, StroNger, Sharper"
" তোর মতো আঁতেল মার্কা Friend যার আছে তার তো এই অবস্থাই হবে রে "
"আবার ফাজলামি!!! আমি আঁতেল !!!! আমি কথায় কথায় ফুটানি মারি ????"
"আচ্ছা, sorry, তোর কি কি লাগবে বল , পরশু পরীক্ষা না ??? আমি চেষ্টা করবো তোর সব নোট
manage করে দেয়ার । "
" চরম বিপদে ফেলে এখন এই ঢং টুক না করলেও চলত । হুহ, তোর আর লাগবে না। এখন আমি নিজেই manage করবো , তুই তোর ফাজলামি নিয়েই থাক ।"
খট করে ফোন টা কেটে দিল ধ্রুব। মনে মনে তুলি বলল " ইশ শালাবাবুর কি ভাব !!!! শালা , তুই যে এতো ভাব লও , তোরে পাত্তা দেয় কেডা !!!!!!!
কিন্তু ধ্রুব মনে হয় সত্যি সত্যি ঝামেলায় পড়ে গেছে। তুলিরই দোষ। সব সময় তো তুলি সম্পূর্ণ নোটই দিত। কিন্তু এইবার পরীক্ষার মধ্যে অনেক তাড়াহুড়া করে নোট করেছে বলেই হয়তো ঠিক মতো নোট করা হয়নি। যাক, আগামীকালের মধ্যেই তুলি বাকি সব নোট ধ্রুবরকাছে পাঠাবে , Insallah .যত কষ্টই হোক !!!! তুলি একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলল।
* * * *
"পৃতিবিতে দুই দরনের বাইরাশ আছে। DNA বাইরাস এবং RNA বাইরাস । RNA বাইরাশ প্রদানত উদ্ভিদের রোগ সিরিশ্তি করে , আর DNA বাইরাশ পেরানিদের , কিছু কিছু মারাত্মক রোগের জন্য বাইরাশ দায়ি। মরন গাতি রোগের 90% রোগ বাইরাশ দ্বারা সংগটিত হয় ।"
( অনুবাদঃ পৃথিবীতে দুই ধরনের ভাইরাস আছে। DNA ভাইরাস এবং RNA ভাইরাস । RNA ভাইরাস প্রধানত উদ্ভিদের রোগ সৃষ্টি করে , আর DNA ভাইরাস প্রাণীদের , কিছু কিছু মারাত্মক রোগের জন্য ভাইরাস দায়ি। মরনঘাতি রোগের 90% রোগ ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত হয় ।)
দেড় ঘণ্টার বেশী সময় ধরে তুলি Botany ক্লাসে বসে আছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়কালে তুলি একটা শব্দও তার মস্তিষ্কে প্রেরণ করতে পারে নি।সমশ্ত ক্লাসে তুলি একটি জিনিস মাত্র বুঝেছে।"স্যার এর বাংলা ডিকশনারিতে 'থ',"ভ" , "ধ", "ঘ" অক্ষর গুলি নাই। "
দাড়িয়ে তুলির খুব বলতে ইচ্ছা করছে " স্যার , আপনার উচ্চারণ এর অবস্থা খুবই খারাপ , আপনার বাংলাদেশ ভাষা ইন্সিটিউট এর সাথে অতি শীঘ্র যোগাযোগ করা উচিত । " তুলি পিছনে ফিরল । যা ভাবল ঠিক তাই !!!! ক্লাস এর আঁতেল মেয়েগুলি ওই বিশ্রী লেকচারই যথেষ্ট মনোযোগ এর সাথে হা করে শুনছে । এরা মনে হয় ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথে ব্যাঙ হয়ে যায় , ব্যাঙ যেমন ঘুমানোর সময় হা করে নিঃশ্বাস নেয় এদের অবস্থাও সেই রকম।এই ব্যাঙ রাজকুমারীদের দেখলে স্বয়ং Darwin ও বলতেন, "মানুষের পূর্বপুরুষ বানর না, ব্যাঙ !!!!! "
তুলি তার chemistry বই বের করল। ধ্রুবর জন্য নোট করতে হবে। নোট বেশী বাকি নাই। মোটামুটি দুই- আড়াই ঘণ্টার মধ্যে শেষ হবে।স্যার এর ক্লাসও শেষ পর্যায়।
স্যার এর চোখ খুব সম্ভব বাজপাখির মত তীক্ষ্ণ ছিল।দূর থেকে লক্ষ্য করল যে তুলি তার লেকচার শুনছে না , বরং খুব মনোযোগ দিয়ে অন্য কিছু একটা লিখছে । দুর্ভাগ্যক্রমে এই স্যারই কলেজের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর। এবং তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধ হল ক্লাসে "অমনোযোগী" থাকা ।
স্যার খুব শান্ত ভাবেই ক্লাস শেষ করলেন। বাঘ তার শিকারের উপর ঝাঁপ দেয়ার আগে মাটিতে লেজ দিয়ে খুব আস্তে একটা টোকা দেয়। স্যার সেই বাঘ এর TheoRy তুলির উপর প্রয়োগ করলেন।
তুলি কে দাঁড় করিয়ে ২-৪ টা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। তুলি অমনোযোগী ছিল। তাই সব উত্তর পারল না। স্যার তুলি কে ক্লাস থেকে বের করে দিলেন। তুলি খুশি মনেই ক্লাস থেকে চলে গেল ক্যান্টিনে । সেখানে বসে শান্তি মতো নোট করবে।
ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত, কিন্তু না, শেষ হল না। বিকেলে ক্লাস শেষ করে বাসায় যাওয়ার পর তুলির মাথায় নব্বই কিলোমিটার পাহাড় ভেঙে পড়লো । প্রিন্সিপাল স্যার বাসায় তুলির বাবা মা কে ফোন করেছিলেন। তুলি কে সাময়িক ভাবে টি .সি দেয়া হয়েছে। তার অপরাধ ক্লাসে বসে প্রেমপত্র লেখাতুলির বাবা অসম্ভব রাগী মানুষ । এধরনের অভিযোগ তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। । , মা কে ক্ষীণ স্বরে কিছু কঠিন কথা শুনিয়েছেন যার সারমর্ম হল " তুলি গোল্লায় গেছে, , এর জন্য অতি শীঘ্র কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, মেয়েকে বাসার বাইরে শুধু কলেজে যেতে দেয়া হবে, অন্য কোথাও না, কন্যার এখন পাঙ্খা গজিয়েছে,তার আর পড়াশুনা হবে না ।"
* * * * * * * * * * * * *
নোট করা শেষ ।এই নোট এর জন্য তুলির অনেক ঝামেলা সহ্য করতে হয়েছে , কিন্তু তুলির চোখে- মুখে তার লেশ মাত্রটি নেই।
বরং ধ্রুবর জন্য নোট সম্পূর্ণ করতে পেরে প্রতিদিন এর তুলনায় অনেক বেশী উৎফুল্ল । ধ্রুব তার একমাত্র বন্ধু। ছোটবেলা থেকেই ওদের মাঝে অনেক ভালো বন্ধুত্ব। একই বিল্ডিং এ পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকত ওরা। একই স্কুলে পড়ত । তাই চার বছর আগে ধ্রুবরা ফ্ল্যাট ছেড়ে গেলেও ওদের বন্ধুত্বে ভাটি পড়েনি । এখন দুজন ই ভিন্ন কলেজে পড়ছে । উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব অনেক পরিবারই সহজ ভাবে নেয় না। ধ্রুব এবং তুলি দুজনের পরিবারই যথেষ্ট রক্ষণশীল হওয়ার পরও তাদের বন্ধুত্ব নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন পরিবারের কেউ করেনি । বরং প্রতিদিন দুজনের কলেজ শেষ করে তারা একসাথে বাড়ি ফেরে।তুলি একা একা বাড়ি ফিরতে পারে না। তাই তুলির মা নিজেই ধ্রুব কে বলেছেন বাড়ি ফেরার সময় তুলি কে বাসায় নামিয়ে দিতে।কষ্ট হলেও ধ্রুব কাজ টি আনন্দের সাথেই করে। কারন তুলি ছাড়া অন্য কোন ভালো বন্ধু তারও নেই ।
" নে, তোর নোট।"
" তুই আবার কষ্ট করে বাকি নোট গুলা করতে গেলি ক্যান ?? আমার তো না হলেও চলতো । "
"না হলেও চলত মানে ???? কালকে ফোন করে যে ভাবটা দেখাইলি!!!! মনে তো হল যে নোট গুলি দেই নাই সব ই পরীক্ষায় আসছে !!! ফালতু পোলা কোথার জানি!!!! "
" তুই নোট না দিলে কি আমার পড়া বাকি থাকত নাকি !!! আমি সরণীর কাছ থেকে নোট নিয়েছি তো।জানিস , ওর হাতের লেখা না খুব সুন্দর , একদম ঝকঝকে !!! দেখলে মনে হয় টাইপ করা নোট। কারো হাতের লেখা এতো সুন্দর হয় আমি জানতাম না তো "
" ব্যাঙ রাজকুমারী সরণী ??? তুই ওর সাথে আমার তুলনা দিস ??? হুম , জানি , আমার হাতের লেখা অত ভালো না। আমার নোটও ওর মতো অত ভালো না!!! যাহ ব্যাটা , ভালো মানুষের কাছ থেকেই নোট নিলি !!!!"
" আরে , তুই এতো চেতস ক্যান !!! একবার না হয় নোট নিলাম , তাতে কি এমন হয়ে গেছে?? আর তোর তো কোন দায়িত্ব বোধ নাই, বললাম আমার পরীক্ষা তার পরও তো তুই ফোনে ফাজলামো করছিলি !!! "
"হুম, ঠিকই বলেছিস, আমার কোন দায়িত্ব বোধ নাই। ভুলটা আমারই "
" হুম, এর পরে আর তোর কষ্ট করে নোট করতে হবে না। আমি সব নোট সরণীর কাছ থেকেই নিবো , ওকে বলেছি"
" এতো কথা বললি কখন??? "
" আমার ছুটির পর তোর কলেজের সামনে তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তোর তো বের হওয়ার নাম নাই, তখন ওর সাথে দেখা। আমার কপাল ভালো যে ওর খাতা টা ওর সাথেই ছিল। আরও একটু সময় কথাও হয়েছে, মেয়েটা ভালোই। "
" ভালোই তো, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী । এখানে যখন তখন চাইলেই নোট পাওয়া যায়। ওকে বলিস, নোটের একটা দোকান খুলতে"
" আরে আজব , তুই এতো রাগ করছিস কেন?? "
" রাগ করবো না??? কলেজের শুরু থেকে তোকে সব নোট আমি দিলাম, তখন ওই সরণী কোথায় ছিল?? ও তো তোর নাম ও শুনতে পারত না, শুনলেই বলত এক নম্বর এর ফালতু ছেলে !!! আর এখন শুধু একটা নোট পেয়েই তুই ওর সাথে আমকে তুলনা দেয়া শুরু করলি !! ভালো । ভালো, আরও কত কিছু দেখা যে বাকি আছে আল্লাহই জানে !!!"
" তুই এতো হিংসুক !!! আমি অন্তত পক্ষে তোর কাছ থেকে এটা আশা করি নাই"
" তুই তো জানো না তোর নোট complete করতে গিয়ে আমার কত ঝামেলা হয়েছে। যদি জানতি, তাহলে আর এভাবে বলতে পারতি না"
" হুম, আমার উপর দয়া করছ বহুত, আর লাগবে না। এইবার মাফ চাইলাম , তোর কাছ থেকে আমি আর জীবনেও কোন নোট নিব না , যাহ্‌ "
তুলির মুখ লাল। দেখলে মনে হয় এখনি ভেঙে পড়বে । অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল ,
" আচ্ছা, ভুল হয়ে গেছে। আমি আর নোট করবো না, আমার নোটে তোর কিছু হবেও না।তুই যার কাছ থেকে খুশি নোট নিস। কিন্তু এইবার নিয়ে এসেছি তো , এইটা অন্তত রাখ। এর পর আর দিবো না , promise.."
" একবার বললাম শুনিস নাই ??? তোর নোট আমার লাগবে না"
" আচ্ছা , বাসায় যাই চল, হাঁটা শুরু কর"
"তুই আজকে একা একা বাসায় যা, তোর সাথে যাওয়ার ইচ্ছা নাই"
" আমি একা যাবো? একা যেতে তো একটু কষ্ট হবে রে"
" হুম, একা একা যাবি!! আমার একটু কাজ আছে, তুই যা, বাসায় ঠিক মতো পৌঁছেছিস কিনা জানাবি কিন্তু, Bye"
তুলি একা একা হাঁটা শুরু করল , ধ্রুব ও অন্য পথে চলে গেল । মনে মনে ভাবল , তুলি একা বেশী দূর যেতে পারবে না। একটু পরেই ফোন করে বলবে " ধ্রুব , রাস্তা পার হতে পারছি না , একটু আয় ।" রাস্তা পার হতেই তুলির একটু সমস্যা । কিন্তু তার পর বাসে উঠে গেলে আর সমস্যা নাই। কিন্তু তুলি মনে হয় আজকে একটু কষ্টই পেয়েছে , ধ্রুব জানে, এই মেয়েটা তাকে অসম্ভব ভালবাসে।এই মেয়েকে শত কষ্ট দিলেও তার কিছুই প্রকাশ করবে না, মনে মনে দুঃখ পাবে। বাসায় গিয়ে কেঁদেকেটে অস্থির হবে, পরের দিন জিজ্ঞেস করলে বলবে, "কই, কিছু হয় নাই তো " তবুও মেয়েটার সাথে অকারনে ঝগড়া করাটা ধ্রুবর অন্যতম প্রিয় অভ্যাস !! মেয়েটা কেমন একটুতেই রাগে ফোঁস ফোঁস করে!!!!!!! তখন খুব মজা লাগে ধ্রুবর !!!
ধ্রুবর ফোনটা বেজে উঠলো। ....Calling.........TultuS.
তুলির ফোন !!! হুম, মহারানী নিশ্চয়ই রাস্তা পার হতে গিয়ে আটকে পড়েছে। ধ্রুব ফোনটা ধরবে না ঠিক করলো। তুলির এখন যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তাকে একা একা পথ চলা শিখনো দরকার। ধ্রুব ফোনটা ধরল না, কেটে দিল ।
ফোনটা আবারো বাজছে, এখন ধ্রুব একটা কঠিন ঝাড়ি দেবার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে নিতে পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে, "কিরে, রাস্তাও ঠিক মতো পার হতে পারিস না, নাকি !!!" কিন্তু তুলি ফোন করেনি তো !!! রণিত ফোন করেছে ,
"হ্যালো দোস্ত , তুই কই?? "
" শাহবাগ এর মোড়ে , ক্যান ???"
" ও তাইলে তো কাছাকাছিই আছ , আমাদের সাথে যে তুলি পড়ত না, ঐ যে ছোট মতো, বোকাসোকা টাইপের , ও একটু আগে অ্যাকসিডেন্ট করছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল এর সামনে, অবস্থা বেশী ভালো না, আমার কাছে ওর ফ্যামিলির কারো নাম্বার নাই, তুই পারলে একটু সবাই কে জানা। আমরা ওকে বারডেমে নিতেছি"।
"তু .................. লি ........?????? তুলির অ্যাকসিডেন্ট ?? কেন ???? কই তুলি??আমার তুলি কই ????? তুই মিথ্যা বলিস??? আমি তো জানি আমার তুলি ভালো আছে। তুলি ভালো আছে, বুঝছিস??? তুলির কিছু হয় নাই, আমার তুলি ভালো আছে ।"
" দোস্ত , তাড়াতাড়ি আয়। আমি কিছু বলতে পারি না, অবস্থা খুব খারাপ "
ধ্রুব হতভম্ব হয়ে মোবাইল টার দিকে তাকিয়ে আছে। সে না হয় তুলি কে একটু কষ্ট দিয়েছে, কিন্তু তুলি এটা কিভাবে করল???? তুলি তাকে এই শাস্তি কেন দিল ???? এত বড় শাস্তি কি ধ্রুবর প্রাপ্য ছিল ??? এই প্রশ্নগুলির উত্তর এখন কে দিবে ??? কে দিবে???
রাত দশটা সাতচল্লিশ মিনিটে তুলি মারা যায় ।
মারা যাওয়ার কিছু আগে সে অস্পষ্ট ভাষায় নার্স কে কিছু বলতে চেয়ে ছিল। নার্স তার কথা কিছুই বুঝতে পারে না। তুলিরও কিছু বলা হয় না ................
যা বলার ছিল তা সে অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার আগে কিছুটা হলেও বলে গিয়েছিল ।
বহুদিন পরে ধ্রুব যখন তুলিদের বাসায় যায় । তুলির মা ধ্রুব কে কিছু বলেন নি, শুধু তুলির মোবাইল ফোনটা ধ্রুবর হাতে তুলে দেন।
মোবাইল স্ক্রিনে কিছু একটা লিখা ছিল......
" SorrY DruBO, ami toke kosto dite chai ni,I promise , er por theke ami tor sob note thik moto dibo, ektu o kisu baad dibo na,haater llekha o khub shundor hbe ne, but plz amr upr raag koris na, ami toke onek valo.................................."
ম্যাসেজটা অসম্পূর্ণ । যে এটা লিখেছিল তার কাছে সম্পূর্ণ করার মতো সময় ছিল না,অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার আগে তুলি ফোন করেছিল, ধ্রুব লাইন টা কেটে দেয় । এজন্যই তুলি ম্যাসেজ টা টাইপ করেছিল। তখনই হয়ত .........
ধ্রুব বেশী ক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না, ঝাপসা চোখে মোবাইলটা নেড়ে চেড়ে দেখল ।
******** *********
রাইদ এর মনটা আজ ভীষণ খারাপ । তার রেজাল্ট বেরিয়েছে । অন্য সব কিছু তে ভাল ভাল মার্কস পেলেও chemistry তে আশ্চর্য জনক ভাবে খুব কম পেয়েছে। এটা একদম কম ও না, তার ক্লাসে ফার্স্ট হওয়াতেও এটা নিয়ে কোন সমস্যা হয় নি , তবুও বাবা কেন জানি রেজাল্টকার্ড টা নিয়ে গম্ভীর মুখে বসে আছে। ফার্স্ট হয়েছে তবুও রাইদকে কাছে ডেকে একটু আদর ও করেন নি, বরং chemistry তে একটু কম পাওয়ার জন্য বকাবকি করেছেন অনেক। সকাল থেকে বাবা অফিসেও যান নি। কেমন যেন আনমনে হয়ে বারান্দায় বসে আছেন।
রাইদ তার বাবাকে খুব ভালবাসে । বাবা শুধু তার জন্য মন খারাপ করে থাকবে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। বাবার মন ভালো করতেই হবে ।
" বাবা"
" বল "
" তোমার মন খারাপ ??"
বাবা কিছু বললেন না।
" বাবা, আমি promise করছি আমি আর কোন দিন chemistry তে কম পাবো না, ঠিক মতো পড়াশুনা করবো, নিজেই সব নোট করে পড়ব , আমার একটা বান্ধবী আছে, ও অনেক ভালো নোট করে, এর পর থেকে ওর সাথেই chemistry practice করবো, তুমি দেখ বাবা, আমি এরপরের বার ক্লাসে সবচেয়ে বেশী পাবো, কিন্তু তুমি মন খারাপ কর না , প্লিজ ।"
বাবা রাইদ এর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল, তারপর রাইদ কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। রাইদ মনে মনে ভাবল " আমার বাবা টা এত পাগল কেন ???"

----নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

No comments:

Post a Comment